মিয়ানমার থেকে এল আরও ৬ ট্রলার পেঁয়াজ

শ্রমিকেরা ট্রলার থেকে বস্তাভর্তি পেঁয়াজ খালাসে ব্যস্ত। স্থলবন্দর, টেকনাফ, কক্সবাজার, ১ অক্টোবর। ছবি: গিয়াসউদ্দিন
শ্রমিকেরা ট্রলার থেকে বস্তাভর্তি পেঁয়াজ খালাসে ব্যস্ত। স্থলবন্দর, টেকনাফ, কক্সবাজার, ১ অক্টোবর। ছবি: গিয়াসউদ্দিন

ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের পর থেকে একের পর এক ট্রলারে করে মিয়ানমারের আকিয়াব থেকে পেঁয়াজ আসছে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে। মঙ্গলবার বিকেল চারটা নাগাদ এসব পেঁয়াজভর্তি ট্রলার স্থলবন্দরে এসে পৌঁছায়।

ছয়টি ট্রলারে ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৭৩০ কেজি (৫৬৯ দশমিক ৭৩০ মেট্রিক টন) শুল্কায়ন করে পেঁয়াজ খালাস করা হয়েছে। এ ছাড়া নাফ নদীতে নোঙর করে খালাসের অপেক্ষায় আছে আরও চারটি ট্রলার। যেখানে আছে প্রায় ৪০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ। এই তথ্য প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ স্থলবন্দরের কাস্টমস সুপার আবছার উদ্দিন।

স্থলবন্দর কাস্টমস সূত্রে জানায়, গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে মিয়ানমারের পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসে ৩ হাজার ৫৭৩ দশমিক ১৪১ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। যার আমদানিমূল্য ১৫ কোটি ৫৫ লাখ ২৪ হাজার ৩৫৭ টাকা। গত জুলাই মাসে ৮৪ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হলেও আগস্ট মাসে কোনো পেঁয়াজ মিয়ানমার থেকে টেকনাফে আসেনি।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার পর স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার থেকে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ আনলেও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে সঠিক সময়ে তা সরবরাহ করা যাচ্ছে না। বন্দরে জেটি, শ্রমিক সংকট ও মাল খালাসের জেটিতে ছাউনি না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে পণ্য খালাস বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের নানা ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। নোঙর করা ট্রলারে বৃষ্টির পানিতে পেঁয়াজ নষ্ট হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে আশঙ্কা।

মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত স্থলবন্দরে সরেজমিনে দেখা যায়, বৃষ্টির কারণে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পেঁয়াজ খালাস বন্ধ রয়েছে। অথচ স্থলবন্দরের জেটিতে তখনো ১২ জন ব্যবসায়ীর ছয়টি পেঁয়াজভর্তি ট্রলার নোঙর করে খালাসের অপেক্ষা করছিল। পাশাপাশি পর্যাপ্ত শ্রমিক না থাকায় বৃষ্টির কারণে প্রায় দেড় ঘণ্টা পণ্য খালাস বন্ধ ছিল। দুপুরের দিকে বৃষ্টি থেমে গেলে শ্রমিকেরা ট্রলার থেকে পণ্য খালাস শুরু করেন। এ সময় মিয়ানমার থেকে আরও চারটি পেঁয়াজভর্তি ট্রলার নাফ নদীর স্থলবন্দরে নোঙর করে। অপরদিকে, মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ দ্রুত খালাসের জন্য স্থলবন্দরের উত্তর পাশে নতুন করে আরও একটি জেটি স্থাপন করা হয়েছে।

মিয়ানমার থেকে আসা পেঁয়াজ শ্রমিকেরা ট্রলার থেকে সরাসরি ট্রাকে ভর্তি করছেন। স্থলবন্দর, টেকনাফ, কক্সবাজার, ১ অক্টোবর। ছবি: গিয়াসউদ্দিন
মিয়ানমার থেকে আসা পেঁয়াজ শ্রমিকেরা ট্রলার থেকে সরাসরি ট্রাকে ভর্তি করছেন। স্থলবন্দর, টেকনাফ, কক্সবাজার, ১ অক্টোবর। ছবি: গিয়াসউদ্দিন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক বলেন, বৃষ্টির কারণে প্রায় দেড় ঘণ্টা পেঁয়াজ খালাস বন্ধ ছিল। এতে পণ্য খালাসে জড়িত শ্রমিকদের উপার্জন কমে গেছে। জেটিতে ছাউনি থাকলে টানা পণ্য খালাস সম্ভব হতো।

বিকেলে টেকনাফ বাসস্ট্যান্ড ও বাজার এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রয় হচ্ছে ১০০ টাকায়। অথচ রোববার রাতে এ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৭০ টাকায়। এক লাফে টেকনাফে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে ৩০ টাকা।

বাসস্ট্যান্ড এলাকার মুদিদোকানি মোহাম্মদ ফরহাদ বলেন, মিয়ানমার থেকে টেকনাফে পেঁয়াজ এলেও সেগুলো চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে চলে যাচ্ছে। সেখান থেকে স্থানীয় দোকানিরা এসব পেঁয়াজ এনে বিক্রি করায় দাম কিছুটা বেড়ে গেছে। মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ টেকনাফ স্থলবন্দরে এলেও এসব পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে না। তাই চট্টগ্রাম ঘুরে আসার কারণে বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে স্থানীয় ক্রেতাদের।

পেঁয়াজ আমদানিকারক এম এ হাশেম বলেন, মঙ্গলবার সকালে ৪০০ টন পেঁয়াজভর্তি একটি বড় ট্রলার স্থলবন্দরের জেটিতে এসে নোঙর করে। শ্রমিকসংকট ও বৃষ্টির কারণে এবং জেটিতে ছাউনি না থাকায় পেঁয়াজ খালাস করতে বিলম্ব হয়েছে। ফলে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে পেঁয়াজ সরবরাহ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা পেলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা টেকনাফ বন্দর দিয়ে রেকর্ড পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করবেন।

স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বলেন, মিয়ানমারের পেঁয়াজগুলো ট্রলার থেকে সরাসরি ট্রাকে ভর্তি করা হলেও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গোডাউনের চার্জ আদায় করছেন। তিনি বলেন, ‘পণ্য খালাসের জন্য কৃত্রিমভাবে শ্রমিকসংকট দেখিয়ে পণ্য খালাসে বিলম্ব করতে পারলে সন্ধ্যার পর নাইট চার্জ আদায়ও একটি কৌশল অবলম্বন করছে কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে সরকারের উচ্চ মহলে সুদৃষ্টি কামনা করছি।’

এ বিষয়ে স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট টেকনাফের মহাব্যবস্থাপক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। তবে বৃষ্টি হলে ব্যবসায়ীরা পণ্য নষ্টের ভয়ে লোড-আনলোড নিজেরাই বন্ধ করে দেন। এতে কর্তৃপক্ষ কী করবে। তিনি বলেন, পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য, তাই দ্রুত পণ্য খালাসের জন্য স্থলবন্দরের উত্তর পাশে নতুন করে আরও একটি জেটি স্থাপন করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত ২০টি ট্রাকভর্তি পেঁয়াজ বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়েছে।