কৃষককে ন্যায্য দাম দিলে দেশেই উৎপাদন বাড়বে

রতন সাহা ব্যবসায়ী, পুরান ঢাকার শ্যামবাজার
রতন সাহা ব্যবসায়ী, পুরান ঢাকার শ্যামবাজার
>

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পেঁয়াজের বাজার আবার অস্থির। দু-তিন বছর পরপরই এ ধরনের একটি সমস্যা তৈরি হয়। কেন এ সমস্যা, সমাধানই-বা কী, তা নিয়ে কথা বলেছেন পুরান ঢাকার মসলাজাতীয় পণ্যের ব্যবসাকেন্দ্র শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী রতন সাহা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজীব আহমেদ

প্রথম আলো: পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে বাড়ল। আবার দ্রুত কমল। এত ওঠানামার কারণ কী?

রতন সাহা: পেঁয়াজ আমদানির জন্য আমরা প্রায় পুরোটাই ভারতনির্ভর। বিকল্প হিসেবে অনেক দেশেই প্রচুর পেঁয়াজ পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু দেশের মানুষ ওই সব পেঁয়াজ খেতে অভ্যস্ত নয়। ফলে ভারত যখন রপ্তানি বন্ধ করে দিল, তখন সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা মনে করেছিলেন, দেশে দাম অনেক বাড়বে। এ কারণে কেনার প্রবণতা তৈরি হয়েছিল। এতে দাম বেড়ে যায়। কিন্তু এক দিন পরই দেখা গেল, দাম যতটা বেড়েছে, ততটা হওয়ার কথা নয়।

প্রথম আলো: পেঁয়াজের উৎপাদন এবার কেমন হয়েছে?

রতন সাহা: আসলে পেঁয়াজ উৎপাদনের বাস্তবসম্মত কোনো হিসাব নেই। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার হিসাবে পেঁয়াজ উদ্বৃত্ত। তারপরও দেখা যায় ঘাটতি। এটা ব্যবসার জন্য খুবই সমস্যা তৈরি করে। দেশে পেঁয়াজ কতটুকু হয়েছে, কতটুকু আমদানি হয়েছে, এসবের তথ্য সরকার যদি গণমাধ্যমে সময়-সময় তুলে ধরে, তাহলে ব্যবসায়ীরা আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এখন ব্যবসায়ীরা মূলত অন্ধকারে ব্যবসা করে। ধরেন, নতুন একজন ব্যবসায়ী পেঁয়াজ আমদানি শুরু করতে চান। তিনি ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নেবেন কিসের ভিত্তিতে?

প্রথম আলো: আমরা দেখছি, পেঁয়াজ উৎপাদন কয়েক বছর ধরে একই জায়গায় আছে। খুব বেশি বাড়ছে না কেন, আপনার কী মনে হয়?

রতন সাহা: দেখা যায়, এ দেশে মৌসুম যখন শুরু হয়, তখন ভারতীয় পেঁয়াজ অবাধে আমদানি হয়। এতে কৃষক দাম পান না। এ বছরও মৌসুমের শুরুতেই পেঁয়াজের দাম খুব কম ছিল। কৃষককে যদি ন্যায্যমূল্যের নিশ্চয়তা দেওয়া যেত, তাহলে দেশেই প্রচুর উৎপাদিত হতো। হয়তো সামান্য কিছু আমদানি করতে হতো। তবে এতটা ঘাটতি থাকত না।

প্রথম আলো: ন্যায্যমূল্যের জন্য করণীয় কী?

রতন সাহা: মৌসুমের সময় আমদানি বন্ধ করে দিতে হবে অথবা শুল্ক আরোপ করতে হবে। যখন কৃষক ৫ টাকা, ৮ টাকা, ১০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করেন, তখন তো কেউ খোঁজও নেয় না। দাম না পেয়ে কৃষক নিরাশ হন, পরের বছর আর উৎপাদন করতে চান না। তাঁদের অন্তত উৎপাদন খরচটুকু ওঠানোর নিশ্চয়তা দেওয়া উচিত।

প্রথম আলো: আগে তো শ্যামবাজারের অনেক ব্যবসায়ী পেঁয়াজ আমদানি করতেন। তাঁদের অবস্থা কী?

রতন সাহা: অনেকেই ব্যাপক লোকসান দিয়ে আমদানি ছেড়ে দিয়েছেন। এখন আমদানি করে মূলত স্থলবন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা। পেঁয়াজ আমদানি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। ধরেন, ভারত এক মাস পর পেঁয়াজ রপ্তানি উন্মুক্ত করে দিল। এতে যাঁরা মিসর ও তুরস্ক থেকে আমদানির উদ্যোগ নিয়েছেন, তাঁরা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়বেন। কারণ, ভারতীয় ও দেশি পেঁয়াজ থাকলে ক্রেতারা মিসর ও তুরস্কের পেঁয়াজ কোনোভাবেই কিনবেন না।

প্রথম আলো: ভারতে কি নতুন মৌসুম আসছে?

রতন সাহা: এক মাস পরই মহারাষ্ট্রের নাসিকের পেঁয়াজ উঠবে। বন্যায় ওই পেঁয়াজ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারপরও মৌসুম শুরু হলে দাম কমবে। মিসর থেকে এখন যদি কেউ পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেয়, সেটা আসতে ৪০ দিনের মতো লাগবে।

প্রথম আলো: এখন যে বাজারে অভিযান চলছে, তার প্রভাব কতটুকু?

রতন সাহা: সাময়িক হয়তো একটা প্রভাব পড়ছে। কিন্তু আতঙ্ক ছড়ালে ব্যবসায়ীরা আমদানির ঝুঁকি না-ও নিতে পারেন। কেউ যদি সিদ্ধান্ত নেন, তিনি দুই মাস আমদানি করবেন না, তাহলে কারও কিছু বলার থাকবে না। এতে বাজারে কিন্তু সংকট তৈরি হবে।

প্রথম আলো: বাংলাদেশ ব্যাংক পেঁয়াজ আমদানিতে ব্যাংকঋণের সুদহার কমিয়েছে। এর সুফল কতটুকু পাওয়া যাবে?

রতন সাহা: এর তেমন একটা সুফল পাওয়া যাবে বলে আমার মনে হয় না। আমদানিকারকেরা কম সুদে ঋণ পেলে হাতখরচ কিছুটা কমবে। বাজারে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে না।

প্রথম আলো: ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ঢাকায় ৪৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। সেটা কি দাম কমাতে ভূমিকা রাখতে পারছে?

রতন সাহা: টিসিবির পেঁয়াজের দাম কম। তবে পরিমাণ খুবই নগণ্য। ভালো হতো যদি সরকার মিসর বা তুরস্কের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরকারিভাবে পেঁয়াজ আমদানি করত।

প্রথম আলো: দেশে নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ কত দিন পর আসবে?

রতন সাহা: দেশে মৌসুম শুরু হতে এখনো এক মাসের বেশি সময় বাকি।