২০২৩ সালে মোটরসাইকেলের বিক্রি দাঁড়াবে ১০ লাখ

মতিউর রহমান।
মতিউর রহমান।
>

মোটরসাইকেল বিপণনকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশের মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশনের (বিমামা) সভাপতি মতিউর রহমান। তিনি উত্তরা মোটরসের চেয়ারম্যান। বাংলাদেশের মোটরসাইকেল শিল্পের যাত্রা নিয়ে কথা বলেছেন এবং বাণিজ্যের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজীব আহমেদ

এবং বাণিজ্য: বাংলাদেশে ভারতীয় ও জাপানি মোটরসাইকেল ব্র্যান্ডগুলো যৌথ উদ্যোগ অথবা কারিগরি সহায়তা দিয়ে কারখানা করছে। সার্বিকভাবে খাতের পরিস্থিতি কী?

মতিউর রহমান: মোটরসাইকেলের বাজার বড় হচ্ছে। এখন বছরে পাঁচ লাখের কাছাকাছি মোটরসাইকেল বিক্রি হয়। এটা ২০২৩ সাল নাগাদ ১০ লাখে উন্নীত হবে বলে আমরা আশা করি। এখন কোম্পানিগুলো নিজেদের বিক্রির পরিমাণ বাড়াতে মূল্যে অনেক ছাড় দিচ্ছে। ফলে মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে মোটরসাইকেল কিনতে পারছে। আমরা যেটুকু শুল্কছাড় পেয়েছি, দাম কিন্তু তার চেয়ে বেশি কমেছে। বাজারে এ প্রতিযোগিতার কারণ, পরিমাণে না বাড়লে কেউ বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফা অর্জন করতে পারবে না।

এবং বাণিজ্য: মোটরসাইকেল–শিল্পের উন্নয়নে এখন জরুরি কী?

মতিউর রহমান: এখন দরকার সহযোগী শিল্প বা ভেন্ডার উন্নয়ন। ভারতে বড় ব্র্যান্ডগুলো এখন মূলত মোটরসাইকেল সংযোজন করে। তাদের জন্য মোটরসাইকেলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি করে সহযোগী শিল্প। বাংলাদেশে আমরা ভেন্ডারদের আনার চেষ্টা করছি। তাদের বলছি, এখন সরকার মোটরসাইকেলশিল্পের উন্নয়নে নানা সহায়তা দিচ্ছে। পাঁচ বছর পরে কিন্তু এই মনোভাব না–ও থাকতে পারে। তাই এখন এলে যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে, সেটা পরে মিলবে না। সমস্যা হলো বাংলাদেশের বাজার ছোট। বড় না হলে ভেন্ডারদের আকর্ষণ করা যাবে না। অবশ্য মোটরসাইকেল বাড়লে খুচরা যন্ত্রাংশেরও একটি বড় বাজার তৈরি হবে। সেদিকেও তারা নজর দিতে পারে।

এবং বাণিজ্য: মোটরসাইকেলের বাজার যে বাড়ছে, এটা কারণ কী কী?

মতিউর রহমান: প্রথমত, দাম কমেছে বলে মানুষের নাগালের মধ্যে এসেছে। আগে একটি পালসার মোটরসাইকেল ২ লাখ ১০ হাজার টাকা ছিল। এখন সেটা ৪০ হাজার টাকা কম। দ্বিতীয় কারণ, দেশে গ্রামগঞ্জে রাস্তাঘাটের উন্নতি হয়েছে। মানুষের আয় বেড়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী গণপরিবহনব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। মোটরসাইকেল একটি সাশ্রয়ী ও সহজে ব্যবহারযোগ্য বাহন। এ কারণে মানুষ কিনছে। এরপরও ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে মোটরসাইকেলের ব্যবহার কম। দেশে এখন মোটরসাইকেলের বাজারে যে প্রবৃদ্ধি, সেটা আরও কয়েক বছর অব্যাহত থাকবে।

এবং বাণিজ্য: বাংলাদেশ থেকে কি মোটরসাইকেল রপ্তানি সম্ভব?

মতিউর রহমান: অবশ্যই। ভারত, থাইল্যান্ড পারলে আমরা কেন পারব না। তবে এ জন্য একটু সময় লাগবে। সহযোগী শিল্প গড়ে উঠলে মোটরসাইকেলের উৎপাদন খরচ কমবে। তখন রপ্তানিতে আমরা প্রতিযোগিতা–সক্ষম হতে পারব।

এবং বাণিজ্য: আপনারা এখন কী কী তৈরি করেন?

মতিউর রহমান: এখন মোটরসাইকেলের কাঠামো বা চেসিস এবং আরও কয়েকটি যন্ত্রাংশ তৈরি করলে উৎপাদন হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া যায়। এ নিয়মটি পরিবর্তন দরকার। কেউ যদি চেসিস তৈরি না করে অন্য কিছু তৈরি করতে চায়, সে ক্ষেত্রেও সুযোগ দেওয়া দরকার। হিসাবটি করা উচিত মূল্য সংযোজনের ভিত্তিতে।

এবং বাণিজ্য: মোটরসাইকেল বিক্রিতে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

মতিউর রহমান: আমরা চাই মোটরসাইকেল নিবন্ধনের পর বিক্রি হোক। কিন্তু নিবন্ধন সহজ করতে হবে। গ্রামগঞ্জে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয় নেই। সেখানে একটি দোকানে দিনে ১০ জন ক্রেতা এলে আমরা কি ১০ বার বিআরটিএতে যাব? আসলে অনলাইনে নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকা উচিত। আমরা সেটা বলেছি।

এবং বাণিজ্য: অনেকে মোটরসাইকেলের বেপরোয়া চালানো নিয়ে বিরক্ত। এটা কি মোটরসাইকেলের দোষ?

মতিউর রহমান: কখনোই না। এটা আসলে ট্রাফিক আইনের প্রয়োগের সমস্যা। বাংলাদেশে শুধু মোটরসাইকেল নয়, অন্যান্য যানবাহন নিয়েও একই অভিযোগ আছে। এটা অন্যান্য দেশেও তো মোটরসাইকেল চলে। অবশ্য আমরা এ নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নিচ্ছি। একটা কথা মনে রাখতে হবে, মোটরসাইকেল দেশজুড়ে অনেক তরুণের আয়ের উৎস।