গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা করছে এজেন্ট ব্যাংকিং

এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী এখন সহজেই ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে পারছে। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থও সহজে পৌঁছে যাচ্ছে সুবিধাভোগীদের কাছে। আবার ঋণও পাচ্ছেন কেউ কেউ। এর মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামগঞ্জে। চাঙাও হচ্ছে প্রত্যন্ত এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য। যাতে বদলে যাচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি।

চাহিদার কারণে শুধু এক বছরেই এজেন্ট ব্যাংকিং সেবায় এজেন্ট ও আউটলেটের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আর আমানত ও প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০০ শতাংশের বেশি। তবে আমানত যে হারে বাড়ছে, ঋণ বিতরণ সেভাবে বাড়ছে না। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে এজেন্ট ব্যাংকিং সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন। ওই প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ২২টি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি পেলেও সেবা চালু করেছে ১৯টি ব্যাংক। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে এজেন্ট ছিল ৩ হাজার ৫৮৮টি, গত সেপ্টেম্বরে যা বেড়ে হয়েছে ৬ হাজার ৫৩১। আর এক বছরে আউটলেট ৫ হাজার ৩৫১ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯ হাজার ৩৯১। এসব এজেন্ট ও আউটলেটের ৮৫ শতাংশই গ্রামে।

এক বছরেই এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার গ্রাহকও বেড়েছে। ১৭ লাখ ৭৭ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৯ লাখ ৬৪ হাজার। একই সঙ্গে আমানতের পরিমাণ ২ হাজার ১২ কোটি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৭০ কোটি টাকা।

তবে এসব সেবায় ঋণ বিতরণের পরিমাণ মাত্র ৩০৫ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলো গ্রাম থেকে আমানত সংগ্রহ করলেও সেভাবে ঋণ বিতরণ করছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংকগুলো যাতে এজেন্টদের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ বাড়ায়, এ জন্য তাগাদা দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ নিয়ে কাজ করছে।

ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফা কে মুজেরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার কারণে ব্যাংকিং সেবা গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রামের আমানত পাচ্ছে ব্যাংকগুলো। তবে নজর রাখতে হবে, যাতে গ্রামের সব টাকা শহরে চলে না আসে। এতে বৈষম্য বেড়ে যাবে।’

ব্যাংকগুলো গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এজেন্টদের মাধ্যমে ১১ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকার সমপরিমাণ প্রবাসী আয় বিতরণ করেছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে পুরুষ গ্রাহকদের তুলনায় নারী গ্রাহকেরা অনেক পিছিয়ে রয়েছেন। এ খাতের ব্যাংক হিসাবের ৬২ শতাংশ পুরুষের, ৩৭ শতাংশ নারীর ও ১ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক গ্রাহকের। আর আমানতের ৬৮ শতাংশ পুরুষ আর ২৭ শতাংশ নারী গ্রাহকদের। বাকি ৫ শতাংশ আমানত প্রাতিষ্ঠানিক গ্রাহকগুলোর।

ঋণ নেওয়ার দিক দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক গ্রাহকেরা এগিয়ে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ৫১ শতাংশই নিয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক গ্রাহকেরা। বিতরণ করা বাকি ঋণের ৩১ শতাংশ পুরুষ এবং ১৮ শতাংশ নারী গ্রাহকেরা পেয়েছেন।

হিসাব খোলার দিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে যথাক্রমে ব্যাংক এশিয়া ও ইসলামী ব্যাংক। আমানত সংগ্রহের দিক দিয়ে শীর্ষে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে যথাক্রমে ডাচ্-বাংলা ও ইসলামী ব্যাংক। ঋণ বিতরণে শীর্ষে ব্যাংক এশিয়া। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে দি সিটি ও ব্র্যাক ব্যাংক।

ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী প্রথম আলোকে বলেন, এজেন্টগুলো সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। আমানত সংগ্রহ করছে। ঋণ বিতরণে জোর দেওয়ার সময় এসেছে। পাশাপাশি এজেন্টদের আরও কোনো সেবায় কাজে লাগানো যায় কি না, তা নিয়েও ভাবতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনাসংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে। এজেন্ট ব্যাংকিং সেবায় ইউনিয়নে ইউনিয়নে পাওয়া যাচ্ছে ব্যাংকিং সেবা, স্কুলেও বসেছে ব্যাংকিং কার্যক্রম। সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় দেওয়া ভাতাও গ্রামগঞ্জে সহজে পাওয়া যাচ্ছে এজেন্টদের মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ-টু-আই প্রকল্পের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে সেবা সম্প্রসারণও করছে অনেক ব্যাংক।