মিয়ানমারের পেঁয়াজ নষ্ট হচ্ছে ট্রলারে-আড়তে

চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে সড়কের ওপর এভাবে স্তূপ করে রাখা হয় পচা পেঁয়াজের বস্তা। শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টা। ছবি: সৌরভ দাশ
চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে সড়কের ওপর এভাবে স্তূপ করে রাখা হয় পচা পেঁয়াজের বস্তা। শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টা। ছবি: সৌরভ দাশ

মিয়ানমারের পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকা থেকে ট্রাকে করে প্রথমে সে দেশের আকিয়াব বন্দরে নেওয়া হয়। এরপর কাঠের ট্রলারে পেঁয়াজ বোঝাই করা হয়। নদীপথে ১২ ঘণ্টার মধ্যে তা টেকনাফ স্থলবন্দরে এসে পৌঁছায়। টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে খালাস করে তা ট্রাকে করে সারা দেশে পরিবহন করা হয়। এতে দুই থেকে তিন দিন সময় লেগে যায়। মূলত এই সময়ে গরমে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবার কাঠের ট্রলারে নিচের স্তরে থাকা পেঁয়াজে পানি লেগে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেটে পেঁয়াজের আড়তে পচা পেঁয়াজের উৎকট গন্ধ। আড়তের সামনে পচে যাওয়া পেঁয়াজের বস্তার স্তূপ। রাতে এসব পেঁয়াজ শ্রমিকেরা সড়কে নিয়ে ফেলে দিচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার ও আজ শনিবার খাতুনগঞ্জে এই চিত্র দেখা গেছে।

চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. খালেদ আহসান বৃহস্পতিবার টেকনাফ স্থলবন্দরে এক আমদানিকারকের কাছ থেকে দুই গাড়ি পেঁয়াজ কিনেছেন। কিন্তু আড়তে আনার পর দেখেন, বেশির ভাগ পেঁয়াজই নিম্নমানের। আজ তিনি প্রথম আলোকে জানান, কমবেশি প্রতিটি গাড়িতে পচা পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। পচে যাওয়া পেঁয়াজ বাছাই করে ফেলে দিয়েছেন তিনি।

আড়তদারেরা পেঁয়াজ ফেলে দেওয়ার পর সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা তা সরিয়ে নিচ্ছেন। সিটি করপোরেশনের বক্সিরহাট ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক আহমদ ছফা আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে জানান, প্রতি সপ্তাহেই চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ থেকে পচা পেঁয়াজ সরিয়ে ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তিনটি গাড়িতে করে প্রায় চার টনের মতো পেঁয়াজ আরেফিন নগরে ময়লার ভাগাড়ে ফেলা হয়েছে।

গরমে ও কাঠের ট্রলারে নিচের স্তরে থাকা পেঁয়াজে পানি লেগে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টা। ছবি: সৌরভ দাশ
গরমে ও কাঠের ট্রলারে নিচের স্তরে থাকা পেঁয়াজে পানি লেগে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টা। ছবি: সৌরভ দাশ

আজ শনিবার সকালে কর্ণফুলী নদীর তীরে ফিরিঙ্গিবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নিম্নমানের পেঁয়াজ বাছাই করছেন শ্রমিকেরা। খাওয়ার উপযোগী পেঁয়াজ আলাদা করে বিক্রির জন্য রাখা হচ্ছে। যেগুলো পচে গেছে সেগুলো ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এসব পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জ থেকে কম দামে কেনা হয়েছে বলে শ্রমিকেরা জানান।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেলেও মিশর, তুরস্ক, চীন ও পাকিস্তান থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ নষ্ট হচ্ছে না। এসব পেঁয়াজ শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কনটেইনারে করে বন্দরে আনা হচ্ছে। তাতে পেঁয়াজের মান ভালো থাকছে।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংঘ নিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক আসাদুজ্জামান বুলবুল প্রথম আলোকে জানান, মিশর, তুরস্ক, চীন ও পাকিস্তান থেকে আমদানি হওয়া পেঁয়াজের মান ভালো। পেঁয়াজে ক্ষতিকর পোকামাকড় পাওয়া যায়নি।

মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানিকারক মম শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য। ট্রলারে পেঁয়াজ বোঝাই করার পর থেকে খালাস হওয়া পর্যন্ত অনেক সময় এক-দুদিন লেগে যায়। এতে গরমে ও কাঠের ট্রলারে নিচের স্তরে থাকা পেঁয়াজে পানি লেগে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। নষ্ট পেঁয়াজ দ্রুত আলাদা করে সরিয়ে না ফেললে ভালো পেঁয়াজের মানও কমে যায়।