দ্রুততম সময়ে শ্রম বাজার খুলতে একমত ঢাকা-কুয়ালালামপুর

মালয়েশিয়ার সঙ্গে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। কুয়ালালামপুর, ৬ নভেম্বর। ছবি: সংগৃহীত
মালয়েশিয়ার সঙ্গে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। কুয়ালালামপুর, ৬ নভেম্বর। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের কর্মীদের জন্য দ্রুততম সময়ে বাজার খোলার ঐকমত্যের মধ্য দিয়ে মালয়েশিয়ায় দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শেষ হয়েছে। তবে বাজার খোলার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত না হলেও ন্যূনতম খরচে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে দুই দেশ একমত হয়েছে।

আজ বুধবার দেশটির রাজধানী কুয়ালালামপুরে এই বৈঠক হয়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশের কর্মী পাঠানো বন্ধ রয়েছে। মূলত বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার একটি সংঘবদ্ধ চক্রের যোগসাজশে ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ আর অনৈতিক ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া।

বৈঠকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বাংলাদেশের ৭-সদস্যের এবং মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম কুলাসেগারান তাঁর দেশের ৮-সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।

বৈঠকে নভেম্বরের ২৪ ও ২৫ তারিখ ঢাকায় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরের দফা আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঢাকায় অনুষ্ঠেয় বৈঠকের পর বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো আবার শুরু হবে বলে দুই পক্ষ আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে আজকের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে ন্যূনতম অভিবাসন ব্যয় নিশ্চিত করা, কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়ায় দুই দেশের বেশি সংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সিকে যুক্ত করা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, কর্মীর সামাজিক ও আর্থিক সুরক্ষা এবং তথ্য ভান্ডারের পরিসংখ্যান বিনিময়ের বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বিশেষত একেবারে কম খরচে কর্মী পাঠানো নিশ্চিত করা এবং কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিড়ম্বনা দূর করতে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া যাত্রার আগে মাত্র একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার বিষয়ে দুই পক্ষ রাজি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের চাহিদার কথা সভায় বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

যে কারণে বাজার বন্ধ
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই দেশের মধ্যে জি টু জি প্লাস (সরকারি-বেসরকারি) সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। কর্মী নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়া হয় অনলাইনে। এর এক বছর পর ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে কর্মী পাঠানো শুরু হয়। এর আগে পুরোনো পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে যেকোনো রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাতে পারত।

২০১৭ সালে নতুন পদ্ধতিতে বাজার খোলার পর দুই বছরে মালয়েশিয়ায় গেছেন ২ লাখ ৭৫ হাজার ৭১৪ জন। আর বাজার বন্ধ থাকায় এ বছরের প্রথম ৯ মাসে গেছেন মাত্র ৩৬০ জন। এ বছর যারা মালয়েশিয়ায় গেছেন, তাদের সবাই বাজার বন্ধ ঘোষণার আগেই কাজের অনুমতি পেয়েছিলেন।

মূলত বাংলাদেশের ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি ও মালয়েশিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানের একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ আর অনৈতিক ব্যবসা পরিচালনার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ।

অনৈতিক ব্যবসা পরিচালনা যুক্ত ছিল ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেড বাংলাদেশের ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি। আর মালয়েশিয়ার চক্রের হোতা ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মালয়েশীয় নাগরিক মোহাম্মদ আমিন বিন আবদুন নূর। তিনি সেখানকার প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও সাবেক কর্মকর্তাদের নিয়ে সিনারফ্ল্যাক্স নামে একটি কোম্পানি তৈরি করেন। এই কোম্পানিকেই বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেওয়ার দায়িত্ব দেয় মালয়েশিয়ার সরকার। তারা বাংলাদেশের নির্দিষ্ট ১০ এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী সংগ্রহ করে।