দেড় মাসে আকাশপথে এল ১৬ হাজার কেজি পেঁয়াজ

শুধু স্থলবন্দর আর সমুদ্রবন্দর দিয়েই পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে না। পেঁয়াজ আসছে আকাশপথেও। পরিমাণে অবশ্য খুবই কম। ভারত রপ্তানি বন্ধের পর গত দেড় মাসে আকাশপথে আমদানি হয়েছে ১৬ হাজার ৩৭৯ কেজি পেঁয়াজ।

আকাশপথে শুধু ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। অন্য বিমানবন্দরগুলো দিয়ে আমদানি হয়নি। আকাশপথে ভাড়া বেশি হওয়ায় পেঁয়াজ আমদানি হয় কম। যেসব পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে তা শুধু অভিজাত শপিং মলে থাকা রেস্তোরাঁ ও পাঁচ তারকা হোটেলের ব্যবহারের জন্যই আনা হয়েছে।

শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে আকাশপথে আমদানি হওয়া পণ্য শুল্কায়ন করে ঢাকা কাস্টম হাউস। ঢাকা কাস্টমস এর সহকারী কমিশনার (প্রিভেনটিভ) সাজ্জাদ হোসেন আজ শনিবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, পণ্য পরিবহনকারী উড়োজাহাজে করে সামান্য পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি হয়। বিদেশি সবজিসহ নানা পণ্যের সঙ্গে অল্প পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে।

ঢাকা কাস্টমস সূত্র জানায়, আকাশপথে ছয়টি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এই ছয় দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ এসেছে থাইল্যান্ড থেকে। থাইল্যান্ডের কৃষিপণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘থাই বিমসটেক ইন্টারন্যাশনাল কোং লিমিটেড’ এই পেঁয়াজ রপ্তানি করেছে। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, স্লোভেনিয়া, জাপান, মিশর থেকেও আমদানি হয়েছে। প্রতি চালানে সর্বনিম্ন ২০ কেজি পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। আবার এক চালানে ৭০০ কেজি পেঁয়াজ আমদানির তথ্য রয়েছে।

আকাশপথে পণ্যের আমদানিকারকও হাতেগোনা। ঢাকার ১২টি প্রতিষ্ঠান আকাশপথে পেঁয়াজ আমদানি করেছে। এসব প্রতিষ্ঠান পাঁচ তারকা হোটেল, বিশেষায়িত রেস্তোরাঁ ও সুপারশপের জন্য পণ্য আমদানি করে সরবরাহ করে। জানতে চাইলে আমদানিকারক ঢাকার নুর ট্রেড হাউসের কর্ণধার খালেদ নুর প্রথম আলোকে বলেন, আকাশপথে যেসব পেঁয়াজ আনা হয় সেগুলো সাদা ও লাল রঙের বড় পেঁয়াজ। এসব পেঁয়াজে ঝাঁজ কম। এসব পেঁয়াজ রান্নার কাজে ব্যবহার হয় না। শুধু সালাদ হিসেবে ব্যবহার হয়। রেস্তোরাঁ ও অভিজাত হোটেলের চাহিদা অনুযায়ী এসব পেঁয়াজ আমদানি হয়।

আমদানিকারকেরা জানান, আকাশপথে ভাড়া বেশি। প্রতি কেজি পণ্য পরিবহনের জন্য দূরত্বভেদে এক থেকে দুই ডলার ভাড়া দিতে হয়। চিটাগাং ফ্রেশ ফ্রুট অ্যান্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও আমদানিকারক মাহবুব রানা প্রথম আলোকে বলেন, মধ্যপ্রাচ্য বা কাছাকাছি দেশ থেকে আমদানি করতে হলে পরিবহন বাবদ প্রতি কেজিতে ন্যূনতম ১০০ টাকার মতো খরচ পড়বে।

বেসরকারি উড়োজাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, যাত্রী পরিবহনকারী ছোট উড়োজাহাজে তিন থেকে চার টন এবং বড় উড়োজাহাজে ১০-১৫ টন পণ্য আনা যায়। পণ্য পরিবহনকারী উড়োজাহাজে ৪০ থেকে শতাধিক টন পরিবহন হয়। প্রতিদিন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টন পণ্য পরিবহন হয়।

বাজারে এখন পেঁয়াজের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা। পেঁয়াজের বাজারে দাম এত বেড়েছে যে উড়োজাহাজে কাছাকাছি দেশ থেকে উচ্চ ভাড়া দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করলেও বাজারমূল্যের চেয়ে আমদানি খরচ কম পড়বে। বিশ্ববাজারে পেঁয়াজের যা দাম তাতে আকাশপথে পেঁয়াজ আমদানিতে খরচ পড়তে পারে কেজিপ্রতি ১৫০ টাকা।

অভিজাত হোটেল-রেস্তোরাঁর জন্য আকাশপথে পেঁয়াজ আমদানি হলে এবার সাধারণ মানুষের জন্যও আকাশপথে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, পেঁয়াজের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে পণ্য পরিবহনকারী উড়োজাহাজে করে পেঁয়াজ আমদানি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে তুরস্ক থেকে, এস আলম গ্রুপ মিসর থেকে এবং আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আফগানিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে জরুরি ভিত্তিতে পণ্যবাহী উড়োজাহাজের মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি করবে। এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ বাজারে সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।