'বুলবুলে' বরিশালে মাছের ক্ষতি ৩০ কোটি টাকার বেশি

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুলের’ প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে দক্ষিণাঞ্চলের পুকুর ও ঘেরের মাছসহ অন্যান্য অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৩০ কোটি ২৫ দশমিক ১৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিভিন্ন ঘের, পুকুর ও অন্যান্য জলাশয়ের মাছ ভেসে গিয়ে প্রায় ২৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য কার্যালয় এই হিসাব করেছে। 

বিভাগীয় মৎস্য কার্যালয় সূত্র জানায়, বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে মৎস্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, যা সর্বশেষ সিডরের পর আর হয়নি। ঝড় ও অধিক উচ্চতার জোয়ারের পানিতে পুকুর, ঘের, দিঘি ও জলাশয়ের পানি উপচে পড়ায় ভেসে গেছে মাছের খামার।

মৎস্য ভবন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বরিশাল বিভাগে ২৫ কোটি ৭৯ দশমিক ১৪ লাখ টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির চাষ করা মাছ, চিংড়ি ও বিভিন্ন পোনা।

এর মধ্যে বরিশাল জেলার ৫৭টি ইউনিয়নের ২ হাজার ২২০টি পুকুর ও দিঘির ৩৫৯ দশমিক ১২ মেট্রিক টন বড় মাছ ও ১২৩ দশমিক ৫৭ লাখ পোনা ভেসে গেছে। এর আর্থিক মূল্য ১১ কোটি ৮৫ দশমিক ৮৫ লাখ টাকা।

ঝালকাঠি জেলার ৩৪টি ইউনিয়নের ৯৪২টি পুকুর ও দিঘির ১৩৩ দশমিক ৯৮ মেট্রিক টন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে, যার আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ৩৬ দশমিক ৮০ লাখ টাকা।

পিরোজপুর জেলার ৪৭টি ইউনিয়নের ১ হাজার ৪৬৫টি পুকুর ও দিঘি এবং ৪৪৬টি মাছের ঘের থেকে ৪১৭ দশমিক শূন্য ৮ মেট্রিক টন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, ১২৫ মেট্রিক টন চিংড়ি ও ৪ দশমিক ২০ লাখ পোনা ভেসে গেছে। এর আনুমানিক মূল্য ৩ কোটি ৬২ দশমিক ৫৫ লাখ টাকা।

পটুয়াখালীর ১৯টি ইউনিয়নের ২৮০টি পুকুর ও দিঘি এবং ১৫০টি মাছের ঘের থেকে ৩০ মেট্রিক টন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও ১৫ মেট্রিক টন চিংড়ি ভেসে গেছে, যার আনুমানিক মূল্য ৬২ লাখ টাকা।

ভোলা জেলার ৪৮টি ইউনিয়নের ১ হাজার ১৪৯টি পুকুর ও দিঘি এবং ১২টি ঘের থেকে ৭৬৪ মেট্রিক টন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, ৪ মেট্রিকটন চিংড়ি ও ৭৪ লাখ পোনা ভেসে গেছে। এর আনুমানিক মূল্য ৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

বরগুনা জেলার ২০টি ইউনিয়নের ৬০টি পুকুর ও দিঘি এবং ৩৪টি মাছের ঘের থেকে ৩২ দশমিক ২২ মেট্রিক টন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, শূন্য দশমিক ২৫ মেট্রিক টন চিংড়ি ভেসে গেছে। এর আনুমানিক মূল্য ধরা হয়েছে ৬৪ দশমিক ৯৪ লাখ টাকা।

মৎস্য বিভাগ বলছে, ‘ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে বরিশাল বিভাগে মোট ১০ জেলে নিহত এবং ১৮ জন আহত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১২০টি মাছধরা নৌকা ও ট্রলার, যার আনুমানিক মূল্য ২ কোটি ১৫ দশমিক ৬০ লাখ টাকা।

এ ছাড়া ৮৮ লাখ টাকার মাছ ধরা জাল এবং ১ কোটি ৪২ দশমিক ২০ লাখ টাকার পুকুর-ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মৎস্য বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, মাছ ও অন্যান্য অবকাঠামোসহ এই বিভাগে মৎস্য খাতে মোট ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ৩০ কোটি ২৫ দশমিক ১৪ লাখ টাকা।

জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক আজিজুল হক বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে মৎস্য অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে কোনো সহায়তা দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা আসেনি। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’