পেঁয়াজের সংকট শিগগির কাটছে না

পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারত নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর ২৩ দিন পেরিয়ে গেছে। এ সময়ে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি সেভাবে বাড়েনি। চাহিদার তুলনায় আমদানি কম হওয়ায় বাজারে পেঁয়াজের দামও কমছে না। বড় শিল্পগোষ্ঠীগুলো পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দিলেও এখনো তা বাজারে আসতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। ফলে পেঁয়াজ নিয়ে সংকট শিগগির কাটছে না।

সব মিলিয়ে বিশ্ববাজারের চেয়ে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণের বেশি। যেমন মিয়ানমারের পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪২ টাকায়। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। এর আগে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ৭২ টাকা কেজি দরে। বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। মিসরের পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ২৫ টাকা কেজি দরে, বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকায় আমদানিমূল্যের সঙ্গে বাজারমূল্যের ব্যবধানও বাড়ছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি ও খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, বেসরকারি খাতের পাশাপাশি সরকারি খাতেও কিছু পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করা উচিত। কারণ, পেঁয়াজ আমদানি যত বাড়বে, বাজারেও যৌক্তিক দামে কেনার সুযোগ পাবে ভোক্তারা। আর আমদানির জন্য ব্যবসায়ীদেরও উৎসাহ দিতে হবে। নতুন ফলন না ওঠা পর্যন্ত আমদানির বিকল্প নেই।

ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক দপ্তর গত ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। নিজেদের বাজার সামাল দিতে এই পদক্ষেপ নেয় দেশটি। এরপরই বাংলাদেশসহ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। বাংলাদেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে ৬০ টাকা কেজির পেঁয়াজ হয়ে যায় ১০০ টাকা।

ভারত রপ্তানি বন্ধের পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত তথ্যে দেখা যায়, এ সময়ে মিয়ানমার থেকে ১২ হাজার ৮৪৯ টন, ভারত থেকে ৮ হাজার ৫৬৮ টন (নিষেধাজ্ঞার আগে এসব পেঁয়াজের ঋণপত্র খোলা হয়েছিল), মিসর থেকে ৫৬২ টন এবং চীন থেকে ৫২ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়। সব মিলিয়ে এই ২০ দিনে পেঁয়াজের চাহিদা ছিল ৬২ হাজার টন। আমদানি হয়েছে ২২ হাজার টন। আগের মজুত থাকায় সংকট তীব্র হয়নি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সংকট কাটাতে এ মুহূর্তে দরকার আমদানি বাড়ানো। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে বড় শিল্পগোষ্ঠীগুলোকে পেঁয়াজ আমদানির অনুরোধও করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পর কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠী পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খুলেছে। সিটি গ্রুপ আড়াই হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। চট্টগ্রামের বিএসএম গ্রুপ আড়াই হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খোলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এই দুই গ্রুপের আমদানি দিয়ে বড়জোর দুই দিনের চাহিদা মেটানো যাবে। অন্যরাও পেঁয়াজ আমদানির জন্য খোঁজখবর নিচ্ছে। এসব পেঁয়াজ দেশে পৌঁছাতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। এ পরিস্থিতিতে আমদানিতে বড় গ্রুপ ধারাবাহিকতা না রাখলে সরবরাহ বাড়বে না। 

জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের আমদানি করা পেঁয়াজ আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশে আসবে। তুরস্ক থেকে তাঁরা পেঁয়াজ আমদানি করছেন। 

ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারের পাশাপাশি এ মুহূর্তে চীন, তুরস্ক ও মিসর থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে চাইছেন ব্যবসায়ীরা।