অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমির ইজারামূল্য বাড়াবে বেজা

>বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরসহ আরও কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জমির ইজারামূল্য বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বেজা।

অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইজেড) জমির ইজারামূল্য বাড়াবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। সংস্থাটি বলছে, জমি অধিগ্রহণ, উন্নয়ন ও অবকাঠামো তৈরিতে বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে। ফলে মূল্য বাড়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

অনেক দিন ধরেই বেজা জমির ইজারামূল্য বাড়ানোর চিন্তা করছিল। সেটা এখন একটা পর্যায়ে এসেছে। আপাতত বেজা ৫০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির কথা চিন্তা করছে। এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যাঁরা ইতিমধ্যে জমি নিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও নতুন হার কার্যকর হবে। তবে যাঁরা এককালীন পুরো টাকা পরিশোধ করে দিয়েছেন, তাঁদের বাড়তি মূল্য দিতে হবে না।

জানতে চাইলে সংস্থাটির নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সার্বিক বিবেচনায় জমির ইজারামূল্য বাড়াতে হচ্ছে। তবে এটা চূড়ান্ত হবে সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে।

দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও পরিকল্পিত শিল্পায়নের জন্য সরকার ২০৩০ সাল নাগাদ ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির লক্ষ্য ঠিক করেছে। এর মধ্যে এখন জোরেশোরে কাজ চলছে ২৮টির, যার ১৩টি সরকারি। বেসরকারি খাতে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল চূড়ান্ত লাইসেন্স পেয়েছে। সেখানে জমির ইজারামূল্য কত, সেটা উন্নয়নকারীর ওপর নির্ভর করে। তবে সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের ইজারামূল্য ঠিক করে বেজার গভর্নিং বোর্ড।

এখন পর্যন্ত বেজা চট্টগ্রামের মিরসরাই, সীতাকুণ্ড ও ফেনী ঘিরে গড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, মৌলভীবাজারের শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল ও কক্সবাজারের মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি বরাদ্দ শুরু করেছে। এ ছাড়া পর্যটনকেন্দ্র সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের জমি বরাদ্দের আবেদন নেওয়া হচ্ছে।

বেজা দুভাবে জমি দেয়। অনুন্নত ও উন্নত। ইজারার ধরনও দুটি, এককালীন মূল্য পরিশোধ অথবা বছর বছর ভাড়া। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে এখন এককালীন ৫০ বছরের জন্য অনুন্নত জমির ইজারামূল্য নির্ধারণ করা আছে প্রতি বর্গমিটার ১৫ ডলার। সেখানে এককালীন উন্নত জমির ইজারামূল্য প্রতি বর্গমিটারের জন্য ৩০ ডলার। বার্ষিক চুক্তিতে পরিশোধের ক্ষেত্রে উন্নত জমির ইজারামূল্য বছরে প্রতি বর্গমিটারের জন্য দেড় ডলার। অনুন্নত জমির ক্ষেত্রে তা ৭৫ সেন্ট। অন্যান্য অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর ইজারামূল্যও বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের মতোই। অবশ্য মহেশখালীতে কিছুটা কম। এতে প্রতি বর্গমিটারের এককালীন ৫০ বছরের ইজারামূল্য ১৩ দশমিক ১২৫ ডলার।

২০১৮ সালের ২৭ মে বেজার গভর্নিং বোর্ডের সভায় ইজারামূল্য বাড়ানোর ক্ষমতা সংস্থাটির নির্বাহী বোর্ডকে দেওয়া হয়। অবশ্য এ ক্ষেত্রে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে।

বেজার কর্মকর্তারা অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমির ইজারামূল্য বাড়ানোর কয়েকটি কারণ বলছেন। এর মধ্যে মূল তিনটি কারণ হলো ভূমি অধিগ্রহণে এখন তিন গুণ ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে, জমি উন্নয়নের খরচ অনেক বেশি পড়ছে এবং বড় অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভেতরে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে যেসব শিল্পপার্ক গড়ে উঠছে, সেগুলোকে প্রতিযোগিতাসক্ষম করা।

আগে ১৯৮২ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী মূল্যের অতিরিক্ত দেড় গুণ ক্ষতিপূরণ দিয়ে সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণ করা হতো। এখন ২০১৭ সালের জুলাইয়ে সংসদে ‘স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল’ আইনটি পাস হওয়ার পর সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে তিন গুণ ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে। বেজা জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে জমি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড়ে ছয় মিটার উঁচু করতে হচ্ছে। এসব কারণেই জমির দাম বাড়াতে চায় সংস্থাটি।

বিনিয়োগকারীদের মধ্যে জমি নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ আগ্রহ দেখছে বেজা। সংস্থাটির হিসাবে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ২৩৯ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। এতে জমি নিয়েছে ৬৯টি প্রতিষ্ঠান। আরও অনেক আবেদন আছে। বাড়তি আগ্রহের কারণেও জমির ইজারামূল্য বাড়ানোর সুযোগ দেখছে বেজা।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘জমির ইজারামূল্য কম হারে নির্ধারণ নিয়ে আমরা আগেই আপত্তি করেছিলাম। বিসিক শিল্পনগরগুলোতে কম মূল্যে জমি পেয়ে প্রভাবশালীদের মধ্যে তা নিয়ে ফেলে রাখার একটি প্রবণতা অতীতে দেখা যায়। অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমির মূল্য যদি বাজারমূল্যের কাছাকাছি হয়, তাহলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তা ব্যবহার করে দ্রুত রিটার্ন বা মুনাফা অর্জনের প্রবণতা থাকবে।’ তিনি আরও বলেন,  ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ ছাড়ের সুযোগ রাখা যায়।