পেনশনার সঞ্চয়পত্রে বেশি মুনাফা

পেনশনার সঞ্চয়পত্রটি শুধু অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের জন্যই। দেশে যত সঞ্চয়পত্র চালু আছে, তার মধ্যে এর গ্রাহকদেরই সবচেয়ে বেশি মুনাফা বা সুদ দেয় সরকার। মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এ সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় কোনো উৎসে কর নেবে না সরকার। তবে পাঁচ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের মুনাফায় উৎসে কর ১০ শতাংশ।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ২০০৪ সালে চালু এ সঞ্চয়পত্র চালু করে। প্রাপ্ত আনুতোষিক ও ভবিষ্য তহবিলের অর্থ মিলিয়ে একক নামে ৫০ (পঞ্চাশ) লাখ টাকা পর্যন্ত এ সঞ্চয়পত্র কেনা যায়। 

সঞ্চয়পত্র শুধু একটি অফিস থেকেই কেনা যায়। একাধিক অফিস থেকে কেনা হলে অথবা ক্রয়সীমা অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্র কেনা হলে গ্রাহক কোনো মুনাফা পাবেন না। 

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে যত সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়, তার ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ হচ্ছে পেনশনার সঞ্চয়পত্র। 

কারা কিনতে পারবেন
অবসরভোগী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং মৃত চাকরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানেরা এ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। 

কেনার সময় দুই কপি ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদ অথবা পাসপোর্টের ফটোকপি থাকতে হয়। আর দুই কপি করে পাসপোর্ট আকারের ছবি দিতে হয় নমিনি বা নমিনিদের। 

কোথা থেকে কেনা যাবে
৫০ হাজার টাকা, ১ লাখ টাকা, ২ লাখ টাকা, ৫ লাখ টাকা এবং ১০ লাখ টাকা মূল্যমানের পেনশনার সঞ্চয়পত্র রয়েছে। এগুলো কেনা যাবে জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব তফসিলি ব্যাংক ও ডাকঘর থেকে। একই জায়গা থেকে ভাঙানোও যাবে এগুলো। তবে যেসব জায়গায় পুরোপুরি অনলাইন পদ্ধতি চালু হয়নি, সেসব জায়গা থেকে সঞ্চয়পত্র আর কেনা যাচ্ছে না। 

মুনাফার হার
পেনশনার সঞ্চয়পত্র পাঁচ বছর মেয়াদি। মেয়াদান্তে মুনাফা ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। তবে বছরভিত্তিক মুনাফার হার ভিন্ন। মুনাফার হার ১ম বছর শেষে ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ, ২য় বছর শেষে ১০ দশমিক ১৫ শতাংশ, ৩য় বছর শেষে ১০ দশমিক ৬৫ শতাংশ, ৪র্থ বছর শেষে ১১ দশমিক ২০ শতাংশ এবং ৫ম বছর শেষে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। 

পূর্ণ মেয়াদের জন্য এক লাখ টাকায় প্রতি তিন মাস অন্তর মুনাফার কিস্তি সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ হারে দুই হাজার ৯৪০ টাকা। 

ত্রৈমাসিক ভিত্তি
ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ৫০ হাজার টাকা মূল্যমানের মুনাফা ১ হাজার ৪৭০ টাকা। একইভাবে ১ লাখ টাকায় ২ হাজার ৯৪০ টাকা, ২ লাখ টাকায় ৫ হাজার ৮৮০ টাকা, ৫ লাখ টাকায় ১৪ হাজার ৭০০ টাকা এবং ১০ লাখ টাকায় ২৯ হাজার ৪০০ টাকা। 

ত্রৈমাসিক মুনাফা উত্তোলনের পর ৫ বছর মেয়াদ শেষে মূল বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে। মেয়াদপূর্তির আগে সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করলে ত্রৈমাসিক মুনাফা কর্তনের পর বাকি অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। 

বৈশিষ্ট্য
ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে মুনাফা দেওয়া হয়। নমিনি নিয়োগ করা যায়। হারিয়ে গেলে, পুড়ে গেলে বা নষ্ট হলে অবিকল (ডুপ্লিকেট) সঞ্চয়পত্র ইস্যু করা হয়। এ সঞ্চয়পত্র এক স্থান হতে অন্য স্থানে স্থানান্তর করা যায়। যেখান থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা হবে, সেখানে ভবিষ্য তহবিলের মঞ্জুরিপত্র এবং প্রাপ্ত আনুতোষিকের মঞ্জুরিপত্র অথবা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের একটি সনদ দাখিল করতে হবে। 

পেনশনার সঞ্চয়পত্র ব্যাংকঋণের জন্য জামানত বা আমানত হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। ব্যবসা-বাণিজ্যেও এ সঞ্চয়পত্র জামানত হিসাবে ব্যবহার করা যায় না।