তিন কন্যা

কর্মীদের সঙ্গে নুসরাত জাহান। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
কর্মীদের সঙ্গে নুসরাত জাহান। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
১৯ নভেম্বর নারী উদ্যোক্তা দিবস। ২০১৪ সাল থেকে জাতিসংঘের উদ্যোগে দেশে দেশে এই দিবস উদ্‌যাপিত হয়। বাংলাদেশেও হয় নানা আয়োজন। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে নারী উদ্যোক্তাদের দিগন্ত প্রসারিত হচ্ছে। প্রচলিত উদ্যোগের পাশাপাশি চ্যালেঞ্জিং উদ্যোগেও নেমে পড়ছেন আমাদের নারী উদ্যোক্তারা। এমন তিন কন্যার উদ্যোগ নিয়ে লিখেছেন মুনির হাসান

১. নুসরাত জাহানের ফিজিওট্র্যাক
জন্ম থেকে ডান হাতটি দুর্বল নুসরাত জাহানের। চিকিৎসকেরা বিভিন্ন সময় ব্যায়ামের পরামর্শ দিলেও সেভাবে যত্ন নেওয়া হয়নি। ফলে ডান হাতে আর কিছুই করতে পারেন না তিনি। তবে সেটি কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি নুসরাতের লড়াই–সংগ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ করার পর পড়তে যান জার্মানির রাইনওয়াল ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্সে। সেখানে গিয়ে ভিন্ন কিছু করার চিন্তা থেকে মাস্টার্স করলেন ইউজেবিলিটি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে।

‘জার্মানিতে গিয়ে আমি টের পেলাম, তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে আমার মতো যাঁদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আছে বা নানা কারণে যাঁদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নাড়াচাড়া করতে সমস্যা হয়, তাঁদের জন্য একটা কিছু করা যেতে পারে।’ ঢাকার বাংলামোটর এলাকায় নিজের প্রতিষ্ঠান ইন্টারেকটিভ আর্টিফ্যাক্টের অফিসে বসে কথা বলছিলেন নুসরাত। আরও বললেন, ‘ভাবলাম কিছু বানাই, যা দিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের নাড়াচাড়াজনিত অবস্থার উন্নতি হচ্ছে কি না, সেটা বোঝা যাবে।’

ঘাড়ব্যথার কথায় ধরা যাক। কেউ হয়তো তাঁর ঘাড় ঠিকমতো ঘোরাতে পারেন না। এখন চিকিৎসকেরা চিকিৎসা করার সময় মোটামুটি একটি অবস্থান ‘ট্রায়াল অ্যান্ড এররের’ মাধ্যমে ঠিক করে নেন। তারপর চিকিৎসা দেন। চিকিৎসা বলতে ওষুধ সেবন এবং শারীরিক ব্যায়াম। নুসরাত ও তাঁর দলবল ফিজিওট্র্যাক নামের এমন একটা ডিভাইস তৈরি করেছেন, যা একজন ব্যক্তি ঠিক কতটুকু ঘাড় স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাতে পারেন, সেটি বের করে জানিয়ে দিতে পারে। ফিজিওট্র্যাকের আরেকটি সুবিধা হলো, এর সঙ্গে জুড়ে রাখা হয়েছে একটি ইলেকট্রনিক মেডিকেল রেকর্ড সিস্টেম। ফলে রোগীর সব তথ্যই সিস্টেমে থাকে এবং তাঁকে মনিটরিং করাও সম্ভব হয়।

মাইক্রোসফটের উদ্ভাবিত কিনেটিক ডিভাইস ব্যবহার করে নুসরাত এই ‘এমবেডেড সিস্টেম’ তৈরি করেছেন। এই ডিভাইসের সঙ্গে একটি ল্যাপটপ সংযুক্ত। সঙ্গে একটি ক্যামেরা আছে, যা মূলত শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টের প্রকৃত গতিবিধি পরিমাপ করতে পারে। ক্যামেরা থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়ানোর পর এক্স-রে মেশিনের মতো মোশন ক্যামেরা দিয়ে রোগীর শরীর স্ক্যান করা হয়। এভাবে রেফারেন্স কাঠামো পাওয়া যায়। এরপর রোগী ঘাড়, হাতের কনুই, ল্যাম্বার কিংবা হিপ জয়েন্ট, অর্থাৎ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ নাড়াচাড়া করলে সেটির স্ক্যান ছবি ফিজিওট্র্যাক গ্রহণ করে। এরপর কম্পিউটার প্রোগ্রামিং থেকে নিখুঁতভাবে নাড়াচাড়ার প্রকৃত অবস্থান জানা যায়।

হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিনের চিকিৎসক সালেহ আহমদ বললেন, ‘অনেক রোগীই চিকিৎসার পর তাঁদের উন্নতি বা অবনতি হচ্ছে কি না, সেটি ঠিকমতো বলতে পারেন না। ফিজিওট্র্যাক চিকিৎসকদের এই ঝামেলা থেকে মুক্তি দেবে। কারণ, এর মাধ্যমে আমরা তাঁর নাড়াচাড়া নিখুঁতভাবে মেপে ফেলতে পারছি। অর্থোপেডিকস, নিউরোলজিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্ট কিংবা আমার মতো ফিজিক্যাল মেডিসিনের চিকিৎসকদের জন্য এটি একটি অত্যন্ত সহায়ক উদ্ভাবন। শারীরিক অসুস্থতার রোগীদের (বিশেষ করে যাঁদের নাড়াচাড়াজনিত সমস্যা আছে) জন্য এই উদ্ভাবনকে আশীর্বাদই বলা যায়।’  

জার্মানিতে পড়ার সময় আইসিটি বিভাগের কানেকটিং স্টার্টআপ প্রতিযোগিতায় নিজের ধারণা জমা দেন নুসরাত। ৪৩৭টি ধারণা থেকে নির্বাচিত ১০টি ধারণার একটি হয় সেটি। কারওয়ান বাজারের জনতা টাওয়ার সফটওয়্যার পার্কের ইউনকিউবেটরে জায়গা পান। চাকরি ছেড়ে দিয়ে নেমে পড়েন নিজের স্বপ্ন নির্মাণে। সেই থেকে প্রায় তিন বছর ধরে প্রতিনিয়ত এই যন্ত্রের উন্নতি করেছেন। বাংলাদেশে গবেষণানির্ভর কোনো প্রকল্পকে বাস্তবে নিয়ে আসা কঠিন। কেননা, বাজারে গবেষণানির্ভর কোনো পণ্যের প্রচলন সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, জানালেন নুসরাত। আইসিটি ডিভিশনের উদ্ভাবনী ফান্ড এবং আইডিয়া প্রকল্প থেকে ৩০ লাখ টাকার অনুদানের জন্য বিবেচিত হয়েছেন। এখনো অবশ্য সবটুকু অনুদানের অর্থ ছাড় হয়নি। এ ছাড়া তাঁর কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে দেশীয় ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠান বিডি ভেঞ্চার লি.। বিডি ভেঞ্চারের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত হোসেন মনে করেন, হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ফিজিওট্র্যাকের ব্যবহার শারীরিক অসুস্থতাজনিত রোগীদের চিকিৎসায় অভাবনীয় উন্নতি করবে।

ফিজিওট্র্যাকের গবেষণা ও পরীক্ষণের কাজ শেষ হয়েছে। এই নভেম্বর থেকে এটির বিপণনের কাজ শুরু করেছেন নুসরাত জাহান। তিনিসহ এখন আটজন কাজ করছেন তাঁর প্রতিষ্ঠানে। এই মুহূর্তে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ফিজিওট্র্যাক সরবরাহ করাই বড় চ্যালেঞ্জ তাঁর কাছে। আগামী দিনে শারীরিক অসুস্থ রোগীরা তাঁদের চিকিৎসকের পরামর্শমতো বাসায় ব্যায়াম করছেন কি না, সেটি মনিটরিংয়ের ডিভাইস বানানোর জন্য কাজ করতে চান নুসরাত।

সিলেটে নিজের বিক্রয়কেন্দ্রে তাসনিয়া মতিন। ছবি: আনিস মাহমুদ
সিলেটে নিজের বিক্রয়কেন্দ্রে তাসনিয়া মতিন। ছবি: আনিস মাহমুদ

২. তাসনিয়া মতিন ও তাঁর খেয়াল
কোনো শহরে গেলেই আমি ব্যতিক্রমী উদ্যোক্তাদের খোঁজাখুঁজি করি। সিলেটের ডিঙ্গি রেস্তোরাঁয় বসে খবর পেলাম শাবিপ্রবির লোকপ্রশাসনের স্নাতক তাসনিয়া মতিন ও তাঁর ‘খেয়ালের’। শহরের পূর্ব শাহি ঈদগাহের আনোয়ারা’স প্যালেসের নিচতলায় ছোট্ট শোরুমে। সেখানে গেলেই মন ভালো হয়ে যায়। ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র দিয়েই চমৎকার করে সাজানো। তাসনিয়ার কথায়, ‘দোকান সাজানোর খরচ কমানোর জন্য নিজেই লোগো ডিজাইন করেছি। বাসার স্টোররুমে ঘুণে ধরা পুরোনো ওয়ার্ডরোবের তিনটি ড্রয়ারের একটাকে কেটে বসার জন্য দুটো টুল বানিয়েছি, বাকি দুটো ড্রয়ার জোড়া দিয়ে বানিয়েছি জিনিসপত্র ডিসপ্লের জন্য একটা বক্স। ঘুণে ধরা একটা জানালার ফ্রেম কেটে বোর্ড বসিয়ে তার ওপর হুক গেঁথে বানিয়েছি গয়না ঝোলানোর স্ট্যান্ড। আরেকটি জানালার ফ্রেম কেটে বানিয়েছি একটি আয়নার ফ্রেম। জিআইপাইপ থ্রেড কাটিয়ে জোড়া দিয়ে বানিয়েছি হ্যাঙ্গার স্ট্যান্ড।’

চারদিকে নজর দিয়ে বুঝলাম, ছোট্ট একটি বাংলাদেশ—সিলেটের মণিপুরি শাড়ি, নারায়ণগঞ্জের জামদানি, টাঙ্গাইলের তাঁতপণ্য, কুমিল্লার বাটিক, ঢাকার ব্লক/স্ক্রিন প্রিন্টের পণ্য। পোশাক ছাড়াও আছে শীতলপাটি, শতরঞ্চি, টেবিল ম্যাট, বিছানার চাদর, কুশন কভার, বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, হাতে তৈরি গয়না, হাতে তৈরি নোটবুক। এক কোণে দেশ–বিদেশের বিখ্যাত লেখকদের বিখ্যাত সব বইও। এ বছরের মে মাসে এই শোরুমে এসেছেন। এর আগে কাটিয়েছেন একই ভবনের দোতলায়।

৬ বছর আগে মাস্টার্স পরীক্ষার পর পরিবারের কথামতো চাকরি খোঁজাতে মন না দিয়ে নিজের জমানো ১৭ হাজার টাকা দিয়ে শুরু। অনলাইনে সিলেটের মণিপুরি শাড়ি বিক্রি। তবে ভয়ে বাসায় বলতে পারেননি, তাই খুব বেশি প্রচারণাও নেই। শুরুতে একটি শাড়ির অর্ডার পেলেও দ্বিতীয় অর্ডারের জন্য তাসনিয়াকে অপেক্ষা করতে হয়েছে পাকা একটি বছর। সেই সময়, ২০১৫-১৬ সালে ফেসবুকে মণিপুরি শাড়ির সমাহার কম থাকাতে দ্রুত বিকশিত হলো খেয়াল।

তাসনিয়া ভাবলেন, নিজেকে কেবল ফেসবুক পেজে সীমাবদ্ধ রাখবেন না, শোরুম করবেন। কিন্তু কী বিক্রি করবেন? ‘ভাবনায় আসে, সিলেটের ক্রেতাদের জন্য কী নিয়ে কাজ করা যায়। মার্কেট গ্যাপ বিবেচনা করে মনে হলো বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ নিয়ে কাজ করা যায়। নিজের ডিজাইন নিয়ে বিশেষ ব্যাগের ব্যবস্থা করতে পারলাম।’ এরপর আরও কিছু যোগ হলো, যা আমরা জেনেছি শুরুতে। 

নিজের মতো করে একটি অবস্থান তৈরি হলেও খেয়ালকে সফল বলতে নারাজ তাসনিয়া। মাত্র ৫-৬ বছরে একটি উদ্যোগের সফলতা যাচাই করা সম্ভব নয়। তাঁর ধারণা, খেয়াল এখন পর্যন্ত কোনো সফল উদ্যোগ নয়। তবে ব্যবসার সফলতাই সব নয়; একটি ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে এর পেছনের মানুষগুলোর ব্যক্তিগত যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, সেই অভিজ্ঞতা যে কত বড় ‘অর্জন’, তা  ব্যাংক ব্যালেন্সের হিসাব দিয়ে বিচার করা সম্ভব নয়।

তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট তাসনিয়া ২০১৭ সালে বিয়ে করেছেন। নিজের কর্মস্থল সিলেটে হলেও শ্বশুরবাড়ি এবং স্বামীর কর্মস্থল সুনামগঞ্জ হওয়ার দুই শহরে আসা–যাওয়ার মধ্যেই তাঁর সংসার।

নিজের ছয় বছরের উদ্যোক্তা জীবনের সারমর্ম বললেন এক লাইন—ব্যবসার মোড় ঘুরতে পারে যখন-তখন। হাল না ছেড়ে একটু ধৈর্য ধরে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যেই এর সফলতা।

রাজধানীর হাজারীবাগের কারখানায় মাকসুদা খাতুন। ছবি: জাহিদুল করিম
রাজধানীর হাজারীবাগের কারখানায় মাকসুদা খাতুন। ছবি: জাহিদুল করিম

৩. মাকসুদা খাতুনের শাবাব লেদার
স্কুলে পড়ানোর কাজ ছেড়ে বায়িং হাউসে চাকরি নিয়েছেন। স্বামী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষক এবং এক অংশীদারের সঙ্গে শিল্পের জন্য চামড়ার দস্তানা তৈরি করে জাপানে পাঠান। ভালোই চলছিল। কিন্তু ছয় বছর আগে একদিন সকালে জানা গেল, স্বামীর প্রতিষ্ঠানের ৬৫ লাখ টাকার মালামাল গায়েব হয়ে গেছে! মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লেও নিজে ভেঙে পড়লেন না। কেরানীগঞ্জের জমি আর নাকফুল রেখে বাকি সব গয়না বিক্রি করে দিলেন। ডিপিএস এবং জীবন বিমার পলিসি, ভাঙালেন সবই। খরচ কমানোর জন্য রামপুরা থেকে কাঁচপুরে বাসা নিয়ে গেলেন। প্রতিদিন স্বামীকে অফিসে পাঠিয়ে নিজে হাজির হতে শুরু করলেন হাজারীবাগের ছোট্ট কারখানায়। দিনভর অর্ডারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ান। অবশেষে পাওয়া গেল চার ডজন ওয়ালেটের অর্ডার। ‘আমার প্রথম কাজ, যত্ন করে করলাম।’ হাজারীবাগে নিজের কারখানা কাম অফিসকক্ষে বললেন চামড়াজাত পণ্যের উৎপাদক শাবাব লেদারের স্বত্বাধিকারী মাকসুদা খাতুন। ‘কিন্তু জানাশোনা ও যোগাযোগ বাড়াতে পারছিলাম না। এরপর খোঁজ পেলাম “চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব’’ প্ল্যাটফর্মের। যোগ দিলাম মিরপুরের উদ্যোক্তা হাটে।’ সেখানে বেচাকেনা বেশি না হলেও আগ্রহী ক্রেতাদের সামনে নিজের পণ্যের সমাহার তুলে ধরতে পারলেন মাকসুদা। চামড়ার তৈরি লেডিস ও জেন্টস ব্যাগ, বেল্ট, ওয়ালেট, মিনি ব্যাগ, জ্যাকেটে আগ্রহ দেখাল প্রচুর মানুষ। হাট শেষে অনেকেই খুঁজে খুঁজে হাজির হলেন মাকসুদার ছোট্ট কারখানায়। পাওয়া গেল উত্তরবঙ্গের দুইটি বড় চেইন স্টোরের সাপ্লাইয়ের কাজ। ধীরে ধীরে ব্যবসার প্রসার হতে থাকল। অনেক করপোরেট কাস্টমার হাজির হলেন। ‘তখন করপোরেট গিফট আইটেমও করতে শুরু করলাম। কিন্তু সবই চামড়ার।’

অর্ডার বেড়ে যাওয়ায় কারখানা বড় করতে হলো। ঠিক করলেন, ‘কাটিং থেকে ফিনিশিং’ সবই নিজের কারখানায় করবেন। নিজেও প্রশিক্ষণ নিলেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, বিসিক, এসএমই ফাউন্ডেশন, স্কিটি থেকে। কারখানা বড় করতে শুরু করলেন। কর্মীর সংখ্যা বাড়তে থাকল, নিতে হলো ব্যবস্থাপকও। ‘কর্মী ব্যবস্থাপনা নিয়েই বিপদে পড়লাম। আমি কারখানাতে না থাকলে উৎপাদন কমে যায়। আবার কারখানাতে থাকলে অর্ডারের জন্য অফিসে অফিসে যাওয়া কিংবা ঢাকা বা ঢাকার বাইরের মেলাতে অংশ নেওয়া সম্ভব হয় না।’

এরই মধ্যে বিভিন্নজনের মাধ্যমে দেশের বাইরেও নিজের পণ্য পাঠানো শুরু হলো। এখন তাঁর বানানো চামড়াজাত পণ্য যাচ্ছে জাপান, গ্রিস, সুইজারল্যান্ড, সৌদি আরব ও চীনে। দুই হাতে এত সব কাজ একা সামলানো কঠিন হয়ে পড়ল মাকসুদার। ২৮ জন সার্বক্ষণিক কর্মী। অর্ডার বেশি থাকলে সমসংখ্যক খণ্ডকালীন কর্মীর ব্যবস্থাপনা, অর্ডার, কারখানা, মেলা করে রাতে মেয়ের দেখভাল। অবশেষে ২০১৮ সালের শেষে স্বামী
মোহাম্মদ শোয়াইব হোসেন রাজি হলেন নিজের চাকরি ছেড়ে স্ত্রীর প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হতে।

এখন দুজন মিলে এগিয়ে নিচ্ছেন শাবাব লেদার। উৎপাদন ও কর্মী ব্যবস্থাপনা দেখভাল করেন শোয়াইব হোসেন। আর ‘ওনার হাতে কারখানা শপে দিয়ে আমি অর্ডার আর মেলার কাজ করি, মার্কেটিং আর বিক্রিটা সামলাই’, বললেন মাকসুদা।

মেয়ে আফরা হোসেন আর ছেলে আবরার হোসেন শাবাবকে নিয়ে এখন আবার ঢাকাতে বাসা নিয়েছেন। সামনের দিনগুলোতে রপ্তানি বাড়িয়ে নিজের একটি শোরুম করতে চান মাকসুদা। আর বাড়াতে চান আনুষ্ঠানিক রপ্তানি। সবার সহযোগিতা থাকলে স্বপ্ন পূরণ হয়েই যাবে, জন্মমাসে এমন আশার কথা জানালেন উদ্যোক্তা মাকসুদা খাতুন।