বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বাড়তে থাকবে

বিশ্ব অর্থনীতি একযোগে ধীরগতিতে চলছে। বাণিজ্যযুদ্ধ, ব্রেক্সিটজনিত অনিশ্চয়তা, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা—এসব নানা কারণে চলতি বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার ৩ শতাংশ হবে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। কিন্তু এ বছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার তারা প্রাক্কলন করেছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ২০২০ সালের জন্য ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। ১৫ অক্টোবর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাসে এসব কথা বলেছে সংস্থাটি। 

উন্নত দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির হার কমে এলেও নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে তা বেশ ভালো। তবে এসব দেশের ভালো করার কারণ নানাবিধ। আইএমএফ বলছে, নন–কমোডিটি এক্সপোর্টার্স বা যেসব দেশ কাঁচা পণ্য বা প্রাথমিক কৃষিপণ্য রপ্তানি করে না, সেই দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির হার বাড়তে থাকবে। যেমন ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ। আর যেসব দেশ এসব পণ্য রপ্তানি করে, তাদের প্রবৃদ্ধির গতি থমকে যাবে।

২০১৯ সালের জন্য বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার ৩ শতাংশ প্রাক্কলন করেছে আইএমএফ। তারাই বলছে, এটি ২০০৭-০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর সর্বনিম্ন। মূলত মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধকে তারা এই সংকটের জন্য দায়ী করছে। আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, মার্কিন-চীন বাণিজ্য সংঘাতের কারণে ২০২০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক জিডিপি সংকুচিত হবে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। পাশাপাশি বিভিন্ন উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশের অভ্যন্তরীণ নীতির কারণেও প্রবৃদ্ধি হোঁচট খাচ্ছে বলে মনে করে আইএমএফ। সঙ্গে আছে কিছু কাঠামোগত কারণ—নিম্ন উৎপাদনশীলতা এবং উন্নত দেশে বুড়ো মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া।

তবে ২০২০ সালে বিশ্ব অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করে আইএমএফ। সে বছর প্রবৃদ্ধির সম্ভাব্য হার দাঁড়াবে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি বছরের এপ্রিল মাসের পূর্বাভাসে তারা বলেছিল, এটি হবে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে আইএমএফ এই কথা বলে সতর্ক করে দিয়েছে যে প্রবৃদ্ধির নিম্নহার একধরনের সমরূপ হলেও হারানো গতি ফিরে পাওয়া অতটা সমরূপ হবে না। কারণ হিসেবে তারা বলছে, প্রবৃদ্ধির নিম্নগতির কারণ হলো উৎপাদন খাতের সংকোচন এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য হ্রাস। আরেক দিকে চলছে পারস্পরিক পণ্যে শুল্ক আরোপ এবং বাণিজ্যনীতি নিয়ে দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তা।
এতে বিনিয়োগ ব্যাহত হচ্ছে। কমে যাচ্ছে মূলধনি পণ্যের চাহিদা। 

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সাময়িকভাবে লাভবান হলেও সামনে বিপদ আছে বলেই মনে করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘বাণিজ্যযুদ্ধের সুবিধা বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মতো দেশ কিছুদিন পাবে। বাংলাদেশ কমোডিটি এক্সপোর্টার না হওয়ায় বৈশ্বিক শ্লথগতির বাইরে থাকতে পারছে। কিন্তু চাহিদা দীর্ঘ মেয়াদে কমে গেলে বাংলাদেশও আক্রান্ত হবে।’ সে জন্য তিনি ব্যবসার পরিবেশের উন্নতিসহ এফডিআই নিয়ে আসার ওপর জোর দেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উৎপাদনশীল খাত ও বৈশ্বিক বাণিজ্য গতি হারালেও প্রায় সবখানেই সেবা খাত গতি বজায় রেখেছে। এ কারণে উন্নত বিশ্বের শ্রমবাজার একরকম তেজিভাব টিকিয়ে রেখেছে। সেখানে মজুরি ও ভোগব্যয় বাড়ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরো অঞ্চলে সেবা খাত শিথিল হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে আইএমএফ প্রবৃদ্ধির গতি বাড়ানোর পরামর্শও দিয়েছে। তারা বলছে, বাণিজ্য বাধা দূর করে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা হ্রাস এবং অভ্যন্তরীণ নীতিজনিত অনিশ্চয়তা দূর করতে হবে। এতে অর্থনীতির আত্মবিশ্বাস বাড়বে। অর্থাৎ বিনিয়োগ বাড়বে এবং উৎপাদনশীল খাত ও বৈশ্বিক বাণিজ্য গতি পাবে। অবশ্য আইএমএফ সম্প্রতি সম্পাদিত মার্কিন-চীন পরীক্ষামূলক বাণিজ্য চুক্তির দিকে তাকিয়ে আছে। অন্যদিকে জাতীয় সরকারগুলোকে মুদ্রানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাজস্ব নীতি প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছে তারা। 

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ১৫ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আইএমএফ। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন সংস্থাটির প্রধান অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ।