বিশেষ সুবিধায় মেয়র নাছিরের ঋণ নবায়ন

মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। ফাইল ছবি
মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। ফাইল ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ সুবিধার আওতায় চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের ঋণ নবায়ন করেছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংক। এর ফলে তিনি সুদ মওকুফ ও আগামী এক বছর ঋণ পরিশোধে বিরতি পেয়েছেন। নতুন সুবিধার ফলে ২০২৮ সালের ১২ জুন পর্যন্ত ঋণ শোধ করার সময় পেলেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। এই ঋণ চতুর্থবারের মতো পুনঃ তফসিল করল অগ্রণী ব্যাংক।

গত ২০ আগস্ট অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৬২৫তম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সুবিধা পাওয়া ওই প্রতিষ্ঠানের নাম মেসার্স এমিউস মেরিন সার্ভিস। এটি আ জ ম নাছির উদ্দীনের ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। সুদ মওকুফের পর প্রতিষ্ঠানটির কাছে অগ্রণী ব্যাংকের চট্টগ্রামের লালদীঘি পূর্ব করপোরেট শাখার পাওনা ৮ কোটি ১৮ লাখ ২২ হাজার ৭১৭ টাকা। এমিউস মেরিন সার্ভিস মেঘনা পেট্রোলিয়ামের সঙ্গে নির্দিষ্ট চুক্তির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে নৌপথে জ্বালানি পরিবহন করে থাকে বলে জানা গেছে।

অগ্রণী ব্যাংক চট্টগ্রাম অঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জহরলাল রায় গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্রাহকের ঋণ পুনঃ তফসিল করা হয়েছে। বিষয়টি গ্রাহককে জানিয়ে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট শাখা।

লালদীঘি পূর্ব করপোরেট শাখার এক কর্মকর্তা জানান, এমিউস মেরিন সার্ভিসের ঋণটি চলতি বছরের ১৪ জুন থেকে ৯ বছর মেয়াদে পুনঃ তফসিলের চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রথম বছরে কোনো কিস্তি দিতে হবে না। পরের ৮ বছরে ৯৬ কিস্তিতে টাকা শোধ করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।

ঋণখেলাপিদের সুবিধা দিতে গত ১৬ মে ‘ঋণ পুনঃ তফসিল ও এককালীন পরিশোধসংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা’ জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে যাঁরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করছেন না, তাঁরা বকেয়া ঋণের ২ শতাংশ টাকা জমা দিয়েই ঋণ নিয়মিত করতে পারবেন। এতে সুদহার হবে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। আর এক বছরের ঋণ পরিশোধে বিরতিসহ ১০ বছরের মধ্যে বাকি টাকা শোধ করতে পারবেন। আবার তাঁরা ব্যাংক থেকে নতুন করে ঋণও নিতে পারবেন। এ সুযোগ নিয়েই ঋণ নবায়ন করে নিয়েছেন আ জ ম নাছির উদ্দীন।

অগ্রণী ব্যাংকের লালদীঘি শাখা ও প্রধান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর এমিউস মেরিন সার্ভিসের ৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা পরিবহন ঋণ অনুমোদন করা হয়। কিন্তু দুই বছর পরই কিস্তি না দেওয়ায় ঋণটি খেলাপি হয়ে পড়ে। ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল ঋণটি প্রথমবারের মতো পুনঃ তফসিল করে অগ্রণী ব্যাংক। তারপরও ঋণটি খেলাপি হলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সামনে রেখে ২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় পুনঃ তফসিল করা হয়।

২০১৫ সালে নির্বাচনী হলফনামায় আ জ ম নাছির উল্লেখ করেছিলেন, অগ্রণী ব্যাংকের লালদীঘি শাখায় তাঁর ৮ কোটি ৪৩ লাখ ৫৯ হাজার ৪৯৮ টাকা ঋণ রয়েছে। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিলের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন নাছির উদ্দীন। এরপরও কিস্তি না দেওয়ায় আবার খেলাপি হয়ে পড়ে ঋণটি। ২০১৬ সালের ১৬ জুন ঋণটি তৃতীয়বারের মতো পুনঃ তফসিল করা হয়।

তারপরও কিস্তি দিতে না পারায় নাছির উদ্দীন কিস্তি পুনর্বিন্যাসের আবেদন করলে ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর তার অনুমোদন দেয় অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। এরপর গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ঋণটি আবারও খেলাপি হয়ে পড়ে। এরপর চলতি বছর গ্রাহক দুই দফায় ৩৫ লাখ টাকা জমা দিয়ে বিশেষ সুবিধায় ঋণটি পুনঃ তফসিলের আবেদন করেন।

আবেদনে আ জ ম নাছির উল্লেখ করেছিলেন, জাহাজটি পুরোনো হয়ে যাওয়ায় ট্রিপের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফলে ভাড়া বাবদ মাসিক আয় কম হচ্ছে। এ কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে ঋণটি খেলাপি হয়ে পড়ে।

অগ্রণী ব্যাংকের পর্ষদের উপস্থাপিত নথিতে বলা হয়েছে, এমিউস মেরিন সার্ভিসের মালিক আ জ ম নাছির উদ্দীন একজন ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সহসভাপতি।