তিন মাসেও প্রণোদনা মিলছে না

চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয় পাঠালে ২ শতাংশ নগদ সহায়তা প্রদান করা হবে বলে ঘোষণা দেয় সরকার। এরপর গত ৬ আগস্ট এ বিষয়ে নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে অর্থবছরের তিন মাস, আর নীতিমালা জারিরও প্রায় দুই মাস হয়ে গেছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত নীতিমালাটি এখনো কার্যকর হয়নি। যে কারণে দেশের বাইরে থাকা এক কোটি প্রবাসীকেও প্রণোদনা দেওয়া শুরু হয়নি।

এদিকে ২০১৮ সালে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় অর্জনকারী ১০টি দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। ওই বছরে বিশ্বব্যাপী ৫২ হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলারের প্রবাসী আয় পেয়েছে বিভিন্ন দেশ, যা আগের বছরের চেয়ে ৯.৬% বেশি। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) সম্প্রতি এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবাসী আয়ের বিপরীতে প্রণোদনা দিতে টাকা চেয়ে গত ৮ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। এরপর ৯ সেপ্টেম্বর আবারও চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতেও অর্থ ছাড় করেনি অর্থ মন্ত্রণালয়। তাই ব্যাংকগুলোতে প্রণোদনার টাকা যায়নি।

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সরকার প্রণোদনা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। তাই সরকার টাকা ছাড় না করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু করার নেই। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। যত দ্রুত টাকা ছাড় হবে, তত দ্রুত ব্যাংকগুলো প্রণোদনা দেওয়া শুরু করবে। 

যোগাযোগ করা হলেও বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাননি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম।

বিভিন্ন ব্যাংকের সূত্রে জানা যায়, এখনো প্রণোদনা কার্যকর না হওয়ায় তাদের ওপর প্রবাসী আয়ের সুবিধাভোগীদের চাপ পড়ছে। কারণ, তাঁরা যখনই প্রবাসী আয়ের অর্থ তুলতে আসেন, তখনই ২ শতাংশ অতিরিক্ত দাবি করছেন। আবার প্রবাসীরাও নিয়মিত বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক, তফসিলি ব্যাংক ও গণমাধ্যমের সঙ্গে এ নিয়ে যোগাযোগ করছেন।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ১ জুলাই থেকে যাঁরা প্রবাসী আয় পাঠিয়ে আসছেন, তাঁদের সবাই নগদ সহায়তা পাবেন। যাঁদের আয় ব্যাংক হিসাবে আসে, তহবিল পাওয়ার পরপরই তাঁদের হিসাবে ২ শতাংশ টাকা দিয়ে দেওয়া হবে। আর যাঁরা কাউন্টার থেকে টাকা নিয়েছেন, তাঁদের টোকেন বা আয় আসার প্রমাণ দিতে হবে। এরপরই তাঁরা নগদ সহায়তার টাকা পাবেন।

সিটি ব্যাংকের মালয়েশিয়া মানি ট্রান্সফারের প্রধান নির্বাহী সাইদুর রহমান ফারাজী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁরা আয় পাঠাতে আসেন, তাঁদের অনেকেই ২ শতাংশ প্রণোদনার কথা জানতে চান।’

সিঙ্গাপুরের প্রাইম এক্সচেঞ্জ কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামিউল্লাহ বলেন, প্রণোদনার ঘোষণায় বৈধ পথে আয় পাঠানোর প্রবণতা বেড়েছে। কার্যকর হলে প্রবাসী আয় আরও বাড়বে। 

চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে প্রণোদনার জন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। আর গত ৬ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিমালা দিয়ে বলে, যেসব ব্যাংকে প্রবাসী আয় আসবে, তারাই সুবিধাভোগীকে ২ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দিয়ে দেবে। এ ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের বিপরীতে যে টাকা হবে, তার ওপর ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিতে হবে। প্রতিবার ১ হাজার ৫০০ ডলারের আয় এলে তাৎক্ষণিকভাবেই সুবিধাটি দিতে হবে। কিন্তু এর চেয়ে বেশি আয় এলে প্রবাসীর পাসপোর্টের কপি, বিদেশি কোম্পানির নিয়োগপত্র, ব্যবসা করলে তার নথিপত্র জমা দিতে হবে। এরপরই নগদ সহায়তা মিলবে। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ দিনের মধ্যে সুবিধাভোগীকে প্রণোদনা দিতে হবে। প্রবাসী আয়ের সুবিধাভোগী গ্রাহককে বিদেশ থেকে অর্থ আসার তথ্য জানানোর সময় নগদ সহায়তার তথ্যও আলাদাভাবে উল্লেখ করতে হবে। তবে কোনো গ্রাহক নিয়ম ভেঙে নগদ সহায়তা নিলে তা ফেরত দিতে হবে। 

নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো পরবর্তী তিন মাসের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের প্রণোদনার তহবিল নিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে আগের বছরের চেয়ে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে চাহিদা দিতে হবে। এ তহবিল শেষ হলেও ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব তহবিল থেকে প্রণোদনা প্রদান অব্যাহত রাখতে হবে। আবার টাকা পাওয়ার পর তা নিজস্ব তহবিলে সমন্বয় করে ব্যাংকগুলো প্রণোদনা প্রদান শুরু করতে পারবে। 

প্রবাসী আয়ে প্রণোদনা প্রদানের ঘোষণার পর গত জুলাই মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৫৯ কোটি ডলার। আগস্টে তা আয় কমে ১৪৪ কোটি ডলারে নেমে আসে। সেপ্টেম্বর মাসে অবশ্য প্রবাসী আয় বেড়ে ১৪৭ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। 

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রবাসী আয়ে প্রণোদনা দিতে এখন পর্যন্ত
তহবিল পাওয়া যায়নি। এ কারণে ব্যাংকগুলোও প্রণোদনা বিতরণ শুরু করতে পারেনি। আমরা আশা করছি, ব্যাংকগুলো দ্রুতই প্রণোদনা দেওয়া শুরু করতে পারবে।’