অর্থনীতিতে গতি বাড়াল তিন সেতু

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচলে গতি ফিরিয়ে এনেছে দ্বিতীয় কাঁচপুর, গোমতী ও মেঘনা সেতু, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে অর্থনীতিতে। পণ্য পরিবহনে সময় ও খরচ কমেছে। গতকাল নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে।  ছবি: প্রথম আলো
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচলে গতি ফিরিয়ে এনেছে দ্বিতীয় কাঁচপুর, গোমতী ও মেঘনা সেতু, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে অর্থনীতিতে। পণ্য পরিবহনে সময় ও খরচ কমেছে। গতকাল নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে। ছবি: প্রথম আলো
>দ্বিতীয় কাঁচপুর, গোমতী ও মেঘনা সেতু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্য ও যাত্রীবাহী যান চলাচলে নতুন গতি এনেছে। তাতে বদলে গেছে এ তিন সেতুকে কেন্দ্র করে তীব্র যানজটের চিরচেনা রূপ। কমেছে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবহন খরচ। গতি এসেছে অর্থনীতিতে। আবার এ তিন সেতু তৈরি হয়েছে দেশীয় সিমেন্ট ব্যবহার করে। তিন সেতুর প্রভাব ও তাতে সিমেন্টের ব্যবহার নিয়ে এই প্রতিবেদন।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি হলো দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। এক দশকের বেশি সময় ধরে এই চালিকাশক্তি যেন অর্থনীতির সমৃদ্ধির ভার বইতে পারছিল না। আমদানি-রপ্তানির পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই মহাসড়কেই কাটাতে হয়েছে। এতে খরচ বেড়েছে আমদানি-রপ্তানিকারকের, যা সার্বিকভাবে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচও বাড়িয়েছে।

২০১৬ সালে দুই লেনের মহাসড়কটির চার লেনে উন্নীত করার কাজ শেষ হলেও পরিস্থিতির যেন উন্নতি হচ্ছিল না। ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামমুখী পণ্যবাহী ট্রাকগুলো এই মহাসড়কের প্রধান তিনটি সেতু যেমন, গোমতী, মেঘনা ও কাঁচপুরে আটকে যেত। সেতু তিনটি পাড়ি দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। কারণ, মহাসড়কটি চার লেন হলেও সমান্তরালে নতুন করে সেতু নির্মাণ করা হয়নি। প্রায় চার বছর আগে দ্বিতীয় কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় গত মার্চ মাসে। আর বাকি দুটি সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয় গত মে মাসে। তাতেই গত কয়েক মাসে অর্থনীতির চালিকাশক্তিতে যেন গতি ফিরে এসেছে আলাদিনের চেরাগের মতো। খুব সহজেই পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী গাড়িগুলো পাঁচ–ছয় ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে কিংবা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসা–যাওয়া করতে পারছে। একসময় এই পথ পাড়ি দিতে ১২-১৪ ঘণ্টার নিচে কল্পনাও করা যেত না। প্রসঙ্গত, দেশের ৯০ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের পণ্য চলাচল এই মহাসড়ক ধরেই হয়।

জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন সড়ক ও সেতু নির্মাণবাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত অগ্রাধিকার প্রকল্প। এই প্রকল্পগুলো শেষ করতে পারলে কী উপকার পাওয়া যায়, তা তো দেখতে পাচ্ছি। এটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না।’ তিনি বলেন, সময় ও খরচের মধ্যে চাইলেই যে প্রকল্প শেষ করা যায়, তার প্রমাণ পাওয়া গেল। তিনটি সেতু নির্মাণের ফলে পণ্য ও যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচলে গতি বেড়েছে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে। এখন চট্টগ্রাম বন্দরের প্রবেশমুখে সড়কের যানজট কমাতে পারলে পণ্য চলাচলের সময় আরও কমবে। এ ছাড়া তিনি মহাসড়কের রক্ষণাবেক্ষণ যথাযথভাবে করার তাগিদ দেন।

২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে সেতু তিনটির কাজ শুরু হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর সেতু তিনটির কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের আগেই তা শেষ হয়। মাঝে অবশ্য রাজধানীর হোলি আর্টিজান বেকারির সন্ত্রাসী হামলার কারণে চার মাস কাজ বন্ধ ছিল।

সেতু তিনটি নির্মাণে মোট খরচ ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানের জাইকা ৬ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছে। এই প্রকল্পে প্রস্তাবিত ব্যয়ের তুলনায় ১ হাজার কোটি টাকা কম খরচ হয়েছে। জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওবায়সি করপোরেশন, শিমঝু করপোরেশন, জেএফএফ করপোরেশন ও আইএইচআই ইনফ্রা সিস্টেমস কোম্পানি এই তিনটি সেতু নির্মাণ করেছে। তিনটি সেতুতেই বাংলাদেশি ফ্রেশ সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে।

জানতে চাইলে ফ্রেশ সিমেন্ট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ইউনিক সিমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফ্রেশ সিমেন্টকে বেছে নিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, আন্তর্জাতিক মানের সিমেন্ট প্রস্তুত করা হয় বলেই ফ্রেশ সিমেন্ট ব্যবহার করেছেন জাপানি ঠিকাদার।’

২০১৮ সালে দেশে সিমেন্ট বিক্রি হয়েছে ৩ কোটি ১৩ লাখ টন। গত বছর প্রতি টন সিমেন্টের দাম ছিল ৮ হাজার টাকা। এই হিসাবে সিমেন্টের বাজারের আকার ছিল প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার।

২০০৮ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হয়। দাউদকান্দি থেকে চট্টগ্রাম সিটি গেট পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার চার লেনের সড়কটি ২০১৬ সালের জুলাই মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়। ২০ বছরের যান চলাচলের চাহিদা বিবেচনা করে এই মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে।