রিজার্ভে চুরির ৩ বছর পর মামলা, অর্থ উদ্ধার এখনো অনিশ্চিত

মায়া দেগুইতো
মায়া দেগুইতো

রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারের ঘটনার প্রায় তিন বছর পর মামলা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও আদৌ অর্থ উদ্ধার হবে কি না, তা নিয়ে আছে অনিশ্চয়তা। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা চলবে কি না, তা–ও অনিশ্চিত।

ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংক থেকে চুরি হওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। বাকি অর্থের অস্তিত্ব এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। ক্যাসিনোর মাধ্যমে এই অর্থ অন্যত্র নেওয়া হয়। ভুয়া নামে হিসাব খোলা এবং অর্থ সরিয়ে ফেলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রিজাল ব্যাংকের কর্মকর্তা মায়া দেগুইতোকে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি ফিলিপাইনের একটি আদালত দোষী সাব্যস্ত করে ৩২ থেকে ৫৬ বছরের জেল এবং ১০ কোটি ৯০ ডলার অর্থদণ্ড দিয়েছেন। এ ছাড়া দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক চুরি ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য রিজাল ব্যাংককে ১ কোটি ৯০ লাখ ডলার জরিমানা করেছে। 

ঘটনার তিন বছর পরে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলা করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে করা মামলায় ফিলিপাইনের পাঁচটি আর্থিক ও ক্যাসিনো প্রতিষ্ঠান, দেশটির ১২ জন, ৩ জন চীনা নাগরিকসহ মোট ২০ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা হয়েছে।

বাংলাদেশের করা মামলার আসামিদের মধ্যে পাঁচ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন বা আরসিবিসি, ম্যানিলার ব্যবসায়িক সংগঠন ফিলরেম সার্ভিস করপোরেশন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সেঞ্চুরিটেক্স ট্রেডিং, ক্যাসিনো প্রতিষ্ঠান ব্লুমবেরি রিসোর্ট অ্যান্ড হোটেলসের সোলেয়ার রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাসিনো এবং দেশটির আরেক ক্যাসিনো প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন হাওয়াই লেইজার কোম্পানি লিমিটেডের মাইডাস হোটেল অ্যান্ড ক্যাসিনো।

আসামির তালিকায় ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন আরসিবিসির বিভিন্ন পর্যায়ের আটজন কর্মকর্তা। যেমন ফিলিপাইনের নাগরিক, আরসিবিসির জুপিটার শাখার সাবেক ম্যানেজার মায়া দেগুইতো, জুপিটার শাখার সাবেক সিনিয়র কাস্টমার রিলেশনস অফিসার অ্যাঞ্জেলা রুথ টরেস, ব্যাংকটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ও সিইও লরেনজো ভি ট্যান, তৎকালীন রিটেইল ব্যাংকিং গ্রুপের প্রধান রাউল ভিক্টোর বি ট্যান, তৎকালীন রিটেইল ব্যাংকিং গ্রুপের ন্যাশনাল সেলস ডিরেক্টর ইজমায়েল এস রেয়েস, তৎকালীন রিটেইল ব্যাংকিং গ্রুপের রিজিওনাল সেলস ডিরেক্টর ব্রিজিট আর ক্যাপিনা, তৎকালীন ডিস্ট্রিক্ট সেলস ডিরেক্টর নেস্টর ও পিনেডা এবং জুপিটার শাখার তৎকালীন কাস্টমার সার্ভিসের প্রধান রোমুলডো এস অ্যাগ্রাডো। 

বাকি ব্যক্তিরা হলেন ফিলিপাইনের নাগরিক ফিলরেমের সহস্বত্বাধিকারী সালুদ বাতিস্তা ও মিশেল বাতিস্তা, সেঞ্চুরিটেক্স ট্রেডিংয়ের মালিক উইলিয়াম সো গো, ইস্টার্ন হাওয়াই লেইজার কোম্পানি লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী কাম সিন ওয়ং ওরফে কিম ওয়ং এবং চীনের তিন নাগরিক ওয়েকাং জু, ডিং ঝিঝে ও গাও শুহুয়া।

তবে রিজাল ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ের করা মামলাকে একটি রাজনৈতিক চালবাজি বলে পরদিনই বিবৃতি দেয়।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে করা মামলা সেখানে চলবে কি না, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। মামলার প্রথম প্রাক্-শুনানি হয় গত ২১ মে। এরপর গত ১৯ জুলাই দ্বিতীয় শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। একই কোর্টে রিজাল ব্যাংক মামলা না চালানোর জন্য পৃথক আবেদন করে। চুরির অর্থ ফিলিপাইনে গেছে, সুতরাং মামলা করতে হবে ফিলিপাইনে—এ নিয়ে এখনো শুনানি চলছে। তবে বাংলাদেশের যুক্তি হচ্ছে, নিউইয়র্কে রক্ষিত মজুত থেকেই অর্থ চুরি করা হয়েছে। এ কারণেই নিউইয়র্কে মামলা করা হয়েছে। তবে ফিলিপাইনের আবেদন হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রুটির কারণেই অর্থ চুরি হয়েছে। সুতরাং এ নিয়ে ফিলিপাইনের বিরুদ্ধে মামলা করার যৌক্তিকতা নেই।

মামলার হালনাগাদ তথ্য জানতে চাইলে আজমালুল হোসেন কিউসি গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘রিজার্ভ চুরির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করা হয়েছে, একটি শুনানিও হয়েছে। আরেকটি চূড়ান্ত শুনানি হবে। সেটি হবে যে আদালতে মামলা করা হয়েছে, সে আদালতে চলবে কি না তা নিয়ে।’ এর চেয়ে বেশি কিছু তিনি বলতে চাননি। 

সব মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে মামলা চলবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়।আগামী অক্টোবরে আরেক দফা শুনানি হবে। তখনই নিশ্চিত হওয়া যাবে। 

(বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরি নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন পড়ুন প্রথম আলো পত্রিকায়)