বাড়ছে আমানত, কমছে ঋণ

>
  • ঋণ ও আমানতের প্রবৃদ্ধি
  • সুদহার বেড়ে যাওয়ায় ও সঞ্চয়পত্র কেনায় কড়াকড়ি আরোপের ফলে ব্যাংকে আমানত বাড়ছে
বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক

গত বছরের শুরুতেও ব্যাংক খাতে আমানতের চেয়ে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় দ্বিগুণ। এ সময় ব্যাংক খাতে দেখা দিয়েছিল তারল্যসংকট। তবে পরিস্থিতি এখন ভিন্ন। ব্যাংক খাতে এখন আমানত ও ঋণের প্রবৃদ্ধি প্রায় সমান হয়ে গেছে। মূলত সুদহার বাড়ায় আমানতের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। এতে কেটে গেছে তারল্যসংকটও। আর ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর সতর্কতার কারণে কমে গেছে ঋণের প্রবৃদ্ধিও। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য পর্যালোচনা করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের আগস্টে ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। একই সময়ে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৪ শতাংশ। গত বছরের শুরু থেকেই ব্যাংক খাতে তারল্যসংকট দেখা দেয়। আর সেই সংকট দূর করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন নীতিমালায় পরিবর্তন আনে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর আমানত পেতে সরকারও নীতিমালা পরিবর্তন করে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। ফলে ২০১৮ সালের আগস্টে ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে হয় ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। একই সময়ে ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয় ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

তবে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। ব্যাংকগুলোর আমানত ও ঋণের প্রবৃদ্ধি এখন প্রায় সমান। সর্বশেষ গত আগস্টে আমানতের প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয়েছে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। আর সরকারি-বেসরকারি খাত মিলিয়ে ঋণের মোট প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে নিয়মের কড়াকড়ি আরোপের ফলে ব্যাংকে আমানত কিছুটা বাড়ছে। তবে সেটা খুব বেশি মাত্রায় নয়। আর বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংক খাতে তারল্যসংকট এখনো রয়ে গেছে।

মির্জ্জা আজিজ আরও বলেন, ব্যবসায়ীরা ঋণ নিতে খুব বেশি আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, ঋণের সুদহার দুই অঙ্কের ওপরে। এ ছাড়া বৈশ্বিক অর্থনীতির গতিও মন্থর হয়ে গেছে। তাতে কমছে রপ্তানি আয়ও। এ কারণে ব্যাংক খাতে ঋণের চাহিদা কিছুটা কমে গেছে।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, সুদহার বেড়ে যাওয়ায় আগের চেয়ে বেশি আমানত পাওয়া যাচ্ছে। আর ব্যাংকগুলোর সতর্কতার কারণে ঋণের গতি কমছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্টে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে হয় ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ, গত জুন ও জুলাইয়ে যা ছিল যথাক্রমে ১১ দশমিক ২৯ ও ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ।

এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকেই আমানত ও ঋণের সুদহার ধীরে ধীরে বাড়ছে। গত জানুয়ারিতে আমানতের গড় সুদহার ছিল ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ, গত জুলাইয়ে যা বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। আর ঋণের সুদহার জানুয়ারিতে ছিল ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ, গত আগস্টে যা বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। গড় সুদহার ১০ শতাংশের মধ্যে হলেও অনেক ব্যাংক এখন ১২ থেকে ১৫ শতাংশ সুদে আমানত নিচ্ছে, আর ঋণ দিচ্ছে সর্বোচ্চ ১৮ শতাংশ সুদেও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যাংকগুলো গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পোশাক খাতের ভালো প্রকল্পগুলোতে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে। সরকারি চার ব্যাংক মিলে দুই মাসে একটি প্রকল্পেই সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। তবে অন্য খাতে ঋণের সুদহার এখনো অনেক বেশি।

জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে আমানতের সমান হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে দেশের ব্যবসার গতি কিছুটা মন্থর হয়ে গেছে। মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। আবার গ্রাহকেরা নানা ধরনের সুবিধা পেতে সরকারি ব্যাংকের দিকে বেশি ছুটছেন।