ফিজি ও ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশের প্রাইডসিস

সহকর্মীদের নিয়ে মনোয়ার ইকবাল। ছবি: সংগৃহীত
সহকর্মীদের নিয়ে মনোয়ার ইকবাল। ছবি: সংগৃহীত

তৈরি পোশাকের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে এখন পোশাকশিল্প খাতের উপযোগী সফটওয়্যার রপ্তানি হচ্ছে। শিগগিরই ফিজি ও ইন্দোনেশিয়ার কয়েকটি গ্রুপ ও কোম্পানিতে ব্যবহার শুরু হবে বাংলাদেশের সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান প্রাইডসিসের তৈরি গার্মেন্টস ইআরপি সফটওয়্যার ‘প্রাইডসিস ইআরপি’। ইতিমধ্যে প্রাইডসিসের তৈরি এই সফটওয়্যার চলছে আফ্রিকার দেশ মাদাগাস্কারের দুটি পোশাকশিল্প খাতের প্রতিষ্ঠানে।

কেবল বিদেশে নয়, দেশের বেশ কয়েকটি কারখানাও এখন এই প্রযুক্তি নিয়েছে। মাহমুদ গ্রুপসহ বাংলাদেশের প্রায় ১৩টি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হচ্ছে প্রাইডসিসের তৈরি এ সফটওয়্যার। আরও বেশ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানও আগ্রহ দেখাচ্ছে। ইআরপি মানে এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং। অর্থাৎ মূল ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ার সমন্বিত ব্যবস্থাপনার সফটওয়্যার। এই সফটওয়্যার তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রমের বিভিন্ন তথ্য একসঙ্গে ব্যবস্থাপনা করা যায়।

প্রাইডসিসের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার ইকবাল বলেন, বিদেশি সফটওয়্যার বা অন্যান্য ইআরপি সফটওয়্যারে পূর্ণ সেবা বা কমপ্লিট সেবা নেই। তাই পোশাকশিল্প খাতের সব দিক ব্যবস্থাপনার উপযোগী পূর্ণ সেবা দেওয়ার জন্য তাঁরা এ সফটওয়্যার তৈরি করেছেন।

দীর্ঘ পাঁচ বছর গবেষণার পর তৈরি হয়েছে এই সফটওয়্যার। এতে প্রাইডবিজ, অ্যাক্সেসরিজ, ড্যাশবোর্ড, ওয়াশিং, ডাইংয়ের মতো প্রয়োজনীয় সব ফিচার আছে, যাতে যেকোনো প্রতিবেদন সহজে তৈরি করা যায়। ২০২০ সাল নাগাদ আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গ্রাহকদের জন্য চালু হবে ক্লাউডভিত্তিক সেবা ‘প্রাইডবুক’।

মনোয়ার ইকবাল জানান, দেশে বেসরকারি পর্যায়ে তৈরি পোশাক খাতে ইআরপি সফটওয়্যারের বাজার প্রায় হাজার কোটি টাকার। বিদেশে একটি প্রতিষ্ঠান ইআরপি সফটওয়্যার চালু করতে প্রায় দুই লাখ ডলার ব্যয় করে। অর্থাৎ বিদেশে সফটওয়্যার রপ্তানি করে প্রতিষ্ঠানপ্রতি শুরুতেই দুই কোটি টাকার মতো দেশে আনা সম্ভব।

কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক সফটওয়্যার উদ্যোক্তা মনোয়ার ইকবালের বাড়ি গাজীপুরের শ্রীপুরে। ২০০৪ সালে পড়াশোনার পাশাপাশি জুনিয়র প্রোগ্রামার হিসেবে ছয় হাজার টাকা বেতনে একটা সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করেন। চাকরির অভিজ্ঞতা তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠান তৈরির কাজে এসেছে। ২০১৩ সালে হঠাৎ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নেন। উত্তরায় দুই কক্ষের একটা অফিস নিয়ে কাজ শুরু করেন। দেশের মোবাইল অপারেটর টেলিটকের ইআরপি তৈরি করে প্রমাণ করেন নিজের দক্ষতা। এরপর গবেষণা ও কর্মদক্ষতা দেখিয়ে দেশের পোশাক খাতে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেন। নিজের উদ্যোগে ছোট পরিসরে প্রাইডসিস আইটির যে স্বপ্নযাত্রা শুরু করেছিলেন, তা এখন মাদাগাস্কার, ফিজি ও ইন্দোনেশিয়া ছাড়িয়ে জাপান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও মালয়েশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখছেন।

মনোয়ার ইকবাল জানান, ইতিমধ্যে মাদাগাস্কারে অফিস নিয়ে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিগ ডেটা, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ক্লাউড কম্পিউটিং নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। গত জুলাই মাসে থাইল্যান্ডের এক কোম্পানির অফশোর ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার নিয়ে চুক্তি হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ১৫ জন কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ওই প্রকল্পের জন্য। আরও নতুন দক্ষ কর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে।

মনোয়ার ইকবাল বলেন, আগামী পাঁচ বছরে দেশের আইটি শিল্প খাতে বিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে। দেশের পোশাক খাত আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এখনই দেশের প্রতিষ্ঠানে দেশের সফটওয়্যার চালুর উপযুক্ত সময়। কারওয়ান বাজারের একটি অফিসে ১৫০ জনের মতো কর্মী কাজ করছেন তাঁর প্রতিষ্ঠানে, যার মধ্যে ৬০ জনের মতো ডেভেলপার রয়েছেন।

প্রাইডসিস নিয়ে ২০১৮ সালে বেসিসের জাতীয় পুরস্কার, ওয়ার্ল্ড সামিট পুরস্কার পেয়েছেন এ উদ্যোক্তা। ১৮ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের ‘ইন্টারন্যাশনাল স্মার্ট ম্যানুফ্যাকচারিং ৪.০’ সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন মনোয়ার ইকবাল। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তি সফলভাবে প্রয়োগের বিষয় নিয়ে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতকে তুলে ধরার পাশাপাশি সে দেশে প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করার অনুমোদন পেয়েছে প্রাইডসিস। শিগগিরই মালয়েশিয়ায় নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ শুরু করবে তাঁর প্রতিষ্ঠান।

প্রযুক্তি ব্যবসা খাতকে এগিয়ে নিতে দেশি ব্র্যান্ডিং ও সরকারি উদ্যোগ আরও প্রয়োজন বলে মনে করেন মনোয়ার। তাঁর মতে, দেশের ব্র্যান্ডিং নিজস্ব পণ্য দিয়েই করতে হবে। এ লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আরও উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।