আংশিক পচা পেঁয়াজের দামও ১২০ টাকা
রাজধানীর তেজকুনিপাড়ার গৃহিণী শাহিদা বেগম তেজগাঁও-বিজয় সরণি উড়াল সেতুর নিচের বাজারে পেঁয়াজ ও আলু কিনতে এসেছেন। এই বাজারে ভালো পেঁয়াজের পাশাপাশি পাওয়া যায় ভাঙা, আংশিক পচা ও ময়লাযুক্ত পেঁয়াজ। দুদিন আগেও এই বাজারে পচা-ময়লা পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। শাহিদা বেগম আজ দেখলেন, সেই পেঁয়াজের দাম এখন ১০০ থেকে ১২০ টাকা। তিনি আর পেঁয়াজ কেনেননি।
প্রথম আলোকে শাহিদা বললেন, ‘জিনিসের দাম বাড়ে আর আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়ে। বিক্রেতাদের আর দোষ কি— তারাও তো বেশি দামে কিনে আনতাছে।’ তিনি আরও বললেন, ‘যাদের টাকা আছে তাদের তো চিন্তা নাই। অসুবিধা শুধু আমাগো মতো মানুষের।’
এই বেহাল পেঁয়াজের দাম ছিল ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। তেজকুনিপাড়ার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কারওয়ান বাজার থেকে এই পেঁয়াজ কেনেন। তাঁরা সেই পেঁয়াজ শুকিয়ে এবং পরিষ্কার করে বিক্রি করেন। বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল, দেখতে ভালো না হলেও এই পেঁয়াজেরও দাম বেড়েছে— ছোটটা ১০০ এবং বড়টা ১২০ টাকা। ব্যবসায়ীরা সরবরাহ কম হওয়ার অজুহাত দেখাচ্ছেন।
এই বাজারে গত এক বছর ধরে পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্য বিক্রি করেন সাথী বেগম। তিনি বললেন, ‘এই ময়লা পেঁয়াজ আমরা কারওয়ান বাজার থেইকা কিনি। পাইকারি দাম, কারওয়ান বাজার থেকে এইখান পর্যন্ত আনতে প্রতি কেজিতে খরচ পড়ে ৯০ টাকা। সেই পেঁয়াজ বেচি ১০০ আর ১২০ টাকায়। একটু বড় পেঁয়াজের দাম ১২০ টাকা কেজি।’ তিনিও স্বীকার করলেন এই কিছু অংশ পচা, ময়লাযুক্ত ও ভাঙা পেঁয়াজের দাম দুদিন আগেও ৪০ টাকা দরে তিনি বিক্রি করেছেন। কিন্তু সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়ে গেছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আকবর ফকিরও এই পচা-ময়লা পেঁয়াজ বিক্রি করেন। তিনি বললেন, ‘আমি কারওয়ান বাজার থেকে প্রতি পাল্লা (পাঁচ কেজি) পেঁয়াজ ৪০০ টাকায় কিনি। বিক্রি করি ৯০ ও ৯৫ টাকা দরে।’ তার কাছ থেকে সেই পেঁয়াজ কিনতে এসেছেন শাহীনবাগের বাসিন্দা রওশন আরা বেগম। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, ‘কয়েক দিন আগেও ভালো পেঁয়াজ কিনছি ৩০ থেইকা ৪০ টাকায়। সেই পেঁয়াজের দাম বাড়তে বাড়তে এখন ১৫০ থেইকা ১৮০ টাকা। অনেক কষ্টে আছি। আমরা কি খাই, ক্যামনে চলি, কয় ট্যাকা আয় করি— তা খালি আমরাই জানি।’
আরেক ব্যবসায়ী সেলিম আহমেদ জানালেন, কারওয়ান বাজার থেকে সাধারণ দেশি পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা দরে। খুচরা বাজারে তাঁরা সেই পেঁয়াজ ১৮০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তিনি বললেন, ‘যারা আগে কমে কিনেছে তারাই এর চেয়ে কিছুটা কম দামে বিক্রি করতে পারছে।’
কারওয়ান বাজারে গিয়ে জানা গেল, মিশরের পেঁয়াজের পাইকারি দাম ১৩০ টাকা, খুচরা দাম ১৫০ টাকা। মিয়ানমারের পেঁয়াজের পাইকারি দাম ১৪০ টাকা, খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। আর খুচরা বাজারে প্রতি কেটি দেশি পেঁয়াজের দাম ১৭০ টাকা হলেও, পাইকারি বাজারে তা ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।