পেঁয়াজের দামের ঝাঁজ একদমই কমছে না

পেঁয়াজ। ফাইল ছবি
পেঁয়াজ। ফাইল ছবি

ভোক্তারা এক কেজি পেঁয়াজ কিনছেন ১০০ টাকায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও এ নিয়ে চিন্তিত, কিন্তু উপায়হীন। তবে একের পর এক বৈঠক করে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়, যদিও এতে কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থাৎ পেঁয়াজ তার দামের ঝাঁজ নিয়ে নিজের জায়গাতেই আছে।

সচিবালয়ে গতকাল বুধবার বাণিজ্যসচিব মো. জাফরউদ্দিন আমদানিকারকদের সঙ্গে বাঙালির রান্নায় অত্যাবশ্যক পণ্য পেঁয়াজের সরবরাহ, মজুত ও দর নিয়ে বৈঠক করেন। কিন্তু বৈঠক থেকে কোনো উপায় বের হয়নি।

গতকালের বৈঠক ছিল ক্ষুদ্র ও মাঝারি আমদানিকারকদের সঙ্গে। যাঁরা কয়েকজন মিলে একটি কনটেইনারে পেঁয়াজ আমদানি করে থাকেন। বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলা হয় ৪০ জন পেঁয়াজ আমদানিকারককে। তবে সবাই উপস্থিত ছিলেন না। সূত্রগুলো জানায়, মন্ত্রণালয় এখন বড় আমদানিকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে, যাঁরা একাই আমদানি করেন কয়েক কনটেইনার পেঁয়াজ।

ব্রিফ না করলেও পরে যোগাযোগ করা হলে বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘আমরা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি। সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক আছে। এক থেকে দেড় মাস পর দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসবে। এদিকে পেঁয়াজের জন্য নতুন নতুন ঋণপত্র (এলসি) খোলা হচ্ছে। দাম ঠিকই কমে আসবে।’

ঢাকার খুচরা বাজারে গতকাল দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে ভারতীয় পেঁয়াজের প্রতি কেজির দাম ছিল ৮৫ থেকে ৯৫ টাকা। মিয়ানমারের পেঁয়াজও ৮০-৯০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।

গতকাল ঢাকার পাইকারি মোকাম শ্যামবাজারে মিয়ানমারের পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৭৫ থেকে ৭৮ টাকায় বিক্রি হয়। আর দেশি কিং জাত ৭৮ থেকে ৮২ এবং দেশি ৮৫ থেকে ৮৮ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। 

পেঁয়াজ আমদানিকারক জহির ট্রেডিং আইল্যান্ডের স্বত্বাধিকারী জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পেঁয়াজ নিয়ে সরকার বেশ আন্তরিক। আমরা এলসি খুলে যাচ্ছি। তবে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর বন্দরে পেঁয়াজ পড়ে থাকে ৭ থেকে ৮ দিন। বিশেষ ব্যবস্থায় ওই দেশের সরকারকে রাজি করিয়ে এই সময়টা কমিয়ে আনা সম্ভব। সচিব বলেছেন, তিনি বিষয়টি দেখবেন।’ 

পেঁয়াজ আমদানিতে বাংলাদেশ সাধারণত ভারতের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু ভারত নিজের বাজার সামাল দিতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। 

তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি ভারত সফরে গিয়ে পেঁয়াজের প্রসঙ্গ তোলেন। ভারত তখন আগের এলসির বিপরীতে কিছু পেঁয়াজ ছাড় করে। তখন দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকার নিচে নেমে আসে, যদিও তা মাত্র তিন দিন স্থায়ী ছিল। 

গতকালের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন আমদানিকারক নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তুরস্ক, মিসর প্রভৃতি দেশ থেকে আমাদের পেঁয়াজ আমদানি করতে উৎসাহিত করছে। নতুন পেঁয়াজ ওঠার খুব বেশি সময় বাকি নেই। এদিকে ভারতও যেকোনো সময় রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে পারে। তখন পেঁয়াজের দাম কমে যাবে এবং আমরা মাঠে মারা যাব। এই ক্ষতি তখন কে পুষিয়ে দেবে?’