সৌদির 'আরামকো' শেয়ারবাজারে, তেল খাতের জৌলুশ হারানোর ইঙ্গিত

সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি আরামকো শেয়ারবাজারে আসছে। প্রাথমিকভাবে কোম্পানির মূল্যায়ন হয়েছে ১ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলার। প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) থেকে তারা ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার তুলবে। পৃথিবীর বৃহত্তম প্রাথমিক গণপ্রস্তাব হতে যাচ্ছে এটি। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি তেল খাতের প্রাধান্য হারানোর ইঙ্গিত। তবে এই প্রক্রিয়া মসৃণ হবে না বলেই মনে করছেন তাঁরা।

কয়েক বছর ধরেই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কম। এ কারণে সৌদি আরবের মতো তেলনির্ভর অর্থনীতি মার খাচ্ছে। তারা এখন তেলনির্ভরতা থেকেও বেরিয়ে আসতে চাইছে। কিন্তু তেল খাতের এই সংকোচনে বাজার বরং আরও অশান্ত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। অস্থির হতে পারে ভূরাজনীতি। আশাবাদীরা মনে করছেন, পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা বাড়ার কারণে তেলেরর চাহিদা ও সরবরাহ—দুটিই কমবে।

এই খাতে এখন বিনিয়োগকৃত পুঁজির পরিমাণ ১৬ ট্রিলিয়ন ডলার। এখানে কাজ করছেন এক কোটি লোক। তাই এত বড় একটি খাতকে সংকুচিত করার ফল ভালো হবে না বলে দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বাজারে চাহিদা থাকা অবস্থায় এই খাত থেকে পুঁজি সরানোর চেষ্টা করা হলে এবং উৎপাদন কমতে থাকলে তেলের দাম বাড়তে পারে। অন্যদিকে ওপেক ধসে পড়তে পারে। আর উৎপাদন ক্ষেত্র কমে গেলে দুর্ঘটনা ও সন্ত্রাসী হামলায় বাজারব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, সৌদি সরকার এই মুহূর্তে তেলের ওপর নির্ভরতা কমাতে চাইছে। অর্থনীতির হাল ফেরাতে জোর দেওয়া হচ্ছে ভিশন ২০৩০-এ। বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে বেসরকারীকরণ তারই অংশ। এই মুহূর্তে সৌদি আরবের আয়ের ৯০ শতাংশ আসে তেল বিক্রি থেকে। অর্থনীতিকে বহুমুখী করে তোলা এবং এই নির্ভরতা কমিয়ে আনাই সরকারের বর্তমান লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই শেয়ারবাজারে পদার্পণ আরামকোর।

এই প্রক্রিয়ার রাজনৈতিক তাৎপর্য আরও বড়। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, বিশ্বের ২৬টি দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশ বা তার বেশি আসে তেল থেকে। অর্থনীতির যুক্তিতে আলজেরিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, নাইজেরিয়া ও ভেনেজুয়েলার মতো তেল উৎপাদনকারীরা উৎপাদন কমিয়ে দিলে ব্যাপারটা শুধু বেদনাদায়ক নয়, কিছু ক্ষেত্রে বিপর্যয়করও হতে পারে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ৪০ শতাংশ জ্বালানির চাহিদা মেটায় তেল। দেশটি মূলত ফ্র্যাকিং পদ্ধতিতে তেল উত্তোলন করে। কিন্তু এই পদ্ধিতে দূষণ বেশি হয় বলে এই শিল্প একসময় সংকুচিত হবে। এতে যুক্তরাষ্ট্র তেলের জন্য বিদেশিদের ওপর নির্ভরশীল হবে, যদিও রাজনীতি ও অর্থনীতিতে সে আরও ঘরমুখী হচ্ছে।

আরামকোর আইপিওর টাকা দিয়ে সৌদি আরব অর্থনীতির বহুমুখীকরণ করবে। তবে আন্তর্জাতিক শেয়ার বিশ্লেষক সংস্থা ‘আইজি গ্রুপ’-এর প্রধান বাণিজ্য উপদেষ্টা ক্রিস বুয়েচাম্প বলেন, এই মুহূর্তে আরামকোতে বিনিয়োগ যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষত সেপ্টেম্বর মাসেই আরামকোর দুটি তেলের খনিতে ড্রোন হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববাজারে তেল আমদানিতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ভবিষ্যতেও হামলা চালানোর হুমকি দিয়ে রেখেছে ওই সংস্থা। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামও লাফিয়ে বাড়ার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করেন বুয়েচ্যাম্প।

তাই আরামকোর আইপিও তেল সাম্রাজ্যের শেষের শুরু বলে মানছেন বিশ্লেষকেরা। কিন্তু রাজনীতি ও অর্থনীতিতে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর ক্ষমতা তেলের আরও কয়েক দশক থাকবে।