সিদ্ধান্তের পরও ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ব্যয় কমেনি

ফ্ল্যাট ও প্লটের রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন ফি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও গত সাড়ে তিন মাসেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। কবে হবে সেটিও কেউ বলতে পারছেন না। নিবন্ধন ফি না কমায় ফ্ল্যাট বিক্রিতে গতি আসছে না বলে অভিযোগ আবাসন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের নেতারা গত বছর আবাসন খাতের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তখন তিনি এনবিআর, গণপূর্ত ও ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে একটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করে দেন। সেই কমিটির প্রথম বৈঠকে রিহ্যাবের পক্ষ থেকে নিবন্ধন ব্যয় কমানো, সম্পদ কর হ্রাস, কর অবকাশ সুবিধা বৃদ্ধি, এক অঙ্কের সুদহারে গৃহঋণ দেওয়ার জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠনসহ ১২ দফা প্রস্তাব দেওয়া হয়।

ফ্ল্যাট ও প্লটের নিবন্ধন ব্যয় কমানোর বিষয়ে রিহ্যাবের নেতারা কমিটিকে বলেছিলেন, বর্তমানে ফ্ল্যাট নিবন্ধনে ৪ শতাংশ গেইন ট্যাক্স, ৩ শতাংশ স্ট্যাম্প ফি, ২ শতাংশ নিবন্ধন ফি, ২ শতাংশ স্থানীয় সরকার কর ও ৩ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) দিতে হয়। রিহ্যাবের প্রস্তাব নিবন্ধন ফি ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা। এ ছাড়া সেকেন্ডারি বাজার প্রচলনের জন্য পুরোনো ফ্ল্যাট নিবন্ধন ফি সাড়ে তিন শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেছে আবাসন ব্যবসায়ীদের এই সংগঠন।

যৌথ কমিটি কয়েকটি বৈঠক করে গত মার্চে একটি সুপারিশ চূড়ান্ত করে। সেই সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের অনুমোদন নিয়ে গত ২৯ মে স্ট্যাম্প ডিউটি ৩ শতাংশ থেকে দেড় শতাংশে নামিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে চিঠি দেয় এনবিআর। একই সঙ্গে নিবন্ধন ফি ২ থেকে ১ শতাংশে নামিয়ে আনতে আইন ও বিচার বিভাগে; স্থানীয় সরকার কর ২ থেকে দেড় শতাংশ করতে স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং ভূমি উন্নয়ন সংস্থার মূসক ৩ থেকে ২ শতাংশে নামিয়ে আনতে মূসক নীতি বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়। তবে সাড়ে তিন মাসেও সেসব বাস্তবায়ন করেনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো।

এদিকে চলতি অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের আবাসন খাত দীর্ঘদিন ধরে স্থবির হয়ে আছে। খাতটি বিকশিত না হওয়ার অন্যতম কারণ স্ট্যাম্প ডিউটি ও রেজিস্ট্রেশন ফি অনেক বেশি। এর ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। আর অপ্রদর্শিত আয়ের পরিমাণও বাড়ছে। আমরা এসব ফি যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করব।

জানতে চাইলে রিহ্যাবের প্রথম সহসভাপতি ও যৌথ কমিটির সদস্য লিয়াকত আলী ভূঁইয়া গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, যৌথ কমিটি ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ব্যয় ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার সুপারিশ করেছিল। তবে এনবিআর পরবর্তী সময়ে স্ট্যাম্প ফি, নিবন্ধন ফি, স্থানীয় সরকার কর ও মূসক কমানোর প্রস্তাব দিলেও গেইন ট্যাক্সের বিষয়ে কিছু বলেনি। তাতে ফ্ল্যাট বা প্লটের নিবন্ধন ১০ শতাংশের কাছাকাছি হতে পারে। তবে বিষয়টি গত কয়েক মাসেও চূড়ান্ত হয়নি।

লিয়াকত আলী ভূঁইয়া আরও বলেন, নিবন্ধন ব্যয় কমানোর প্রক্রিয়া চলছে। তাই বর্তমানে কেউ আর ফ্ল্যাট নিবন্ধন করাচ্ছেন না। ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। নিবন্ধন ব্যয় কমানোর বিষয়টি ঝুলে থাকায় ফ্ল্যাট বিক্রির গতি কিছুটা হলেও কমেছে।

এ ছাড়া যৌথ কমিটির পক্ষ থেকে নিবন্ধন ব্যয় কমানোর পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের সুদের হার এক অঙ্কের ঘরে নামিয়ে আনা, অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করলে ঢালাওভাবে প্রশ্ন না করা, মূসক না বাড়ানো, সেকেন্ডারি বাজার সৃষ্টির উদ্যোগ, ঢাকার বাইরে প্রকল্প করলে ট্যাক্স হলিডে বা কর অব্যাহতির সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এনবিআরের সঙ্গে আগামী সপ্তাহে আমাদের একটি বৈঠক আছে। সেখানে নিবন্ধন ব্যয় কমানোর বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রগতি জানা যাবে।’ নিবন্ধন ব্যয়ের সঙ্গে সরকারের কয়েকটি দপ্তরের সংশ্লিষ্টতা থাকায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।