গুজব-ঝুঁকি

ওয়ালি-উল-মারুফ মতিন
ওয়ালি-উল-মারুফ মতিন

আজ শেয়ারবাজারের ঝুঁকি নিয়ে আলাপ করা যেতে পারে। সেটা হলো গুজব–ঝুঁকি। গুজব হলো একটা গুরুতর ঝুঁকি, যা কোনো গণিতের মধ্য দিয়ে মাপা যায় বলে মনে করি না। তবে গুজবের উৎস আর লক্ষ্য—দুইই খুঁজে পাওয়া যায়।

ধরুন, আমি বাজার থেকে কিছু শেয়ার কিনব। আমার উদ্দেশ্য হবে সবচেয়ে কম দামে সবচেয়ে বেশি শেয়ার কেনা। প্রথামতে, অনেক লোকের ভিড়ে আমি শেয়ারের দাম কমাতে পারব না। তবে ব্যবস্থা হয়েই যেতে পারে। নিজের পকেটের জোর খুব বেশি হলে আমি নিজেই তা পারতাম। সুবিধা হতো যদি আমার মতো উদ্দেশ্য আছে, এমন কয়েকজনের সঙ্গে ষড় করা যেত। ঢাকা শহরে ছাপা হয় প্রায় ৫১টি পত্রিকা। টেলিভিশনে রোজ টক শো হয় ২০টি। অনলাইনে পত্রিকার সংখ্যা সম্ভবত হাজারখানেক। তবে এখন সবচেয়ে সুবিধাজনক মিডিয়া হচ্ছে ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি।

গুজব রটানোর জন্য শুধু একটি ছোট্ট প্রশ্ন তোলা দরকার। ‘সরগরম কোম্পানি লিমিটেড নাকি ঠান্ডা মেরে যাচ্ছে?’ দেখবেন আমার এ বদ বুদ্ধির পক্ষে অনেক লোক দাঁড়িয়ে গেছে। যাদের বেশির ভাগই নিজেরা বুঝতে পারে না অথচ তারা আমার হয়ে গুজব ছড়াচ্ছে। জেল–জরিমানার মতো অপরাধ করছে।

ধরা যাক, আমাদের সরগরম কোম্পানি লিমিটেড, এর দাম ২০ টাকা। তারা কম্বল বানায়। লিখে দিন—‘এ বছর এল নিনার প্রভাবে বাংলাদেশে মাঘ মাসে বাঘ ঠান্ডা পানি খুঁজবে।’ এল নিনোর সঙ্গে গ্লোবাল ওয়ার্মিং তো আছেই। মাঘ মাসে চৈতি গরম পড়লে কম্বল বিক্রি হবে না। সরগরম কোম্পানির ব্যবসা বন্ধ। শেয়ারের দামও তাই সার্কিট ব্রেকারের তলে। খুব কম মানুষই আছেন এল নিনো আর এল নিনার পার্থক্য জেনে নিয়ে বাজারে শেয়ার কিনতে আসবে। এই ফাঁকে বলে নিই যে এল নিনো হচ্ছে উষ্ণ সমুদ্র স্রোতের কারণ। আর এল নিনা হচ্ছে শীতল স্রোতের কারণ। আপনারা কেউই ব্যাপারটা সার্চ ইঞ্জিনে দেখবেন না। আর দেখলেও দেখবেন সেখানে শত বিতর্ক; গুজব গুজবই রয়ে যাবে।

সরগরম কোম্পানির দাম পড়বে সরসর করে। দাম আমার সাধ্যের মধ্যে এলেই কিনে নেব। তারপর কেনা শেষে কাউকে নিয়ে বলব, ‘এটা ছিল ছাপার ভুল।’ আসলে এ বছর দেশে শীত যা পড়বে তাতে বাঘ সব উত্তর মেরুতেও পালাতে পারে। এল নিনো নয়, কথাটা আসলে হবে এল নিনা। ব্যস। সরগরম কোম্পানি লিমিটেডের দামও এবার লিমিট ছাড়া বাড়তে থাকবে। স্টক এক্সচেঞ্জ চিঠি দেবে কোম্পানিকে। জানতে চাইবে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আছে নাকি? তারা গৎবাঁধা জবাব দেবে—‘না নেই’।

শেষ কথা হচ্ছে—এই গুজব আমাদের জন্য এখন সবচেয়ে বড় ঝুঁকি। সমাধান? নিজেই খোঁজখবর করুন। আদা কিনতে হলে জাহাজের খবর রাখা লাগে। নিজের বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিজেই নিন।