বিটকয়েনের পেছনে সবাই ছুটছে কেন

বিটকয়েনের প্রতিষ্ঠাতা সাতোশি নাকামোতো, যদিও এটি তাঁর ছদ্মনাম
বিটকয়েনের প্রতিষ্ঠাতা সাতোশি নাকামোতো, যদিও এটি তাঁর ছদ্মনাম

এখন পর্যন্ত চালু থাকা ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিটকয়েন। তবে অনির্ভরযোগ্য ও অস্থিতিশীল ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা হিসেবে তকমা পাওয়া বিটকয়েনের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কথাও উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। এর পক্ষে ও বিপক্ষে কথা বলার অনেক মানুষ আছে। বিটকয়েনকে বর্তমান সময়ের অন্যতম আবিষ্কার হিসেবে সবাই স্বীকার করেন। এর পেছনে যে ব্লক চেইন প্রযুক্তির কথা বলা হচ্ছে, তা–ও অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য বলেই বিশেষজ্ঞরা মত দেন। 

বেশ কিছুদিন ধরেই বিটকয়েনের অবিশ্বাস্য মূল্য বিস্ফোরণে সবার টনক নড়েছে। কেউ আর একে হেলাফেলা করতে পারছেন না। এ ধাক্কা লেগেছে উন্নত ও উন্নয়নশীল সব দেশের অর্থনীতিতেই। সবাই বিটকয়েনের মতো মুদ্রার জন্য নিয়মতান্ত্রিক উপায় খুঁজছে। দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ইন্টারক্লাউড লিমিটেডের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা (সিটিও) তানভীর এহসানুর রহমান বলছিলেন, ‘আমরা মানি বা না মানি, ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা দুনিয়ার অর্থনৈতিক চেহারা বদলে দেবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ইতিমধ্যে অনেক দেশেই ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা নিয়ন্ত্রিত আকারে অনুমোদন পেতে শুরু করেছে। আমাদের দেশেও বিশেষ নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা চালু করা যেতে পারে।’

 বর্তমান বিশ্বে ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বাজার দাঁড়িয়েছে এ ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ভার্চ্যুয়াল মুদ্রার। বাজারে কয়েক হাজার রকম ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা চালু রয়েছে। এর মধ্যে ১০ থেকে ১২ ধরনের মুদ্রা বেশি পরিচিত। তবে বাজার দখলের হিসাবে ৭০ শতাংশ বাজার দখল করে রেখেছে বিটকয়েন। চলতি সপ্তাহে প্রতিটি বিটকয়েনের মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলারে।

২০০৮ সালে বিটকয়েন উদ্ভাবন করেন কম্পিউটারবিজ্ঞানী সাতোশি নাকামোতো। এটি তাঁর ছদ্মনাম৷ বিটকয়েন ব্যবহার করে অনলাইনে খুব সহজে কেনাবেচা করা যায় বলে এ মুদ্রাব্যবস্থাকে পিয়ার-টু-পিয়ার লেনদেন বা স্বাধীন গ্রাহক থেকে গ্রাহকের মধ্যে অনলাইন লেনদেন নামে অবহিত করা হয়। বিটকয়েনের লেনদেনটি বিটকয়েন মাইনার নামে একটি সার্ভার কর্তৃক সুরক্ষিত থাকে। পিয়ার-টু-পিয়ার যোগাযোগব্যবস্থায় যুক্ত থাকা একাধিক কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের মধ্যে বিটকয়েন লেনদেন হলে এর কেন্দ্রীয় সার্ভার ব্যবহারকারীর লেজার হালনাগাদ করে দেয়। অনলাইনে কেনাকাটা করা যায় ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা বিটকয়েনে। তবে অন্যান্য মুদ্রাব্যবস্থায় যেমন সে দেশের সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক জড়িত থাকে, বিটকয়েনের ক্ষেত্রে তা নয়।

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে অনলাইনে ভার্চ্যুয়াল মুদ্রায় লেনদেন না করার অনুরোধ জানিয়ে সতর্কতা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাষ্য, বিটকয়েনের মতো ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা পৃথিবীর কোনো দেশের বৈধ কর্তৃপক্ষ দ্বারা স্বীকৃত নয়। সুতরাং ভার্চ্যুয়াল মুদ্রায় লেনদেন করা কোনোভাবেই ঠিক নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারি করা ওই নির্দেশনায় বলা হয়, ‘ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা কোনো দেশের বৈধ কর্তৃপক্ষ ইস্যু করে না বিধায় এর বিপরীতে আর্থিক দাবির কোনো স্বীকৃতি নেই।’ এ ধরনের লেনদেনের মাধ্যমে আর্থিক ও আইনগত ঝুঁকি রয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক উল্লেখ করেছে। 

দেশে ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ব্লকচেইন প্রযুক্তির দিকে সরকারের আগ্রহ রয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে সরকার এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দও রেখেছে। আগামী অর্থবছরে ব্লকচেইন প্রযুক্তি পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার শুরুর কথাও বলা হয়েছে। বিটকয়েনের পেছনের মূল প্রযুক্তি হলো ব্লকচেইন। তবে অন্যান্য মুদ্রাব্যবস্থায় যেমন সে দেশের সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক জড়িত থাকে, বিটকয়েনের ক্ষেত্রে তা নয়। বিটকয়েন লেনদেনে কোনো ব্যাংকিং ব্যবস্থা নেই। ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অনলাইনে দুজন ব্যবহারকারীর মধ্যে ক্রিপ্টোগ্রাফি পদ্ধতিতে সরাসরি আদান-প্রদান হয়। বিটকয়েনের সরবরাহ সীমিত বলে একে স্বর্ণের সঙ্গে তুলনা করা হয়। খনি থেকে উত্তোলনের একপর্যায়ে গিয়ে যেমন স্বর্ণের সরবরাহ শেষ হয়ে যাবে। এরপর উত্তোলিত স্বর্ণের বিকিকিনি হতে পারে। তবে নতুন করে উত্তোলনের সুযোগ থাকবে না। বিটকয়েনের ধারণাও তা-ই। অ্যালগরিদমের সমাধানের মাধ্যমে বিটকয়েন ‘উত্তোলন’ করতে হয়, যা বিটকয়েন মাইনিং হিসেবে পরিচিত। 

ফেনক্স ভেঞ্চার ক্যাপিটালের জেনারেল পার্টনার ও ইজেনারেশন গ্রুপের চেয়ারম্যান শামীম আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্রিপ্টোকারেন্সির সঙ্গে মাইনিং বিষয়টি যুক্ত। এতে সার্ভার ও ইলেকট্রিসিটি লাগে। সার্ভার সেটআপ করে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং করা হয়। কারেন্সি নির্দিষ্ট থাকে। এখান থেকেই পিয়ার–টু–পিয়ার লেনেদন করা যায়। এ খাতটিতে বাংলাদেশের স্টার্টআপগুলোর জন্য বিনিয়োগ পাওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য যথাযথ পরিকল্পনা করে এগোতে হবে।’