গৃহঋণে বাদ সাধে উচ্চহারে সুদ

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

প্রতিটি মানুষের আজন্ম আকাঙ্ক্ষা থাকে একটি নিজস্ব আবাসনের। পরিবারের সবাইকে নিয়ে নিরাপদে, শান্তিতে বসবাস করার একটি স্থায়ী ঠিকানার। তবে স্বল্প আয়ের মানুষের আকাঙ্ক্ষা থাকলেও তা বাস্তবায়নের ক্ষমতা থাকে না। তাই নিজের ঠিকানা তৈরিতে গৃহঋণে আগ্রহী হন তাঁরা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে চালু রয়েছে নানা নামে গৃহঋণ বা হাউজিং লোন। তবে এ ক্ষেত্রেও বাদ সাধে ব্যাংক ঋণের সুদহার।

দেশের অর্থনীতির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে পেশাজীবী ও চাকরিজীবীর সংখ্যাও বাড়ছে। এর ফলে বাড়ছে গৃহঋণের চাহিদাও। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো আবাসন খাতে একজন গ্রাহককে সর্বোচ্চ ১ কোটি ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারে। তবে ঋণ ও মূলধনে অনুপাত হতে হয় ৭০: ৩০। অর্থাৎ ১ কোটি টাকার ফ্ল্যাটে ব্যাংক ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থায়ন করতে পারবে। বাকি ৩০ লাখ টাকা দিতে হবে গ্রাহককে। ব্যাংকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নিয়ম পরিপালনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ নিয়মের বাইরে। তাই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ফ্ল্যাট কেনায় বা বাড়ি নির্মাণে ব্যাংকের চেয়ে বেশি ঋণ-সুবিধা দিতে পারে।

ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের (বিএইচবিএফসি) ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভাগীয় ও জেলা সদর এলাকার মধ্যে ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ-সুবিধা দিয়ে থাকে। সর্বনিম্ন ৫ থেকে সর্বোচ্চ ২০ বছর মেয়াদে এ ঋণ-সুবিধা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ পর্যন্ত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফ্ল্যাট-বাড়ি বানাতে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ব্যাংক ও বিডিবিএল। এ ছাড়া রূপালী ব্যাংক দিচ্ছে ৯ থেকে ১১ শতাংশ সুদে ঋণ। বেসিক ব্যাংক ৯ থেকে ১৩ শতাংশ সুদে গৃহনির্মাণ ঋণ দিচ্ছে। এর বাইরে বেসরকারি খাতের প্রায় সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান গৃহঋণ দিচ্ছে সর্বনিম্ন ৯ থেকে সর্বোচ্চ ১৬ শতাংশ সুদে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গৃহায়ণ ঋণের বিপরীতে ইস্টার্ণ ব্যাংক সাড়ে ৯ থেকে সাড়ে ১০, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ১০ থেকে ১৩, সিটি ব্যাংক সাড়ে ১৩, ওয়ান ব্যাংক ৯ থেকে ১২, আইএফআইসি সাড়ে ১২ থেকে সাড়ে ১৫, প্রাইম ব্যাংক ১২ থেকে ১৫, ব্যাংক এশিয়া ১১ থেকে ১৪, এনসিসি ব্যাংক ১৩ থেকে ১৬, এনআরবি ব্যাংক ১২ থেকে ১৫, প্রিমিয়ার ব্যাংক সাড়ে ১২ থেকে সাড়ে ১৫, এবি ব্যাংক সাড়ে ১২ থেকে সাড়ে ১৫, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ১১ থেকে ১৪, ডেলটা ব্র্যাক হাউজিং ৯ দশমিক ২৫ থেকে ১২ দশমিক ২৫, আইডিএলসি ফাইন্যান্স ১০ দশমিক ৫২ থেকে ১৩ দশমিক ৫২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নিচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) প্রথম সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, ‘গৃহঋণ একেবারেই ঝুঁকিবিহীন ঋণ। অথচ তারপরও অনেক ব্যাংকেরই এই ঋণ দেওয়ার বিষয়ে অনীহা দেখা যায়। তাই আমরা একটি আলাদা তহবিল চাচ্ছি। ২০০৯ সালে একবার আলাদা তহবিল হয়েছিল। তবে তা বেশি দিন চলেনি। আলাদা তহবিল হলে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষ অল্প সুদে গৃহঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট কিনতে পারতেন। পৃথিবীর সব দেশেই এই ধরনের তহবিল থাকে। স্বল্প আয়ের মানুষ তো পকেটের টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনতে পারেন না। ঋণ লাগবেই।’

তবে সামনে আবাসন খাতের কিছুটা সুদিন আসছে বলে মনে করেন লিয়াকত আলী ভূঁইয়া । তিনি বলেন, ফ্ল্যাট ও প্লটের নিবন্ধনসহ অন্যান্য মাশুল কমানোর আশ্বাস মিলেছে। এ ছাড়া সরকারের ব্যবস্থাপনায় ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে গৃহঋণ পাওয়ার জন্য আগামী ১ অক্টোবর থেকে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন সরকারি চাকরিজীবীরা। এ সুবিধার আওতায় মাত্র ৫ শতাংশ সরল সুদে তাঁরা ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহনির্মাণ ঋণ নিতে পারবেন।

তিনি বলেন, ফ্ল্যাট ও প্লটের নিবন্ধন মাশুল, সম্পদ কর, স্ট্যাম্প মাশুল, স্থানীয় সরকার কর ও ভ্যাট ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছিল রিহ্যাব। তারা বলেছিল, রেজিস্ট্রেশন ব্যয় অত্যধিক হওয়ায় ফ্ল্যাট ও প্লট নিবন্ধনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন ক্রেতারা। পরে নিবন্ধন ব্যয় কমানোসহ কয়েকটি বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে সুপারিশ করেছে আবাসন খাতের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে এনবিআর, গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ী সমন্বয়ে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি। আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিবন্ধন ব্যয় কমবে বলে আশা করছিলেন আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা। এখন পর্যন্ত কেবল আশ্বাস মিলেছে।