মিসর-তুরস্কে পেঁয়াজ খুঁজছেন ব্যবসায়ীরা

পেঁয়াজ। ফাইল ছবি
পেঁয়াজ। ফাইল ছবি

ভারত থেকে আমদানি আর সুবিধাজনক না থাকায় পেঁয়াজের নতুন উৎস খুঁজছেন আমদানিকারকেরা। ইতিমধ্যে মিয়ানমারের পেঁয়াজ ঢাকার বাজারে আসতে শুরু করেছে। অন্যদিকে মিসর ও তুরস্ক থেকে আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছেন আমদানিকারকেরা।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মিসর ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজের দু-একটি চালান আগামী মাসের প্রথম দিকে ঢাকায় আসতে পারে। এসব পেঁয়াজের দাম তুলনামূলক কম হবে। ফলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গতকাল পেঁয়াজের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ নিয়ে কয়েক দিনের মধ্যে পেঁয়াজের মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে তৃতীয় দফা বৈঠক করল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গতকালের বৈঠক শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানির কারণে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ছে। কোনো বাজারেই পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। ভোক্তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। মূল্য দ্রুত কমে আসছে। 

সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পুরান ঢাকার শ্যামবাজারভিত্তিক আমদানিকারক মো. আবদুল মাজেদ প্রথম আলোকে বলেন, মিসর ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে অনেক ঋণপত্র খোলা হয়েছে। ওই সব পেঁয়াজ এলে দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে। পাইকারি বাজারে গতকাল দাম কমেছে। 

শ্যামবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে গতকাল প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৬৫-৬৬, দেশি কিং নামের পেঁয়াজ ৫৮-৬০, ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৫০-৫২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ টাকার মতো কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। 

>টিসিবির হিসাবে, এক মাসে দাম বেড়েছে ৫৫ শতাংশ।
পাইকারি বাজারে দাম কেজিতে ৫ টাকার মতো কমেছে।
খুচরায় প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮৫ টাকা।

খুচরা বাজারে দেশি বাছাই করা পেঁয়াজ ৮৫ টাকা, মাঝারি দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা, দেশি কিং পেঁয়াজ ৭৫-৮০ ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। 

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত এক মাসে পেঁয়াজের দাম ৫৫ শতাংশ বেড়েছে। ভারতেও পেঁয়াজের বাজার বেশ চড়া। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের খবর অনুযায়ী, গতকাল দিল্লিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল মানভেদে ৬০-৮০ রুপি। 

বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে। তার আগের দিন ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য টনপ্রতি ৮৫০ ডলারে বেঁধে দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত বছর দেশে প্রায় ১১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে, যার প্রায় পুরোটা ভারত থেকে। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দেশে বছরে ২৪ লাখ টনের মতো পেঁয়াজের চাহিদা আছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, উৎপাদন ২৩ লাখ টনের মতো। এর ৩০ শতাংশ অবশ্য সংরক্ষণকালে পচে যায়। সব মিলিয়ে বড় একটি অংশের জন্য আমদানিনির্ভরতা থাকেই। 

মিসর ও তুরস্কের পেঁয়াজ বাংলাদেশের মানুষ পছন্দ করবে কি না, জানতে চাইলে শ্যামবাজারের আরেক আমদানিকারক নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে বলেন, বাসাবাড়িতে এসব পেঁয়াজ হয়তো ততটা চলবে না। কিন্তু রেস্তোরাঁ, ছাত্রাবাস, কারখানার মতো জায়গায় বেশ বিক্রি হবে। দাম কমবে আশা করা যায়। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠক 

বাণিজ্যসচিব মো. জাফর উদ্দীনের সঙ্গে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস, ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. মিজানুর রহমান, আমদানিকারক মো. আবদুল মাজেদ, মো. হাবিবুর রহমান, মো. হাফিজুর রহমান, নারায়ণ চন্দ্র রায়, উত্তম কুমার সাহা, মো. আবদুল মান্নান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে মন্ত্রণালয় জানায়, পেঁয়াজ আমদানি ও বাজারজাত সহজ ও দ্রুত করতে সরকার ইতিমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে। তদারকিও জোরদার করেছে। আমদানি বাড়ছে। বাজারেও দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ীদের নৈতিকতার সঙ্গে ব্যবসা করার অনুরোধ জানায়। 

টিসিবির পেঁয়াজ

বাজার সামাল দিতে টিসিবি ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে স্বল্প পরিসরে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে। তাদের পেঁয়াজের কেজি ৪৫ টাকা। শুরুর কয়েক দিন ঢাকার পাঁচটি জায়গায় তারা পেঁয়াজ বিক্রি করেছে। গত রোববার থেকে ট্রাকসংখ্যা বাড়িয়ে ১০টি করা হয়েছে। ট্রাকে এক হাজার কেজি পেঁয়াজ দেওয়া হচ্ছে। এর আগে ২০১৪ সালে সর্বশেষ পেঁয়াজ বিক্রি করেছিল টিসিবি।

দেশে দিনে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ৬ হাজার ৫৭৫ টন। সেখানে টিসিবি বিক্রি করছে দিনে ১০ টন। ফলে বাজারে তেমন একটা প্রভাব পড়ছে না। 

টিসিবির মুখপাত্র হ‌ুমায়ূন কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। কয়েক দিনের মধ্যে ঢাকার বাইরেও পেঁয়াজ বিক্রি শুরু হবে।’