ফের 'সেঞ্চুরি' হাঁকিয়েছে পেঁয়াজ

দুই ‘সেঞ্চুরি’ পেঁয়াজের দামে। একটি হয়েছিল দুই সপ্তাহ আগে। আরেকটি হলো গতকাল রোববার। অবশ্য এই সেঞ্চুরির ঝাঁজে ক্রেতাদের চোখে পানি।

ঢাকার খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ১০০-১১০ টাকায় উঠেছে। অন্যদিকে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকায়। মিয়ানমারের পেঁয়াজও মানভেদে ৮০-৯০ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা।

পেঁয়াজের দামে দ্বিতীয় দফার এই লাফের কারণ সরবরাহ সংকট। দেশি পেঁয়াজের মজুত যেমন শেষের দিকে, তেমনি ভারত থেকেও পেঁয়াজ আসছে না। তাই পাইকারি বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ নেই বললেই চলে। মিয়ানমার থেকে আসা পেঁয়াজের চালান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং মানও ভালো নয় বলে নতুন করে আমদানি করার সাহস দেখাচ্ছেন না আমদানিকারকেরা।

সব মিলিয়ে পরিস্থিতি কী, জানতে চাইলে পুরান ঢাকার পাইকারি মোকাম শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী রতন সাহা প্রথম আলোকে বলেন, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে মিসরের পেঁয়াজের বড় চালান আসতে পারে। এর আগেও কিছু হয়তো আসবে, তবে তা পরিমাণে অল্প। সব মিলিয়ে এখন পেঁয়াজের সরবরাহ কম। তাই বোঝা যাচ্ছে না পরিস্থিতি কী হয়।

শ্যামবাজারে গতকাল দেশি পেঁয়াজ ৭৫-৮৫ টাকা দরে বিক্রি হয়। ভারতীয় পেঁয়াজ সেখানে নেই বললেই চলে। মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে মানভেদে ৬০-৭০ টাকা। আর কারওয়ান বাজারের পাইকারি (৫ কেজি করে কেনা যায়) দোকানে দেশি পেঁয়াজ ১০০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর অবশ্য ঢাকার মিরপুর ১ নম্বর, কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট ও নিউমার্কেটের তথ্য দিয়ে বলেছে, এসব বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকায় উঠেছে। অন্যদিকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯৫ টাকা কেজি দরে।

ভারত নিজেদের বাজার সামাল দিতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। বাংলাদেশ আমদানির ক্ষেত্রে ভারতের ওপরই নির্ভরশীল। ফলে দেশের বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়তে থাকে। তখন দুই দিনের মধ্যে ১০০ টাকা ছাড়ায় দেশি পেঁয়াজের দাম। ভারতীয় পেঁয়াজও বিক্রি হয় ১০০ টাকার কাছাকাছি দরে। অবশ্য বাজার তদারকি ও হুজুগ শেষের পর দাম আবার কিছুটা কমে।

>দেশি পেঁয়াজের মজুত শেষের দিকে
ভারত থেকেও পেঁয়াজ আসছে না
দেশি পেঁয়াজের কেজি ফের ১০০ ছাড়িয়েছে
ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকায়

এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে গিয়ে বিভিন্ন বৈঠকে পেঁয়াজের প্রসঙ্গটি তোলেন। ভারতও আগে ঋণপত্র খুলে রাখা পেঁয়াজ ছাড় করে। সব মিলিয়ে পেঁয়াজের দামে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৮০-৮৫ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০-৭৫ টাকায় নেমেছিল। সেটা আবার বাড়ল।

দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ধরা হয় ২৪ লাখ টন। তবে উৎপাদন নিয়ে হিসাব দুই রকম। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) হিসাবে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন। অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে ১৮ লাখ ৩ হাজার টন। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত অর্থবছরে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ১১ লাখ টনের মতো।

ডিএইর হিসাব ধরলে মোট সরবরাহ দাঁড়ায় ৩৪ লাখ টনের বেশি। এখান থেকে ৩০ শতাংশ পচে যাওয়া বাবদ বাদ দিলে মোট সরবরাহ দাঁড়ায় ২৪ লাখ টনের মতো। বিবিএসের উৎপাদনের পরিসংখ্যান ধরে হিসাব করলে মোট সরবরাহ দাঁড়ায় ২০ লাখ টনের কিছু বেশি (৩০ শতাংশ বাদ দিয়ে)। ফলে ঘাটতি দাঁড়ায় প্রায় ৪ লাখ টন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত মৌসুমের শেষ দিকে বৃষ্টিতে পেঁয়াজের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে সরবরাহে ঘাটতি বেশি। দেশে নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ উঠতে শুরু করবে নভেম্বরের শেষ দিকে। তখন আগাম পেঁয়াজ বাজারে আসবে।