ফারুক আহমেদ সিদ্দিকীর ৫ পরামর্শ

ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী

১. ঝুঁকি গ্রহণের মানসিক প্রস্তুতি সবার আগে
বিশ্বজুড়েই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সব সময় ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশের বাজারে এই ঝুঁকির মাত্রা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। কারণ, আমাদের বাজার মৌলভিত্তির চেয়ে বেশি মাত্রায় গুজবনির্ভর। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমরা দেখি, শেয়ারবাজার সম্পর্কে প্রাথমিক কোনো ধারণা ছাড়াই বিনিয়োগকারীরা বাজারে বিনিয়োগ করে বসেন। এ কারণে তাঁরা বেশি লোকসানও করেন। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের আগে অবশ্যই এই বাজার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকা উচিত। এর বাইরে যে কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করবেন, সেটি সম্পর্কে সম্যক ধারণা জরুরি। কারও কথায় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ না করা শ্রেয়। কারণ, শেষ বিচারে শেয়ারবাজারে লাভ-লোকসান যা-ই হোক, তা বিনিয়োগকারীর নিজের।

২. শুরুতেই নতুন আইপিওতে বিনিয়োগ নয়
কয়েক বছর ধরেই আমরা দেখছি, নতুন শেয়ার বাজারে আসার কয়েক দিনের মধ্যেই সেটির দাম ৫-১০ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে। এটি মোটেই স্বাভাবিক কোনো প্রবণতা নয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা একটি কোম্পানিকে নির্ধারিত দামে বাজারে আসার অনুমোদন দেয়। অনেক ক্ষেত্রে সেই দাম নিয়েও নানা প্রশ্ন থাকে। তারপরও নিয়ন্ত্রক সংস্থা যে দামে আইপিও অনুমোদন করছে, সেই কোম্পানির আর্থিক অবস্থা তার চেয়ে বেশি দাম সাপোর্ট করে না বলেই ওই দামে অনুমোদন হচ্ছে। তা সত্ত্বেও বাজারে আসার পর দেখা যায় ওই দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এ কারণে কিছুদিন যেতে না-যেতেই সেই দাম টেকসই হচ্ছে না। তাই নতুন কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগের আগে কিছুদিন তার বাজার পারফরম্যান্স পর্যালোচনা করা উচিত। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই মনে রাখা দরকার, নতুন কোম্পানি মানেই ভালো কোম্পানি নয়। পাশাপাশি নতুন কোম্পানিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এটাও মনে রাখা জরুরি, কিছুদিন যাওয়ার পরই ওই কোম্পানির বিক্রয় নিষেধাজ্ঞা বা লক-ইনের আওতায় থাকা শেয়ারও বাজারে বিক্রি হবে।

৩. ধৈর্য রাখুন, ভালো শেয়ারে থাকুন
বাজারের সূচক ও শেয়ারের দামের উত্থান-পতন অত্যন্ত স্বাভাবিক প্রবণতা। যদিও আমাদের বাজারে অধিকাংশ সময়ই অস্বাভাবিক উত্থান-পতন ঘটে। তাতে ভালো-মন্দ সব শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। এ ধরনের বাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা দরকার। বেশ কিছুদিন ধরে চলমান মন্দার কারণে বর্তমান বাজারে অনেক ভালো শেয়ারের দামও যৌক্তিক মূল্যের নিচে নেমে এসেছে। তাই ভালো শেয়ারে বিনিয়োগের জন্য এটি উপযুক্ত সময়। তবে স্বল্প মেয়াদে মুনাফার বিষয়টি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। যদিও দীর্ঘ মেয়াদে শেয়ার ধরে রাখা অনেক বিনিয়োগকারীর পক্ষেই সম্ভব হয় না। আমার পরামর্শ, যেসব বিনিয়োগকারীর একটু বেশি সময় শেয়ার ধরে রাখার আর্থিক সামর্থ্য নেই, তাঁদের শেয়ারবাজারে না আসাই ভালো। এ ছাড়া কখনোই এক কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা উচিত না।

৪. হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধিতে সতর্ক থাকুন
আমাদের বাজারে প্রায়ই দেখা যায়, কিছু কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। তাতে অনেক বিনিয়োগকারী দ্রুত লাভের আশায় সেসব শেয়ারে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এটি খুবই ভুল সিদ্ধান্ত। বরং সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া যখন কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ে, তখন সেখানে বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকা উচিত। সাধারণ নিয়মে বলা যায়, কারণ ছাড়া কোনো কোম্পানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি মানে তার পেছনে কোনো না কোনো কারসাজি থাকে। যেসব শেয়ার নিয়ে কারসাজির ঘটনা ঘটে, সেসব শেয়ার থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পক্ষে মুনাফা করা কঠিন। তাই দাম বাড়তে থাকলে কোনো খোঁজখবর না নিয়ে কোনো শেয়ারে বিনিয়োগ করা উচিত না। বিনিয়োগকারীদের মনে রাখতে হবে, কারসাজিকারীরা তাঁদের স্বার্থেই কারসাজির ঘটনা ঘটান। দাম বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করা তাঁদের একধরনের কৌশল।

৫. মন্দা বাজারে ঋণ নয়
দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের বাজারে মন্দাভাব চলছে। টানা পতনের কারণে অনেক শেয়ারের দাম অবমূল্যায়িত পর্যায়ে নেমে এসেছে। তারপরও এ ধরনের মন্দা বাজারে কখনোই ঋণ করে ও ধারের টাকায় বিনিয়োগ করা উচিত না। মন্দা বাজারে এমনিতে মুনাফা করা খুব কঠিন। সেখানে ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করে বাড়তি মুনাফা করা তো দুঃসাধ্য কাজ। সাধারণত বাজার যখন ঊর্ধ্বমুখী থাকে, তখন ঋণ করে অনেকে বিনিয়োগ করেন এবং লাভ করেন। আমাদের অনেক বিনিয়োগকারী আছেন, যাঁরা সারা জীবনের সঞ্চয়ের সব টাকা বাজারে খাটান। আবার তার ওপর ঋণও নেন। ফলে দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। কখনোই শেয়ারবাজারে সঞ্চয়ের সব অর্থ বিনিয়োগ করা উচিত না। তারপর ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্ক থাকা দরকার। বর্তমান বাজারে অনেকেই বিনিয়োগ করে লোকসান গুনছেন। তাঁদের জন্য আমার পরামর্শ, আপনার হাতে যদি ভালো শেয়ার থাকে, তাহলে হয়তো ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করলে ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পারবেন। আর যদি বাজে শেয়ারে বিনিয়োগ থাকে, তাহলে লাভের কথা ভুলে গিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই শেয়ার বিক্রি করে লোকসান মেনে নিন। অন্যথায় আরও বেশি লোকসান গুনতে হতে পারে।