ইন্দোনেশিয়া থেকে প্রায় ২০ হাজার টন কয়লা এল প্রথম দফায়

পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে এসেছে প্রথম কয়লাবাহী জাহাজ এমভি জিন হাই টং-৮। আজ দুপুর দেড়টায় জাহাজটি জেটিতে এসে পৌঁছায়। ছবি-প্রথম আলো
পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে এসেছে প্রথম কয়লাবাহী জাহাজ এমভি জিন হাই টং-৮। আজ দুপুর দেড়টায় জাহাজটি জেটিতে এসে পৌঁছায়। ছবি-প্রথম আলো

পটুয়াখালীর পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লাবাহী প্রথম জাহাজ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে ভিড়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার সময় এম ভি জিন হাই টং-৮ নামের হংকংয়ের পতাকাবাহী এই জাহাজটি ইন্দোনেশিয়ার বালিকপানান বন্দর থেকে এসে পৌঁছায়। এতে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা রয়েছে।

পায়রা বন্দরের একটি সূত্র জানায়, প্রথম কয়লাবাহী জাহাজটি ফেয়ার ওয়ে বয়া অতিক্রম করে রাবনাবাদ চ্যানেলে সকাল নয়টায় প্রবেশ করে। এরপর জাহাজটির শুল্কায়নসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া পায়রা বন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। ঠিক বেলা দেড়টার সময় জাহাজটি পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে ভিড়ে।

জার্মানির ওল্ডেন ড্রাফট কেরিয়ার্স লিমিটেডের মাধ্যমে বাংলাদেশের বেনকন সেটারনস লিমিটেড পোর্ট এজেন্ট হিসেবে এই কয়লা আমদানি করেছে। দেশীয় এই প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ এ মালেক বলেন, ‘আমরাই পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য সব সময় কয়লা আমদানি করব। দেশের অগ্রগতির সাথে অংশীদার থাকতে পেরে আমরা গর্বিত।’

জাহাজটির আগমনকে কেন্দ্র করে জেটি এলাকায় এক আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এরপর পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের সফলতা কামনা করে বিশেষ দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জামে মসজিদের পেশ ইমাম মো. সোলায়মান হোসেন দোয়া-মোনাজাত পরিচালনা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির (বিসিপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলম, প্রকল্প পরিচালক শাহ্ আবদুল মওলা, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ সাইদুর রহমান, চিফ হাইড্রোগ্রাফার লে. কমান্ডার মো. সাইফুল ইসলাম, বিসিপিসিএলের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক চি ইউসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের ডক মাস্টার এস এম শরিফুর রহমান কর্তৃক দেওয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানা গেছে, পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (বিসিপিসিএল) বছরে প্রায় ৪০ লাখ মেট্রিক টন কয়লা আমদানি করবে।

পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমরা যতদূর জানি বিসিপিসিএল জেটিতে অক্টোবর মাসে ৪টি জাহাজ আসবে। ডিসেম্বর মাসে ৮টি জাহাজ আসবে। মাসে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২২টি জাহাজ আনতে পারব। ক্রমান্বয়ে জাহাজের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। এর মাধ্যমে আমরা বলতে পারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের পায়রা বন্দরের বাস্তবায়ন শুরু হলো।’

সাইদুর রহমান বলেন আরও বলেন, পায়রা বন্দরের জন্য সরকারি অর্থায়নে প্রথম টার্মিনাল নির্মাণের কার্যক্রম চলছে। বাংলাদেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর পায়রা অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি বন্দর। অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প হিসেবে এই বন্দরকে পূর্ণাঙ্গ সুবিধাসহ একটি আধুনিক বন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার ইতিমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা বন্দরের মুরিং পয়েন্টে শিপ টু শিপ লাইটারেজের মাধ্যমে আংশিক অপারেশনাল কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে এই পর্যন্ত মোট ৩৪টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের অপারেশনাল কার্যক্রম পায়রা বন্দরের মাধ্যমে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির (বিসিপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সুষম উন্নয়নের ফসল হলো পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। কয়লা আনার মধ্য দিয়ে নতুন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু করা যাবে। আমরা ডিসেম্বরের প্রথম দিকে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করতে পারব।’

খোরশেদুল আলম আরও বলেন, কনভেয়ার বেল্টের ওপরে ঢাকনা দেওয়া আছে। যেখানে কয়লা রাখা হবে, সেখানেও ঢেকে রাখা হবে। ফলে কয়লার কারণে বায়ু-পরিবেশ ক্ষতি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।