শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জে ৯৫% হিসাব খোলা হয় মুঠোফোনে

চীনের শেনজেনে অনুষ্ঠিত পুঁজিবাজারবিষয়ক দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে অংশ নেয় ডিএসইর চেয়ারম্যান আবুল হাশেমের (প্রথম সারিতে বাঁ থেকে চতুর্থ) নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। গত বৃহস্পতিবার শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জে।  ছবি: ডিএসইর সৌজন্যে
চীনের শেনজেনে অনুষ্ঠিত পুঁজিবাজারবিষয়ক দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে অংশ নেয় ডিএসইর চেয়ারম্যান আবুল হাশেমের (প্রথম সারিতে বাঁ থেকে চতুর্থ) নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। গত বৃহস্পতিবার শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জে। ছবি: ডিএসইর সৌজন্যে

বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হলে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। চীনসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে শেয়ারবাজারসহ আর্থিক খাতে তথ্যপ্রযুক্তির (ফাইন্যান্সিয়াল টেকনোলজি বা ফিনটেক) ব্যবহার খুবই সীমিত। পাশাপাশি রয়েছে সুশাসন ও বিনিয়োগযোগ্য ভালো শেয়ারের ঘাটতি।

চীনের শেনজেনে অনুষ্ঠিত ‘পুঁজিবাজার ও তথ্যপ্রযুক্তি’ বিষয়ক দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের শেষ দিনে শুক্রবার বক্তারা এসব কথা বলেন। চীনের শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এ সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনের সহ–আয়োজক ছিল চীনের কিংডম টেকনোলজি ও বাংলাদেশের এশিয়ান টাইগার ক্যাপিটাল পার্টনার্স।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে অনুষ্ঠিত এক কর্ম–অধিবেশনে চীনা প্রতিষ্ঠান কিংডমের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চীনের শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের মোট বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ১৭ কোটি ৬০ লাখ, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ। এসব বিনিয়োগকারীর ৯৫ শতাংশই বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব খুলেছেন মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে। আর শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জে প্রতিদিন যে লেনদেন হয়, তার শতভাগই হয় অনলাইনের মাধ্যমে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ অ্যাপসের মাধ্যমে আর ৩০ শতাংশ বিনিয়োগকারী কম্পিউটার ব্যবহার করে প্রতিদিনের লেনদেন করে থাকেন। সেখানে বিও হিসাবের ভিত্তিতে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশের কম মানুষ শেয়ারবাজারের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। সক্রিয় বিনিয়োগকারীর হিসাব ধরে হলে এ দেশের মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশের কম শেয়ারবাজারের সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের ৯০ শতাংশের বেশি শেয়ার কেনাবেচার আদেশ (অর্ডার) দেন কাগজে ও টেলিফোনের মাধ্যমে।

সম্মেলনের শেষ দিনের উদ্বোধনী বক্তব্যে কিংডম টেকনোলজির প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী চেয়ারম্যান ঝু মিনবো বলেন, প্রযুক্তির পরিবর্তন চীনের নাগরিকদের শুধু অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিই এনে দেয়নি, জীবনমানকে উন্নত করেছে। তিনি বলেন, ১৯৭৮ সালেও শেনজেন অঞ্চলটি ছিল জেলেদের ছোট্ট একটি গ্রাম। কিন্তু আজ তা বিশ্বের আধুনিকতম শহরগুলোর একটি। তিনি আরও বলেন, ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলো যেখানে হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, ফেসবুককে শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে, সেখানে চীন নিজেদের উইচ্যাটকে শুধু যোগাযোগের মাধ্যম করে রাখেনি, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও প্রতিদিনের ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয় সেবা গ্রহণের মাধ্যম হিসেবে উইচ্যাট ব্যবহার করছে। বর্তমানে উইচ্যাট মোবাইল ওয়ালেট হিসেবেও চীনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের আয়োজন ছিল হোটেল হিলটন শেনজেন সাকো নানহাইয়ে। এদিনের কর্ম–অধিবেশনের শিরোনাম ছিল ‘দ্য নিউ ফিউচার-২০১৯ বা নতুন ভবিষ্যৎ-২০১৯’। উদ্বোধনী বক্তব্যে কিংডম টেকনোলজির প্রতিষ্ঠাতা ঝু মিনবো বলেন, বিশ্বজুড়েই প্রযুক্তি দ্রুত বদলে যাচ্ছে। নতুন নতুন আবিষ্কার প্রতিদিনই নতুন চ্যালেঞ্জকে সামনে নিয়ে আসছে। তাই এখন আর্থিক খাতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে, যা জীবনকে সহজ করে দিচ্ছে। কারখানার উৎপাদন থেকে শুরু করে শেয়ারবাজার, আর্থিক খাতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। তাই আগামী দিনে ব্যবসায় টিকে থাকতে হলে প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর কোনো বিকল্প নেই।

 বাংলাদেশের শতাধিক প্রতিনিধি ছাড়াও চীনের আর্থিক খাত, শেয়ারবাজার, প্রযুক্তি ও নাগরিক সেবা প্রদানকারী তিন শতাধিক কোম্পানির প্রতিনিধি দ্বিতীয় দিনের বিভিন্ন কর্ম–অধিবেশনে অংশ নেন। কর্ম–অধিবেশনের ফাঁকে ফাঁকে চলে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় আলোচনা।

দ্বিতীয় দিনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ডিএসইর সভাপতি অধ্যাপক আবুল হাশেম বলেন, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশও তথ্যপ্রযুক্তিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে দেওয়া হচ্ছে নানা ধরনের কর সুবিধা। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে গড়ে তোলা হচ্ছে হাইটেক পার্ক। তথ্যপ্রযুক্তি খাতসহ বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রয়েছে কর রেয়াত ও কর অবকাশ সুবিধা, বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফা নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। তাঁর বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তিসহ শেয়ারবাজারে চীনের বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানান।

সম্মেলনের শেষ দিনের সর্বশেষ কর্ম–অধিবেশনে ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান বলেন, ‘চীনের শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জে প্রতিদিন কয়েক বিলিয়ন ইউয়ানের লেনদেন হচ্ছে। এটি সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের ফলে। আমাদের দেশে ১৩ কোটির বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী রয়েছে। যাদের বেশির ভাগই তরুণ। অথচ এসব মোবাইল ব্যবহারকারীকে আমরা শেয়ারবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পারিনি। এ কারণে শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের তুলনায় আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি। তাই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়াতে হলে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।’

শেনজেনে আয়োজিত দুই দিনের সম্মেলনের অন্যতম অংশীদার বাংলাদেশের এশিয়ান টাইগার পার্টনার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতি ইসলাম বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার যেকোনো ব্যবসার খরচ কমাতে বড় ধরনের সহায়তা করে। অন্যদিকে ব্যবসার মুনাফা বাড়ে। পৃথিবীজুড়ে এখন গ্রাহকেরা প্রযুক্তিনির্ভর কোম্পানির দিকেই বেশি ঝুঁকছে। যেসব আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকবে, সেসব প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়বে।