বাজারে নতুন পেঁয়াজ উঠতেই মণে দাম কমল হাজার টাকা

পেঁয়াজ। ফাইল ছবি
পেঁয়াজ। ফাইল ছবি

পেঁয়াজের ভান্ডার বলে খ্যাত পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কৃষকেরা আগাম জাতের পেঁয়াজ ঘরে তুলতে শুরু করেছেন। তবে এই পেঁয়াজ এখনো পুরোপুরি পরিপক্ব হয়নি। ভালো দামের আশায় কৃষকেরা নির্ধারিত সময়ের আগেই পেঁয়াজ তুলে বাজারে নিয়ে আসতে শুরু করেছেন। আগাম জাতের এই পেঁয়াজ গতকাল শনিবার সাঁথিয়ার করমজা হাটে প্রতি কেজি পাইকারি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

এদিকে গতকাল করমজা হাটে প্রায় ২০ মণ নতুন পেঁয়াজ ওঠে বলে আড়তদারদের সূত্রে জানা গেছে। নতুন পেঁয়াজ ওঠার পর গতকাল পুরোনো দেশি পেঁয়াজ প্রতি মণে আগের দিনের তুলনায় প্রায় এক হাজার টাকা কমে বিক্রি হতে দেখা যায়। শুক্রবার একই হাটে প্রতি মণ পুরোনো দেশি পেঁয়াজ ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। কৃষক ও পেঁয়াজের আড়তদারেরা জানিয়েছেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে আগাম জাতের পেঁয়াজ পুরোপুরিভাবে বাজারে আসতে শুরু করবে। ফলে দামও অনেকটা কমে যাবে।

 কৃষক ও স্থানীয় কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাঁথিয়ায় প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে কৃষকেরা আগাম জাতের পেঁয়াজ (মূলকাটা) লাগানো শুরু করেন। এবার ওই সময়ে যেসব কৃষক পেঁয়াজ লাগিয়েছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগেরই লাগানো পেঁয়াজ টানা বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এরপর অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে কৃষকেরা আবারও মূলকাটা পদ্ধতির পেঁয়াজের আবাদ করেন। কিন্তু সেই পেঁয়াজেরও বড় অংশ অক্টোবরের শেষ সপ্তাহের বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যায়। কৃষকেরা আবারও নতুন করে মূলকাটা বা আগাম জাতের পেঁয়াজের আবাদ শুরু করেছেন। সাঁথিয়ায় এবার ১৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

সাঁথিয়া কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সেপ্টেম্বরের শেষ ও অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে যে পেঁয়াজ লাগানো হয়েছিল, তার মধ্য থেকে প্রায় ১৫ হেক্টর জমির পেঁয়াজ কোনোরকমে টিকে যায়। সেই পেঁয়াজই কৃষকেরা তুলে নিয়ে আসছেন।

গতকাল উত্তরাঞ্চলের অন্যতম পেঁয়াজের হাট সাঁথিয়ার করমজা হাটে সরেজমিনে দেখা যায়, হাটে প্রায় ২০ মণ নতুন পেঁয়াজ উঠেছে। তবে নতুন পেঁয়াজের তুলনায় পুরোনো দেশি পেঁয়াজের আমদানি ছিল বেশি। নতুন পেঁয়াজ পাইকারি প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে পুরোনো দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১৭৫ থেকে ২২৫ টাকায়। এক দিন আগে হাটে নতুন পেঁয়াজ না উঠলেও দেশি পুরোনো পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে।

নতুন পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা ধুলাউড়ি গ্রামের আব্দুল আলিম বলেন, ‘আর ১০ থেকে ১২ দিন জমিতে থাকলি এই পেঁয়াজ পুষ্ট হয়া যাইত। ফলনও বাড়ত। গত কয়েক বছর ধইর‍্যা পেঁয়াজের আবাদ কইর‍্যা দাম না পাওয়ায় লস খাইছি। এবার দাম বেশি দেইখ্যা আগেই পেঁয়াজ তুইল্যা বাজারে নিয়্যা আইছি।’

হাটের পেঁয়াজের আড়তদার মুন্নাফ প্রামাণিক বলেন, নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। নতুন পেঁয়াজের কারণেই হোক কিংবা অন্য কোনো কারণে, এক দিনের ব্যবধানেই আজ পেঁয়াজের দাম মণে এক হাজার টাকার মতো কমেছে।

 উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, ‘আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে মূলকাটা পদ্ধতির প্রচুর নতুন পেঁয়াজ কৃষকেরা বাজারে নিয়ে আসবেন বলে আশা করছি।’