গরুর নাড়িভুঁড়ি রপ্তানি: চট্টগ্রামের ইলিয়াছের জেদের জয়

মোহাম্মদ ইলিয়াছ
মোহাম্মদ ইলিয়াছ

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় ২০০ কোটি টাকার সমমূল্যের গরু-মহিষের নাড়িভুঁড়ি বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। সিংহভাগই যাচ্ছে চীন, হংকং, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে। এটি দিয়ে উন্নত মানের স্যুপ ও সালাদ তৈরি হয় এবং তা চীনাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় খাবার। ইংরেজিতে নাড়িভুঁড়ির নাম ‘ওমাসম’, যা একসময় উচ্ছিষ্ট হিসেবে খাল-নালা ও ডোবায় ফেলে দেওয়া হতো।

পণ্যটিকে রপ্তানিপণ্য হিসেবে পরিচিত করান মূলত চট্টগ্রামের মোহাম্মদ ইলিয়াছ। দেশে বর্তমানে ২৫ জন নাড়িভুঁড়ি রপ্তানিকারক রয়েছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে লোক ঠিক করে বছরজুড়েই তাঁরা ওমাসম সংগ্রহ করেন। কোরবানির সময় সংগ্রহ করা হয় বছরের মোট চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মাসে ১৫টি কনটেইনার ওমাসম রপ্তানি হয় এবং একেকটি কনটেইনারে ৬০ থেকে ৭০ হাজার পিস ওমাসম থাকে। ১ টন (১ হাজার কেজি) প্রক্রিয়াজাত করার পর ৭০০ কেজি ওমাসম পাওয়া যায়। 

দেশের ওমাসম রপ্তানিকারকদের বেশির ভাগই চট্টগ্রাম অঞ্চলের। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্কাই নেট সি ফুডস কোম্পানি, কনফারেন্স ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, ক্যামরিজ সি ফুড ইন্টারন্যাশনাল, আরএসএম ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, স্ট্যান্ডার্ড অ্যালাইড ফুড ইন্টারন্যাশনাল, জিআর এক্সপো ইন্টারন্যাশনাল, ভিভিড অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ ইত্যাদি। অপ্রচলিত পণ্য শ্রেণিতে ওমাসম রপ্তানিতে বর্তমানে ৫ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হয়। বিশ্বে ৩২ হাজার কোটি টাকার ওমাসমের বাজার রয়েছে।

চট্টগ্রামের পূর্ব শহীদনগরের মোহাম্মদ ইলিয়াছ জানান, ২০ বছর আগের ঘটনা। একজন পাহাড়ি ও দুজন বাঙালি গরু জবাইয়ের পর কসাইখানা থেকে নাড়িভুঁড়ি বস্তায় ভরে নিয়ে যাচ্ছেন। কৌতূহল হয় আমার। এগুলো দিয়ে কী হয়? তাঁরা কথা বলতে চাননি। আগ্রহ বাড়তে থাকে আমার। একদিন লুকিয়ে পিছু পিছু হাঁটি। দেখি যে কালুরঘাট এলাকার টিনের একটি ঘরে লবণ দিয়ে নাড়িভুঁড়ি মজুত করা হচ্ছে। বিস্মিত হই। পরে জানতে পারি টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড ঘুরে এগুলো চোরাই পথে চীনে পাচার হয়।

মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, পরে একদিন তাঁদের ট্রাকের পেছন পেছন টেকনাফ স্থলবন্দর পর্যন্ত যাই। এরপর আমি জেদ করি যে ব্যবসা আমি এই ব্যবসাই করব, তবে অবৈধ পথে নয়। সেই থেকে শুরু।’

একদিন হঠাৎ ঢাকা থেকে দুই বন্ধুর ফোন পান মোহাম্মদ ইলিয়াছ এবং এই ফোনই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ঢাকার অভিজাত হোটেলে কাজ করা দুই বন্ধু নেত্রকোনার উজ্জ্বল চাকমা ও তপন চাকমা তাঁকে জানান, ভারতের মেঘালয় থেকে ডি কংলা নামের এক নারী এসেছেন ওমাসম কিনতে। আমি ঢাকার বারিধারায় এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করি। তিনিই প্রথম শিখিয়ে দেন ওমাসম পরিষ্কার, এরপর তা কাটা, ধোয়া, লবণ দেওয়া, হিমাগারে রাখা এবং গাড়িতে তোলার সব কলাকৌশল। তাঁর কাছে ১ টন ওমাসম বিক্রি করি ১ হাজার ডলারে। গল্পটা এই। আর পেছনে তাকাতে হয়নি।