চারটি অধিকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব এসজেডএসইর

লিউ ফুজং, আন্তর্জাতিক বিভাগের পরিচালক, শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ
লিউ ফুজং, আন্তর্জাতিক বিভাগের পরিচালক, শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের যেকোনো ধরনের তথ্য জানার অধিকারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয় চীনের শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ (এসজেডএসই)। মুঠোফোনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট অ্যাপস ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীরা এ তথ্য জানতে পারেন। এ ছাড়া প্রথাগত গণমাধ্যম, উইচ্যাট, ইন্টারনেট এবং উইয়াবু নামের বিশেষ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কোম্পানি সম্পর্কে যেকোনো তথ্য জানার ব্যবস্থা রয়েছে।

বিনিয়োগকারীদের চারটি অধিকারকে সব সময় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ। সেগুলো হলো রাইট টু এডুকেশন বা শিক্ষার অধিকার, রাইট টু নো বা জানার অধিকার, রাইট অব ইনকোয়ারি বা তদন্তের অধিকার ও রাইট টু ভোট বা ভোটের অধিকার। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীদের এসব অধিকার নিশ্চিত করা হয় বলে জানালেন বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ স্টক এক্সচেঞ্জটির আন্তর্জাতিক বিভাগের পরিচালক লিউ ফুজং। সম্প্রতি চীনের শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ পরিদর্শনকালে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফুজং বলেন, বাজারের কারসাজি রোধে ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সম্পর্কে সব ধরনের তথ্য বিনিয়োগকারীদের সরবরাহ করা হয়। যাতে করে বিনিয়োগকারীরা তালিকাভুক্ত কোম্পানি সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা পান। তাঁর মতে, তথ্য-উপাত্ত ব্যবস্থাপনা ও যথাসময়ে তা প্রকাশ এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তা সহজে পৌঁছে দিতে পারলে তাতে বাজারের স্বচ্ছতা বাড়ে।

সাক্ষাৎকারে ফুজং আরও বলেন, শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে। যার মাধ্যমে বাজারে যেকোনো ধরনের অনিয়ম তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করার পাশাপাশি যথাযথ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।

শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের শীর্ষ পর্যায়ের এই কর্মকর্তা মনে করেন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থা উন্নত করে এবং দক্ষতার সঙ্গে তথ্য-উপাত্ত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জেও (ডিএসই) কারসাজির ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব।

চীনের এই শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ মিলে গত বছর ২৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা কিনে ডিএসইর কৌশলগত অংশীদার হয়েছে। এ জন্য স্টক এক্সচেঞ্জ দুটি মিলে বিনিয়োগ করেছে প্রায় ৯৬২ কোটি টাকা। ডিএসইকে কারিগরি সহায়তা প্রধানের পাশাপাশি বাংলাদেশের বাজারে চীনের বিনিয়োগ বাড়াতেও কাজ করছে শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ। লিউ ফুজং বলেন, বাংলাদেশের বাজারের প্রতি চীনা বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়াতে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানি নিয়ে একটি সূচক তৈরির কাজ চলছে।

এসজেডএসইর এই শীর্ষ কর্মকর্তার কাছে সাংবাদিকেরা জানতে চান ইনসাইডার ট্রেডিং ও কারসাজি রোধে সংস্থাটিতে কী ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে? জবাবে ফুজং বলেন, যখন কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয় তখন ওই কোম্পানির উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে শেয়ারধারী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার তথ্য ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর সংগ্রহ করা হয়। ওই জাতীয় পরিচয়পত্রে ওই ব্যক্তির বিও হিসাব (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) থেকে শুরু করে ব্যাংক হিসাব নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য থাকে। যখন ওই কোম্পানি সম্পর্কে কোনো সন্দেহ দেখা দেয় তখন উপকারভোগীদের লেনদেনসংক্রান্ত বিষয়ে তদারকি বাড়ানো হয়।

বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বেশ কিছুদিন ধরে মন্দাভাব চলছে। এ জন্য বাজারসংশ্লিষ্টদের অনেকে তারল্যসংকটকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন। এ বিষয়ে ফুজং বলেন, যখন বিনিয়োগকারীরা তালিকাভুক্ত কোম্পানি সম্পর্কে সহজে সব ধরনের তথ্য পান, তখন তাঁদের পক্ষে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব সহজ হয়। বিনিয়োগকারীদের বাজারমুখী করা গেলে অনেক সমস্যা আপনা–আপনিই কমে আসে। তাই বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী বাড়াতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের সহজে তথ্য পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সম্পর্কে যেকোনো তথ্য জানতে চাইতে পারেন বিনিয়োগকারীরা। স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে আমরা কোম্পানির কাছে বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন জিজ্ঞাসা সম্পর্কিত প্রশ্নগুলো পাঠিয়ে দিই এবং তাদের জবাব সংগ্রহ করি। কোম্পানির পক্ষ থেকে জবাব পাওয়ার পর তা আমাদের পক্ষ থেকে পর্যালোচনা শেষে বিনিয়োগকারীর কাছে পাঠানো হয়।