কারসাজির ঘটনায় শেয়ার জব্দ

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ১৩ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির প্রমাণ পেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক দরপতনের ঘটনা তদন্তে বিএসইসির গঠিত কমিটি এসব শেয়ার নিয়ে কারসাজির প্রমাণ পেয়েছে। এ জন্য দুই কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারের শেয়ার জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি ছয় বিনিয়োগকারী ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলন ও স্থানান্তর এবং শেয়ার স্থানান্তরের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এর বাইরে কারসাজির সঙ্গে জড়িত আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এনফোর্সমেন্ট বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গতকাল বৃহস্পতিবারের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভা শেষে বিএসইসির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

মুন্নু সিরামিকস ও মুন্নু স্টাফলারের কারসাজি

কারসাজির জন্য তালিকাভুক্ত দুই কোম্পানির যে দুজন শেয়ারধারীর শেয়ার জব্দ করা হয়েছে তাদের মধ্যে একজন ব্যক্তি পরিচালক, অপরটি প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ারধারী। এঁরা হলেন মুন্নু সিরামিকস ও মুন্নু জুট স্টাফলারের করপোরেট পরিচালক ও শেয়ারধারী প্রতিষ্ঠান মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন এবং আলহাজ টেক্সটাইলের পরিচালক শামসুল হুদা।

>

বিএসইসির গঠিত তদন্ত কমিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির প্রমাণ পেয়েছে।

বিএসইসি জানিয়েছে, কারসাজির দায়ে মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করার পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির হাতে থাকা মুন্নু সিরামিকস ও মুন্নু জুট স্টাফলারের শেয়ার জব্দ থাকবে। ফলে প্রতিষ্ঠানটি ওসব শেয়ার কেনাবেচা ও স্থানান্তর করতে পারবে না। বিএসইসি আরও জানিয়েছে, মুন্নু সিরামিকসের শেয়ার লেনদেন ও আর্থিক প্রতিবেদনেও অনিয়ম পাওয়া গেছে। এসব অনিয়ম ও কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিএসইসির এনফোর্সমেন্ট বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে মুন্নু সিরামিকসের শেয়ারকে আগামী রোববার থেকে সাধারণ বাজারের পরিবর্তে স্পট মার্কেটে স্থানান্তর করা হয়েছে।

আলহাজ টেক্সটাইল নিয়ে কারসাজি

এ ছাড়া আলহাজ টেক্সটাইলের পরিচালক শামসুল হুদার আইন লঙ্ঘন করে শেয়ার বিক্রি করায় তাঁর হাতে থাকা সব ধরনের সিকিউরিটিজ জব্দ করা হয়েছে। অর্থাৎ আলহাজ টেক্সটাইলের এ পরিচালকের হাতে যত ধরনের সিকিউরিটিজ রয়েছে, তার কোনোটাই তিনি লেনদেন করতে পারবেন না। বিএসইসি বলছে, শামসুল হুদা ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আলহাজ টেক্সটাইলের প্রায় ৫ লাখ শেয়ার বিক্রি করেছেন। তার বিপরীতে কিনেছেন ৯ হাজার ১০০ শেয়ার। ডিএসইর সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউস বা ট্রেক হোল্ডার এএনএফ ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে তিনি এ শেয়ার কেনাবেচা করেন। শামসুল হুদা নিজেই এ ব্রোকারেজ হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এ উদ্যোক্তার বিপুল শেয়ার বিক্রির ফলে আলহাজ টেক্সটাইলের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ারধারণের পরিমাণ ৩০ শতাংশের নিচে নেমে আসে। যদিও বিএসইসির আইন অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সব সময় ওই কোম্পানির ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু আলহাজ টেক্সটাইলের বেলায় ন্যূনতম শেয়ারধারণ–সংক্রান্ত আইনের ব্যত্যয় রয়েছে।

বিএসইসি আরও বলেছে, গত ১৫ জানুয়ারি আলহাজ টেক্সটাইলের পক্ষ থেকে একটি মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করা হয়। যেখানে বলা হয়েছে, কোম্পানিটি অগ্রণী ব্যাংক থেকে প্রায় ৫৬ কোটি টাকা পেয়েছে। এ তথ্য প্রকাশের পর বাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দামে উল্লম্ফন ঘটে। পরে অগ্রণী ব্যাংক থেকে টাকা পাওয়ার মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়নি। ফলে কোম্পানিটি নিজে, শামসুল হুদা ও তাঁর মালিকানাধীন এএনএফ ম্যানেজমেন্ট সিকিউরিটিজ আইনের নানা বিধান লঙ্ঘন করেছে। এ কারণে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে এনফোর্সমেন্ট বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয় বিএসইসির গতকালের সভা থেকে। শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত শামসুল হুদার সব সিকিউরিটিজ জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি আলহাজ টেক্সটাইলকেও আগামী রোববার থেকে লেনদেনের জন্য সাধারণ বাজারের পরিবর্তে স্পট মার্কেটে স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ছয় বিনিয়োগকারীর কারসাজি

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড পাওয়ার, ভিএফএস থ্রেড, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, এস এস স্টিল, ইনটেক, সায়হাম টেক্সটাইলস, সায়হাম কটন, রূপালী লাইফ ইনস্যুরেন্স, মুন্নু সিরামিকস, মুন্নু জুট স্টাফলার, আইসিবি ও ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের শেয়ার নিয়ে কারসাজির প্রমাণ পেয়েছে বিএসইসির তদন্ত দল। এসব কোম্পানির কারসাজির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বিশ্বজিৎ দাস ও তাঁর স্ত্রী, কাজী শাহাদাত হোসাইন ও বিঅ্যান্ডবিএস ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, সাইফ উল্লাহ, হোসাম মো. সিরাজ, এ এস এস আহসান হাবিব চৌধুরী, লুৎফুল গনি টিটো ও তাঁর স্ত্রী এবং তাঁর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সাতরং অ্যাগ্রো ফিশারিজ। এঁদের সবাই বাজারের ব্যক্তিপর্যায়ের বিনিয়োগকারী। কখনো কখনো কারসাজির জন্য তাঁরা তাঁদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামেও বিও হিসাব খুলে লেনদেনে অংশ নেয়। এ কারণে এসব ব্যক্তি ও তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিও হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলন ও স্থানান্তর এবং শেয়ার স্থানান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বিও হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন ও স্থানান্তর এবং শেয়ার স্থানান্তর করা না গেলেও এসব হিসাবের মাধ্যমে বাজারে নিয়মিত লেনদেন করা যাবে।