বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও পাবেন স্বল্প সুদে গৃহঋণ

স্বল্প সুদে এবার গৃহনির্মাণ ঋণ পেতে যাচ্ছেন সরকারি বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরাও। সরকারি কর্মচারীদের মতো তাঁদেরও ঋণ দেওয়া হবে ২০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। সর্বোচ্চ ২০ বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

আর বাজারে সুদের হার যা–ই থাকুক না কেন, শিক্ষক-কর্মচারীদের পরিশোধ করতে হবে ৫ শতাংশ হারে। ৫ শতাংশ সুদ পরিশোধের পর বাকি সুদের অর্থ সরকার ঋণগ্রহীতাদের ভর্তুকি হিসেবে দেবে। গৃহঋণ নিয়ে সরকারি কর্মচারীরাও এই হারেই সুদ পরিশোধ করে আসছেন। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের গৃহনির্মাণ ঋণ সুবিধা দেওয়ার জন্য আলাদা প্রজ্ঞাপন জারির সিদ্ধান্ত হয়। অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনসহ (ইউজিসি) বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিদের একটি দল উপস্থিত ছিল। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি এ এস এম মাকসুদ কামাল। 

অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, আবেদনের বয়সসীমার দিক থেকে সরকারি কর্মচারীদের তুলনায় একটু বেশি সুবিধা ভোগ করবেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। এটা তাঁরা ভোগ করবেন চাকরির বয়সসীমার কারণেই। যেমন সরকারি কর্মচারীদের চাকরির বয়সসীমা ৫৯ বছর পর্যন্ত। তাই তাঁরা ঋণ আবেদন করতে পারেন ৫৮ বছর বয়স পর্যন্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরির বয়সসীমা ৬৫ বছর। তাই তাঁদের সুযোগ দেওয়া হবে ৬৪ বছর বয়স পর্যন্ত। 

অর্থ বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মচারীরা জানান, শিক্ষক-কর্মচারীদের ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের জন্য শিগগির অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে একটি সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর তা ফিরে আসবে অর্থ বিভাগে। অর্থ বিভাগ তখন একটি প্রজ্ঞাপন জারি করবে। কাজটি হতে সব মিলিয়ে পুরো নভেম্বর মাস লেগে যেতে পারে। 

শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন সূত্রে জানা গেছে, দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৪০টির মতো। এগুলোতে শিক্ষক রয়েছে ১৩ থেকে ১৪ হাজার, আর কর্মচারী রয়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার। এর বাইরে ইউজিসিতেও কর্মচারীও রয়েছে। সব মিলিয়ে শিক্ষক-কর্মচারী হবে ২০ হাজারের মতো। 

অর্থ বিভাগ ‘সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহঋণ প্রদান নীতিমালা’ জারি করে গত ৩০ জুলাই। নীতিমালায় এ ঋণ পাওয়ার জন্য ‘সরকারি কর্মচারী’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তা–ও উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, গৃহঋণ তাঁরাই পাবেন, যাঁরা সরকারের আওতাধীন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও কার্যালয়গুলোতে শুধু স্থায়ী পদের বিপরীতে নিয়োগ পাওয়া সামরিক ও বেসামরিক কর্মচারী। 

নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি, পৃথক বা বিশেষ আইনের মাধ্যমে তৈরি প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত কর্মচারীরা এ নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত হবে না। সে হিসেবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা এ ঋণ সুবিধার বাইরে রয়েছেন। 

জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখন প্রজ্ঞাপনের অপেক্ষায় আছি।’ 

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের মাস অর্থাৎ ২০১৮ সালের নভেম্বরে অর্থ বিভাগ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের স্বল্প সুদে গৃহনির্মাণ ঋণ দেওয়ার সুবিধা দেওয়ার কথা জানিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি মাসে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি হবে। তবে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের এই সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা হবে কি না, অর্থ বিভাগের কেউ তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। 

এই গৃহনির্মাণ ঋণ দিতে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের (বিএইচবিএফসি) সঙ্গে আলাদা সমঝোতা স্মারক বা এমওইউ সই করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গৃহনির্মাণ নীতিমালা শুরুর দিকে শুধু বেসামরিক সরকারি কর্মচারীদের জন্য করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরে সামরিক বাহিনীকেও এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। 

মাঝখানে নিম্ন আদালতের বিচারকদেরও স্বল্প সুদের এই গৃহঋণ সুবিধার আওতায় এনে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।