ব্যবসা-বাণিজ্যে আস্থা বেড়েছে

ব্যবসার আস্থা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে জরিপ করেছে বিল্ড। গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে এ জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। রাজধানীর গুলশানের হোটেল আমারিতে।  ছবি: প্রথম আলো
ব্যবসার আস্থা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে জরিপ করেছে বিল্ড। গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে এ জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। রাজধানীর গুলশানের হোটেল আমারিতে। ছবি: প্রথম আলো

দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের চেয়ে পরের ছয় মাসে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে আস্থা বেড়েছে। তবে তাঁরা মনে করেন, আগামী বছরের প্রথমার্ধে আস্থা কিছুটা কমতে পারে। অন্যদিকে চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) ব্যবসার পরিবেশ ও অবকাঠামো সুবিধার ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উন্নতি হয়নি, বরং কমেছে।

চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত সময়ে ব্যবসায়ীদের ব্যবসার আস্থা সূচক ছিল ১০ দশমিক ৩২ শতাংশ, তা জুলাই-ডিসেম্বরে এসে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসায়ীরা কর্মসংস্থানের অবস্থা, দ্রুত লাইসেন্সপ্রাপ্তি, টার্নওভার করের সীমা বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতির কথা বলায় এসব সূচকে উন্নতি হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁরা ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদের হার, অনৈতিক লেনদেন, পরিবহন খরচ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, দুর্নীতি ও নীতির ধারাবাহিকতা না থাকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এসব বন্ধ না হলে আগামী বছরের প্রথমার্ধে ব্যবসার আস্থা সূচকে অবনতি ঘটবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীদের গড়ে তোলা গবেষণা সংস্থা বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রকাশিত ব্যবসার আস্থা সূচকে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০১৯) এমন চিত্রই উঠে এসেছে। রাজধানীর গুলশানের হোটেল আমারিতে গতকাল সোমবার বিকেলে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ। ঢাকা চেম্বার (ডিসিসিআই), মেট্রোপলিটন চেম্বার (এমসিসিআই) এবং চট্টগ্রাম চেম্বারের যৌথ উদ্যোগে ২০১১ সালের অক্টোবরে বিল্ড গঠিত হয়।

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, জানুয়ারি-জুন সময়ে ব্যবসার পরিবেশ সূচকের অবস্থান ছিল ১০ দশমিক ৮০ শতাংশে। জুলাই-ডিসেম্বরে এসে তা কমে ১০ দশমিক ৭৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কারণ হিসেবে জরিপে অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীরা চোরাকারবারি, দুর্নীতি, সিন্ডিকেট ও নীতিসহায়তার ধারাবাহিকতার অভাবের কথা বলেছেন। তাঁরা বলছেন, এসব জায়গায় উন্নতি না হলে আসছে বছর ব্যবসার পরিবেশ আরও খারাপ হবে। অন্যদিকে অবকাঠামো সূচকে অবস্থান ১০ দশমিক ৯২ শতাংশ থেকে কমে ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ হয়েছে। পরিবহনব্যবস্থার উন্নতি না হওয়া, ব্যয় বৃদ্ধি, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এ সূচকে অবনতি হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের আশা, ভবিষ্যতে এটি ভালো হবে।

আস্থা সূচকের জরিপে অংশে নিতে ৩ হাজার ৪৫৪ প্রতিষ্ঠানকে অনলাইনে প্রশ্ন পাঠায় বিল্ড। তবে তাদের মধ্যে মাত্র ৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান উত্তর দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ধারণাভিত্তিক এই জরিপে অংশ নেয় আড়াই শ প্রতিষ্ঠান। বিল্ড এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো ব্যবসায়ের আস্থা সূচক প্রকাশ করল।

বিল্ডের ব্যবসার আস্থা সূচকে পরিবেশ ও অবকাঠামো ছাড়াও দেশের অথনৈতিক অবস্থা, ব্যবসা সহায়ক আইনকানুন, সহায়ক করব্যবস্থা, ঋণপ্রাপ্তি এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসা সূচকে অবস্থান প্রকাশ করা হয়েছে।

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের চেয়ে পরের ছয় মাসে ব্যবসাসহায়ক আইনকানুন সূচকের অবস্থান ১০ দশমিক ১২ শতাংশ থেকে বেড়ে ১১ দশমিক ১১ শতাংশ হয়েছে। একইভাবে সহায়ক করব্যবস্থা সূচকে অবস্থান ১০ দশমিক ০৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ১১ দশমিক ১৬ শতাংশ হয়েছে। ঋণপ্রাপ্তি সূচকে অবস্থান ১০ দশমিক ০২ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১০ দশমিক ৯৭ শতাংশ। আর আন্তর্জাতিক ব্যবসা সূচকের অবস্থান ১০ দশমিক ০৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ১০ দশমিক ৬০ শতাংশ হয়েছে।

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বর্তমানে আরজেএসির মাধ্যমে ব্যবসার অংশীদারত্ব (শেয়ার) স্থানান্তর করতে অনেক সময় লাগছে। এটি বড় সমস্যা। কিন্তু উদ্যোগ নিলেই সমস্যাটি খুব দ্রুতই সমাধান করা যায়। তিনি বলেন, ব্যাংকঋণ মানেই খেলাপি। তবে খেলাপি ঋণ বাংলাদেশের জন্য নতুন কিছু নয়।

সাবেক এই অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, আগামী পাঁচ বছর বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানের মতো একইভাবে এগিয়ে যাবে। তবে বাংলাদেশের মূল সমস্যা দারিদ্র্য। বর্তমানে দেশের ৩ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। এটিকে কমিয়ে আনতে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে উদ্যোগ নিতে হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘ব্যবসার অংশীদারত্ব (শেয়ার) স্থানান্তরে সময় কমানোর ব্যবস্থা নেব।’ তিনি বলেন, সহজে ব্যবসা করার সূচকে ৮ ধাপ উন্নতি বড় কিছু নয়। তবে এটি ভালো লক্ষণ। আমাদের র‍্যাঙ্কিং অবশ্যই ১০০-র মধ্যে আসতে হবে। সে জন্য আমরা কাজ করছি।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ফরেন চেম্বারের সভাপতি শেহজাদ মুনিম, মেট্রো চেম্বারের সহসভাপতি গোলাম মঈনুদ্দিন, বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম প্রমুখ। প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন বিল্ডের অর্থনীতিবিদ নুসরাত জাহান।