পেঁয়াজের ঝাঁজ কমতে শুরু করেছে

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

অবশেষে পাইকারি বাজারে ২০০ টাকার নিচে নেমে এসেছে পেঁয়াজের দাম। আজ সোমবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে কেজিতে ৫০ থেকে ৭০ টাকা কমেছে দেশি পেঁয়াজের দাম। একই সঙ্গে কমেছে আমদানি করা পেঁয়াজের দামও। তবে খুচরা বাজারে এখনো ২০০ টাকার কাছাকাছি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন চড়া দামের কারণে ঘরে ঘরে এখন পেঁয়াজের ব্যবহার কমে গেছে। এতে বাজারগুলোতে ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম। পেঁয়াজের সরবরাহ আসার খবরে এবং বিভিন্ন বাজারে ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযানে পেঁয়াজের ঝাঁজ আজ কিছুটা কমে গেছে।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এর পরই অস্থির হয়ে ওঠে দেশের পেঁয়াজের বাজার। ৬০ থেকে ৭০ টাকার পেঁয়াজ এক লাফে শতক ছাড়ায়। এরপর বাজারে দাম বাড়তে বাড়তে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল পেঁয়াজ। চলতি মাসে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতের পর হঠাৎ করেই আবার দাম বাড়তে থাকে। দুই দিনের মধ্যে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজির পেঁয়াজ বেড়ে ২০০ টাকার ওপরে উঠে যায়। খুব দ্রুতই দাম আড়াই শ টাকার কাছাকাছি চলে আসে। গত শুক্র ও শনিবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে ২৫০ টাকার আশপাশে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়। তবে গতকাল রোববার থেকে কিছুটা কমে আসতে থাকে দাম।

আজ রাজধানীর অন্যতম পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা দরে। মিসর ও মিয়ানমারের পেঁয়াজের দাম আরও কমেছে। কেজি প্রতি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পুরান ঢাকার পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে পেঁয়াজের দাম আরও কমেছে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকা দরে। মিয়ানমারের ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৭০ টাকা কেজি দরে। গতকালও ২৩০ টাকা থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে দেশি পেঁয়াজ।

শ্যামবাজারের পাইকারি আড়তদার সুভাষ বাবু বলেন, তিন কারণে পাইকারি বাজারে কমেছে পেঁয়াজের দাম। এক. বিমানে করে পেঁয়াজ আসছে। দুই. ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ ইতিমধ্যে চলে এসেছে চট্টগ্রামে। তিন. ভোক্তারা পেঁয়াজ খাওয়াই কমিয়ে দিয়েছে।

ক্রেতা না থাকায় চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দামও কমতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামে প্রথম আলোর প্রতিবেদক। আজ সোমবার মিয়ানমার থেকে আমদানি হওয়া পেঁয়াজ কেজি প্রতি ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক দিন আগে গতকাল রোববার বিকেলে তা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এ হিসাবে কেজিপ্রতি প্রায় ৪০ টাকা কমেছে। মিয়ানমার ছাড়াও তুরস্ক, চীন ও মিসরের পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গতকাল এসব দেশের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ১৬০-১৭০ টাকায়।

খাতুনগঞ্জের পাইকারি আড়ত হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেট কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস প্রথম আলোকে বলেন, রোববার ও আজ সোমবার—এই দুই দিনে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম ৭০ টাকা কমেছে। ক্রেতা না থাকায় মূলত ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ ছেড়ে দিতে চাইছেন। এতে দাম দ্রুত কমছে।

পাইকারি বাজারে কমলেও খুচরায় এখনো ২০০ টাকার বেশি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা জানান, তাঁরা বেশি দরে পেঁয়াজ কিনেছেন। পাইকারিতে দাম কমায় খুচরায়ও এক-দুদিনের মধ্যে দাম কমবে।

বগুড়া প্রতিনিধি জানান, শহরের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার রাজাবাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম আজকে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি। মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। খুচরা বাজারে এর থেকে ২০ টাকা করে দাম বেশি পড়ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, ম্যাজিস্ট্রেটের ঘন ঘন মনিটরিংয়ের কারণে দাম কমে এসেছে। পাইকারি কেনা চালান থেকে সর্বোচ্চ ১০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করতে পারছেন বিক্রেতারা। এ ছাড়া আমদানি করা পেঁয়াজও এসেছে।

রাজাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল প্রসাদ রাজ বলেন, ২ জন ম্যাজিস্ট্রেট এই বাজারে সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন। কেনা রেটের চেয়ে সর্বোচ্চ ১০ টাকা বেশি নেওয়ার দর বেঁধে দিয়েছেন। এর চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করলে জরিমানা করছেন। গতকাল প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ২০০ থেকে ২৪০ টাকা। মিয়ানমার থেকে আসা পেঁয়াজের দাম ছিল ২০০ থেকে ২২০ টাকা।

পাবনার বেড়া উপজেলার প্রথম আলোর প্রতিনিধি জানান, এখানকার সবচেয়ে বড় বাজার সাঁথিয়ার করমজা হাটে দেশি পেঁয়াজের কেজি ১৫০ থেকে ১৭৫ টাকা। তবে গত শনিবার বাজারে নতুন পেঁয়াজ উঠেছিল। ওই দিন তা ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। তবে গতকাল ও আজ কোনো নতুন পেঁয়াজ ওঠেনি।

হাটের আড়তদার মুননাফ প্রামাণিক বলছেন, বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আসছে ও নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসছে, এমন খবরে দাম কমেছে। গতকাল প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ১৭৫ থেকে ২২৫ টাকা। আজ তা কমেছে।

পাবনার খুচরা বাজারেও পেঁয়াজের দাম কমেছে। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন মাসুদ মিলাদ, চট্টগ্রাম; আনোয়ার পারভেজ, বগুড়া ও বরুণ রায়, বেড়া, পাবনা]