যুক্তরাষ্ট্র-ভারত চুক্তি হলে বিশ্ব অর্থনীতি গতি পাবে

ভারতের সঙ্গে মার্কিন বাণিজ্যিক সম্পর্ক ইদানীং খারাপ হয়েছে। ছবি: রয়টার্স
ভারতের সঙ্গে মার্কিন বাণিজ্যিক সম্পর্ক ইদানীং খারাপ হয়েছে। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের জেরে বিশ্ব অর্থনীতি স্থবির হয়ে গেছে। ভারতের সঙ্গেও মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্ক ইদানীং খারাপ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গতকাল শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ইন্ডিয়া সামিটে সংস্থাটির সভাপতি বোর্জ ব্রেন্ড বলেন, ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তি বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির জন্য ইতিবাচক হবে। সিএনবিসি সূত্রে এই খবর পাওয়া গেছে।

সিএনবিসির প্রতিবেদক তানভির গিলকে ব্রেন্ড বলেন, ‘আমার মনে হয় বাণিজ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে কিছু একটা ঘটছে। এই কথার সপক্ষে তিনি সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর এবং চলমান শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের অর্থমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রসের বৈঠকের প্রসঙ্গ টানেন।

ভারতের অর্থনীতি বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের মতো হবে না। কিন্তু মার্কিন-চীন বাণিজ্যসংঘাত দীর্ঘায়িত হওয়ায় ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় সহযোগী হতে পারে। বোর্জ ব্রেন্ড মনে করেন, এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য চুক্তি হওয়া কিছুটা ‘ইতিবাচক ঘটনা’ হিসেবে চিহ্নিত হবে। তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে বাণিজ্যসংঘাত বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির গতি রুদ্ধ করছে। অথচ বাণিজ্য বহু বছর ধরে প্রবৃদ্ধির চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সংস্থা ‘রয়টার্স’কে ভারত সফররত মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস (জিএসপি) নামে যে সুবিধা বিভিন্ন দেশকে দেওয়া হয়, তাতে সেই সব দেশের পণ্য যেমন যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে পারে সহজে, তেমনি মার্কিন পণ্যও অনায়াসে সেই সব দেশে ঢুকতে পারে। কিন্তু ভারতের বাজারে সেই সুবিধা নেই। এ ব্যাপারে ভারত অবশ্যই রক্ষণশীল। এসব সমস্যা মিটলে তা মুক্তবাণিজ্যের জন্য ভালোই হতো।

রস অবশ্য আশা প্রকাশ করেন, পুরোপুরি সম্ভব না হলেও এসব সমস্যা কিছুটা হলেও মিটতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভারত জিএসপির কিছু সুবিধা পেতে পারে। জিএসপি কর্মসূচিতে কিছুটা বাণিজ্য সম্পর্ক ভারতের সঙ্গে আবারও গড়ে উঠতে পারে।

এদিকে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২১ শতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সম্পর্ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। তবে শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী নেতারা বলেছেন, এই পথ বন্ধুর। সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। এই অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সুযোগ আছে। সে ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে তার সম্পর্ক কেমন হবে, সেটা এখন বড় প্রশ্ন।

ভারতী এন্টারপ্রাইজেসের চেয়ারম্যান ভারতী মিত্তাল বলেন, ‘চীনের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে, সেটা ভারতকে বিবেচনা করতে হবে বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতে। ভারত ও চীন বাণিজ্য অংশীদার। তারা প্রতিবেশী এবং উভয়ে দেশের জনসংখ্যা বিপুল। আমি আশা করি, ভারত সরকার আমার পরামর্শ বিবেচনা করবে।’

এই শীর্ষ সম্মেলনের বাংলাদেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করছেন। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হককে উদ্ধৃত করা হয়েছে। তিনি সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের বাংলাদেশের দিকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের আয়তন অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনের সমান। আমাদের দেশে অনেক চ্যালেঞ্জও আছে। এসব সত্ত্বেও বাংলাদেশে যা হচ্ছে, তা বিশ্বের জন্য দৃষ্টান্ত হওয়া উচিত। কিন্তু আমরা মূলত বিশ্বের নজরের বাইরে আছি।’

রুবানা হক আরও বলেছেন, ‘বাংলাদেশ অন্যদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে পারে। আন্ত-আঞ্চলিক সংযোগের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার দরকার নেই। আমরা হাতে হাত রেখে কাজ করতে পারি।’

এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন চলতি মাসের শেষ নাগাদ আলোচনার টেবিলে বসতে পারে। তারা শেষমেশ সমঝোতায় আসতে পারে ভালো। কিন্তু বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচন পর্যন্ত জাতীয়তাবাদী জিকির ধরে রাখতে ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের সঙ্গে নতুন চুক্তিতে যাবেন না। সেটা হলে আবারও বৈশ্বিক মন্দা শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সমঝোতায় আসতে না পারলে বহুপক্ষীয় বাণিজ্যব্যবস্থাই ধসে পড়তে পারে।