সস্তায় সেরা বাজার করার ১০ কৌশল

বাজার–সদাই: বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজির পসরা নিয়ে বসছেন একজন ব্যবসায়ী। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে।  ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
বাজার–সদাই: বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজির পসরা নিয়ে বসছেন একজন ব্যবসায়ী। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

ঢাকার কাজীপাড়া বাজারে গত বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি সবুজ ক্যাপসিকাম বিক্রি হচ্ছিল ৪০০ টাকা দরে। মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের বাজারেও একই দর। বিকেলে কারওয়ান বাজারে দেখা গেল, একই ক্যাপসিকাম ২৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন বিক্রেতা এমদাদুল হক।
রাজধানীর বাজারভেদে বেশির ভাগ পণ্যেরই দামের ভিন্নতা আছে। আবার কম দামে সেরা পণ্য কেনা নির্ভর করে ক্রেতার অভিজ্ঞতা আর কৌশলের ওপর। ১০টি কৌশল জানলে আপনিও হতে পারেন সেরা বাজারকারী।

বড় বাজার
কারওয়ান বাজারে সবজির আড়তে কেনাবেচা হয় রাতে। দিনে সেখানে খুচরা বিক্রেতারা সবজির পসরা সাজিয়ে বসেন। ঢাকার যেকোনো খুচরা বাজারের চেয়ে কারওয়ান বাজার আড়তের খুচরা দোকানদারদের কাছে কম দামে সবজি পাবেন। মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের বাজার, যাত্রাবাড়ী ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের মতো বড় বাজারেও তুলনামূলক কম দামে সবজি মিলবে। একটি উদাহরণ দিই, কাঁচা মরিচ সাধারণ বাজারে কখনো ৬০ টাকা কেজির নিচে পাওয়া যায় না। কিন্তু আড়তের পাশের বাজারে সেটা ২০-২৫ টাকা কেজিতেও পাওয়া যায়। এমনই চাল, আটা, তেল, ডাল ইত্যাদি পণ্য বড় বাজারে তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যায়। অভিজাত বাজারে গেলে আপনাকে অভিজাত দাম দিয়েই পণ্য কিনতে হবে। 

শুক্রবার এড়িয়ে চলুন
কম দামে বাজার করতে চাইলে শুক্রবার এড়িয়ে চলুন। শুক্রবার বাজারে ক্রেতার চাপ বেশি থাকে। বিক্রেতারাও বাড়তি দাম রাখার সুযোগ পান। শুক্রবারে ১০-২০ শতাংশ বাড়তি দামে সবজি, মাছ ও অন্যান্য পণ্য কিনতে হয় ক্রেতাদের। শনিবারও অন্যান্য দিনের চেয়ে বাড়তি দামে সবজি ও মাছ বিক্রি হয়। তাই বাজার করুন রবি থেকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে।

রাতে বাজার
রাতে বিক্রেতারা পণ্যের দাম কমিয়ে দেন। কারণ, এরপরে আর ক্রেতা পাওয়ার আশা থাকে না। সকালের যে সবজি ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়, সেটি রাতে ৪০ টাকায় আপনি পাবেনই। আর রাতের বেলা মাছ কেনাও লাভজনক। বিভিন্ন বাজারে বিকেলে নতুন মাছ আসে। একটু দেরি করে গেলে শেষের দিকে বিক্রেতারা কম দামে ছেড়ে দেন। রাতে কেনার সময় তাজা মাছ চিনবেন কী করে? একটি আঙুল দিয়ে মাছের গায়ে চাপ দিন। যদি রাবারের মতো মনে হয়, আঙুল উঠিয়ে নিলে গর্ত মিলিয়ে যায়, তাহলে মাছ তাজা। আর ময়দার দলার মতো যদি আঙুল ঢুকে যায়, তাহলে সে মাছ কিনবেন না। তাজা মাছের গা পিচ্ছিল হয়, এটাও মনে রাখতে হবে। ছোট মাছ ও গরুর মাংস সকালে কেনাই ভালো।

ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা
ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা বাজারের দোকানের চেয়ে কিছুটা কম দামে পণ্য বিক্রি করেন। এর কারণ, তাঁদের ব্যয় কম। যদি দেখেন, বেশিসংখ্যক ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা একটি পণ্য বিক্রি করছেন, তাহলে আপনি ধরে নেবেন, বাজারে পণ্যটির দাম বেশ কমেছে। এ কারণে বেশ দর–কষাকষি করুন। অবশ্য ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতার কাছ থেকে কেনার সময় সতর্ক থাকবেন। দেখা গেল, তাঁরা পচা মাছ বা সবজি গছিয়ে দিয়েছেন। আর কিন্তু তাঁদের খুঁজে পাবেন না।  

যৌথ বাজার
বেশি পরিমাণে কিনলে দাম কম পড়ে। আপনার ভবনের চার-পাঁচটি পরিবারের সঙ্গে সখ্য তৈরি করে যৌথভাবে বাজার করুন। চলে যান বড় কোনো বাজারে। সেখানে পাইকারি দরে বেশি পরিমাণে পণ্য কিনে ভাগাভাগি করে নিন। খরচ অনেক কম পড়বে। পণ্য নিজে ধরে দেখে বেছে বেছে নিন। বিক্রেতার ওপর ছেড়ে দিলে ঠকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

মৌসুমের সময় কিনে রাখা
বাজারে এখন যে পেঁয়াজ ২০০ টাকা কেজিতে কিনছেন, সেটি মৌসুমের সময় ৩০ টাকা ছিল। ১৫০ টাকা কেজির পেঁয়াজ ছিল ৪০ টাকা। এপ্রিল মাসের শুরুতে ঘরে রাখার জন্য যদি দুই মণ পেঁয়াজ ও ২০-২৫ কেজি রসুন কিনে রাখতেন, তাহলে এখন এত দাম দিতে হতো না। খাটের নিচে চট বিছিয়ে পেঁয়াজ, রসুন ও আলু রেখে দিলে তা ভালো থাকে।

খোঁজ নেওয়া
বড় দু-একটি বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে পরিচয় রাখুন। বাজারের পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে, দর কত চলছে, এসব জানা থাকলে পাড়ার দোকানদারের সঙ্গে দর–কষাকষি করতে পারবেন। নইলে তিনি যে দাম বলবেন, সেটা দিয়েই কিনতে হবে।

আলোর কারসাজি
বাজারে গেলে দেখবেন ডালায় সাজানো মাছের ওপর লাইট জ্বলছে। লাইটের ওপর সাদা, সবুজ, হলুদ রঙের কাগজ। চিংড়ির ওপর লাইটের উপরিভাগে সবুজ কাগজ লাগানো। এতে চিংড়ির ওপর সবুজ আভা পড়ে। চিংড়ি পচে গেলে লালচে হয়ে যায়। একইভাবে ইলিশে রুপালি রং দেখা যেতে সাদা আলো ব্যবহার করা হয়। বাজারের আলোর কারসাজি নজরে রাখুন, যাতে আপনাকে পচা মাছ ধরিয়ে না দেয়। আবার মাছে রং মেশানো কি না, লবণের পানিতে ভিজিয়ে রাখা কি না, সেগুলো খেয়াল রাখতে হবে। 

মূল্যবৃদ্ধির সময়
কোনো পণ্যের দাম যখন বাড়তে থাকে, তখন কারওয়ান বাজারের মতো বড় বাজার থেকে সেটা না কেনাই ভালো। কারণ, বড় বাজারে দাম সবার আগে বাড়ে। আবার কমেও সবার আগে। তাই খোঁজখবর রাখুন। আবার সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) অথবা খাদ্য অধিদপ্তরের ট্রাক থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারেন। বাজারে খোলা আটা এখন ৩০ টাকা কেজি। খাদ্য অধিদপ্তর ১৮ টাকা দরে বিক্রি করছে।

অপেক্ষা করুন
কোনো পণ্যের দাম বেড়ে গেলে অল্প পরিমাণে কিনুন। দাম কমার জন্য অপেক্ষা করুন। কাঁচাবাজারে পণ্যের দাম নিয়মিত ওঠানামা করে। অনেক ক্রেতার মধ্যে দাম বাড়লে বাড়তি পরিমাণে কিনে রাখার প্রবণতা দেখা যায়। যা বাজারে চাপ তৈরি করে। এতে বিপাকে পড়ে অন্যরা। আপনি সচ্ছল হলেও অন্যদের কথা চিন্তা করে মূল্যবৃদ্ধির সময় কম কম কিনুন।

পেঁয়াজ কোথায় সস্তায় পাওয়া যায়, এখন এই প্রশ্ন করবেন না। বৃহস্পতিবার বাসার সামনে পেঁয়াজ দেখলাম ২২০ টাকা কেজি। কাজীপাড়া বাজারে সেটা ২০০ টাকা দরে বিক্রি করছিলেন বিক্রেতারা। এরপর মিরপুর ১ নম্বর, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, ইন্দিরা রোড ঘুরে কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখলাম, পাইকারিতেই কেজিপ্রতি দর ২০০ টাকা। শুক্রবার খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ২৩০-২৫০ টাকা হয়ে গেছে।