পেঁয়াজের দাম দ্রুত বেড়েছিল, কমলও দ্রুত

মিয়ানমার থেকে আসা পেঁয়াজ নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে প্রচুর ট্রাক। গতকাল টেকনাফ স্থলবন্দরে।  প্রথম আলো
মিয়ানমার থেকে আসা পেঁয়াজ নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে প্রচুর ট্রাক। গতকাল টেকনাফ স্থলবন্দরে। প্রথম আলো

ভারতের রপ্তানি বন্ধের পর পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে বেড়েছিল। সেটা আবার দ্রুত কমেও গেল। মসলাজাতীয় পণ্যের সবচেয়ে বড় ব্যবসাকেন্দ্র পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের আড়তে গত দুই দিনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম কেজিপ্রতি ২৫-৩০ টাকা কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অবশ্য খুচরা বাজারে ততটা প্রভাব পড়েনি। 

শ্যামবাজারে গতকাল বুধবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৭০–৭৫ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৬৫-৭০ টাকা এবং মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৫৮-৬০ টাকা দরে বিক্রি হয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা। ঢাকার কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১০০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে আগের চেয়ে দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকার মতো কমেছে। অবশ্য কোথাও কোথাও সেরা মানের দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১২০ টাকায় উঠেছিল, যা এখন ১১০ টাকায় নেমেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত রপ্তানি বন্ধের পর অনেকেই হুজুগে বাড়তি পেঁয়াজ কিনেছিলেন। এতে বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। ফলে দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে। এখন বাজারে চাহিদা কম। এ ছাড়া মিসর ও তুরস্ক থেকে কম দামে পেঁয়াজ আমদানির খবর আসছে। এতে দাম কমে গেছে। 

ভারত রপ্তানি বন্ধের আগে শ্যামবাজারে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ৫৫-৫৬ এবং দেশি পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হতো। খুচরা বাজারে বাছাই
করা দেশি পেঁয়াজ ৭৫-৮০ টাকা, সাধারণ দেশি পেঁয়াজ ৭০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করতেন বিক্রেতারা। ফলে দেখা যাচ্ছে, পাইকারিতে দাম আগের দরের কাছাকাছিতে চলে এসেছে। 

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, পেঁয়াজের দাম দ্রুতই কমে যাবে। এ সময় তিনি দাম বেঁধে দেওয়ার চিন্তার কথাও জানান। 

শ্যামবাজারের তুলনায় কারওয়ান বাজার ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের আড়তে দাম বেশি। গতকাল এ দুই বাজার ঘুরে দেখা যায়, কৃষি মার্কেটে বিক্রেতারা প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৮৫ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৮০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তাঁরা জানান, ওই পেঁয়াজ শ্যামবাজার থেকে আনা। 

কারওয়ান বাজারের এক আড়তের বিক্রেতা আজিজুল হক প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ৮০ টাকা দরে বিক্রি করছিলেন। পাশেই আরেক দোকানে দেশি পেঁয়াজ ৮৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। ওই সব দোকান থেকে ক্রেতারা পাঁচ কেজি করে পেঁয়াজ কিনতে পারেন। 

বিক্রেতা আজিজুল হক বলেন, সোমবার ভারতীয় পেঁয়াজ ৯০ টাকায় উঠেছিল। অনেকে ১০০ টাকায়ও বিক্রি করেছিলেন। এখন বাজার স্থিতিশীল হয়েছে। দামও কমেছে। তিনি বলেন, বাজারে আর ক্রেতা নেই। তাই বেশি দামে কেনা পেঁয়াজ লোকসানে বিক্রি করতে হচ্ছে। 

পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয় গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে। ১২ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য টনপ্রতি ৮৫০ ডলার বেঁধে দেয়। এরপর গত রোববার ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত বছর দেশে প্রায় ১১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। দেশে যতটুকু পেঁয়াজ আমদানি হয়, তার প্রায় পুরোটা আসে ভারত থেকে। 

অবশ্য এখন মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আসছে। অন্যদিকে তুরস্ক ও মিসরের পেঁয়াজ বাজারে শিগগিরই আসবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বন্দরে পেঁয়াজ খালাসের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। 

পেঁয়াজ আমদানিতে গতকাল ব্যাংকঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপনে জানায়, এই সুদহার আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। জানতে চাইলে শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী রতন সাহা বলেন, এর প্রভাব বাজারে তেমন একটা পড়বে বলে মনে হয় না।