ডাকঘরেও খোলা যায় জীবন বিমা পলিসি

জিপিওতে গ্রাহকদের ভিড়। ছবি: প্রথম আলো
জিপিওতে গ্রাহকদের ভিড়। ছবি: প্রথম আলো

দেশের মানুষ কোথায় জীবন বিমা পলিসি খোলেন, তা প্রায় সবারই জানা। কেউ খোলেন রাষ্ট্রায়ত্ত জীবন বিমা করপোরেশনে, কেউ খোলেন দেশের বেসরকারি জীবন বিমা কোম্পানিগুলোতে। কেউ আবার পলিসি খোলেন বিদেশি জীবন বিমা কোম্পানিতেও। কিন্তু ডাকঘরেও যে বিমা পলিসি খোলা যায়, তা খুব বেশি মানুষের জানা নেই।

হ্যাঁ, বাংলাদেশ ডাক বিভাগেরও একটি জীবন বিমা পলিসি আছে, যার নাম ‘ডাক জীবন বিমা’। দেশের যেকোনো নাগরিক যেকোনো ডাকঘরে গিয়ে এ পলিসির আওতায় আসতে পারেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে চালু এটি একটি জনকল্যাণমূলক বিমা প্রকল্প। তবে এটি নিয়ন্ত্রণ, পরিচালন ও বিপণন করে ডাক বিভাগ।

বিস্ময়কর মনে হলেও এটাই সত্যি যে বাংলাদেশ অঞ্চলে এই পলিসি চালু রয়েছে ১৩৫ বছর ধরে। শুরুতে ১৮৮৪ সালে ডাক বিভাগের রানারদের আর্থিক নিরাপত্তা দিতে পলিসিটি চালু করা হয়। সাধারণ জনগণের জন্য তা উন্মুক্ত করা হয় ১৯৫৩ সালে। পূর্বাঞ্চল (ঢাকা) ও পশ্চিমাঞ্চল (রংপুর) নামে দুটি ভাগ করে ডাক জীবন বিমার কার্যক্রম পরিচালনা করে ডাক বিভাগ।

ছয় ধরনের বিমা

কয়েক ধরনের ডাক জীবন বিমা পলিসি করা যায়। যেমন আজীবন বিমা, মেয়াদি বিমা, শিক্ষা বিমা, বিবাহ বিমা, যৌথ বিমা, প্রতিরক্ষা বিমা ইত্যাদি। আর কিস্তি জমা দেওয়া যায় মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষাণ্মাসিক ও বার্ষিক ভিত্তিতে।

পলিসি শুরু হওয়ার দুই বছর পার হওয়ার পর মোট জমা টাকার ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণও নেওয়া যায়। পলিসির কোনো ঊর্ধ্বসীমা নেই, অর্থাৎ যেকোনো অঙ্কের পলিসি করা যায়।

যেকোনো ডাকঘরে প্রিমিয়াম জমা দেওয়া যায় এবং মেয়াদ শেষে যেকোনো ডাকঘর থেকেই টাকা উত্তোলন করা যায়। চাকরিজীবীদের বেতন থেকে কর্তনের মাধ্যমেও প্রিমিয়াম পরিশোধ করা যায়। অগ্রিম প্রিমিয়াম দিলে কিছু সুবিধা দেওয়া হয়। কোনো কারণে বিমা পলিসি বাতিল হয়ে গেলে তা পুনরুজ্জীবনও করা যায়।

উচ্চ বোনাস

ডাক জীবন বিমার প্রধান আকর্ষণ হলো নিম্নহারের প্রিমিয়াম ও উচ্চহারের বোনাস। সব প্রতিষ্ঠানের যেমন উদ্দেশ্য থাকে পলিসি বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করা, এ ক্ষেত্রে সরকার তা করে না। মুনাফার সবটুকুই বোনাস হিসেবে পলিসি গ্রাহকের মধ্যে বণ্টন করা হয়।

এমনকি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির পক্ষে সইসহ বিমাকারীকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা (গ্যারান্টি) দেওয়া হয়। ডাক জীবন বিমার প্রিমিয়ামের পরিমাণও কম। যদিও এর পরিমাণ নির্ভর করে বিমাকারীর বয়স ও পলিসির মেয়াদের ওপর।

অনলাইন সুবিধা

বর্তমানে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ডাক জীবন বিমার সেবা পরিচালিত হচ্ছে। প্রস্তাবপত্র পূরণ করে দেশের যেকোনো ডাকঘরে প্রথম কিস্তির টাকা দিলেই সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকের মোবাইল নম্বরে খুদে বার্তা (এসএমএস) চলে আসে।

বিমাকারীরা জমা দেওয়া টাকার পরিমাণ ঘরে বসেই জানতে পারেন। বিমা পলিসির নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় ক্লিক করলেই জানা যায় সব তথ্য। কোনো অভিযোগ থাকলে ই-বার্তা পাঠালে ফিরতি ই-মেইল বার্তায় জবাব দেওয়ার ব্যবস্থাও করে রেখেছে ডাক বিভাগ।

ডাক বিভাগের প্রধান কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম জানান, বিমা খাতের একটি আকর্ষণীয় সেবার নাম ডাক জীবন বিমা। এ পর্যন্ত ডাক জীবন বিমার পলিসি গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২০ হাজারের মতো।

কিস্তির হার

ডাক জীবন বিমার প্রিমিয়াম নগদে যেমন দেওয়া যায়, মাসিক বেতন থেকেও দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সাধারণত বিমাকারীর বয়স ও পলিসির মেয়াদ ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন আজীবন বিমার ক্ষেত্রে ১৯ বছর থেকে ৫৫ বছর বয়সের গ্রাহকেরা বিমা পলিসি গ্রহণ করতে পারবেন। আর বিমার পূর্ণতা পাবে ৫০, ৫৫, ৬০ ও ৭০ বছর মেয়াদে।

বিমাকারীর মৃত্যুর পর শুধু নমিনি টাকা পাবেন। ১৯ বছর বয়সের একজন গ্রাহক ৫০ বছরের জন্যও পলিসি করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে মাসে প্রতি হাজারের বিপরীতে মাত্র ২ টাকা ১০ পয়সা হারে প্রিমিয়াম দিতে হবে। মেয়াদি বিমার ক্ষেত্রে ১৯ বছর থেকে ৫৫ বছর বয়সের গ্রাহকেরা পলিসি করতে পারবেন। ৫, ১০, ১৫, ২০, ২৫, ৩০, ৩৫ ও ৪০ বছর মেয়াদে পলিসির পূর্ণতা হয়।