হয়রানির আশঙ্কা অর্থনীতির গতি রুদ্ধ করছে: মনমোহন সিং

মনমোহন সিং। ছবি: রয়টার্স
মনমোহন সিং। ছবি: রয়টার্স

ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছেন, নানা হয়রানির আশঙ্কা ভারতের অর্থনীতির গতি রুদ্ধ করছে। তিনি বলেন, বহু শিল্পপতিই তাঁকে বলেছেন যে সরকারি প্রতিষ্ঠানের হয়রানির ভয়ে আছেন তাঁরা। ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ দেওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছে না। ব্যর্থ হলে কী হতে পারে, সেই আশঙ্কায় উদ্যোক্তারা নতুন প্রকল্প হাতে নিতেও ভয় পাচ্ছেন। এর সঙ্গেই যোগ হয়েছে কর নিয়ে হয়রানির আশঙ্কা। এ সবকিছুই অর্থনীতির গতি রুদ্ধ করছে।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আগের সরকারের সব আর্থিক বন্দোবস্ত সন্দেহের চোখে দেখা, নোটবন্দীর মতো ‘হঠকারী’ পদক্ষেপ দেশটির অর্থনীতিকে ব্যাপক ঝুঁকির পথে ঠেলে দিয়েছে।

আজ মঙ্গলবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘ইকোনমিক টাইমস’-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে মনমোহন সিং এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, চীনের প্রবৃদ্ধি হ্রাস, তেলের দাম হ্রাসসহ আন্তর্জাতিক অর্থনীতির একাধিক বিষয় ভারতের জন্য বিপুল সম্ভাবনার রাস্তা খুলে দিয়েছে। তবে তাকে কাজে লাগাতে হলে প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। নাগরিক ও রাষ্ট্রের পারস্পরিক আস্থা এবং আত্মবিশ্বাস একটি অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

সম্প্রতি নানা পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ভারতের অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয়। চাহিদা, কর্মসংস্থান, শিল্পোৎপাদন, অবকাঠামো, রপ্তানি—অর্থনীতির সব সূচকেই ভারত এখন তলানিতে। দেশটির কেন্দ্র সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েও কিছু করতে পারছে না। অর্থনীতিবিদেরাও মনে করছেন, অদূর ভবিষ্যতে এসব পদক্ষেপের সুফল ঘরে ওঠার আশা কম। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকেও প্রবৃদ্ধির হার আশাপ্রদ হবে না।

উদ্বেগের বিষয়টি সরকারও বুঝতে পারছে। গতকাল সোমবারই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ লোকসভায় এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে জানান, অর্থনীতিকে চাঙা করতে সরকার বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলছে। তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দেশটির অর্থ প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর মনে করছেন, জি-২০ দেশগুলোর মধ্যে এখনো ভারতের অর্থনীতি দ্রুততম।

মনমোহন মনে করছেন, বর্তমানে মূল সমস্যা হচ্ছে ভারতের মানুষের হাতে টাকার প্রবাহ কমে গেছে। পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিরও সৃষ্টি হয়েছে। তাই যাঁদের হাতে টাকা আছে, তাঁরাও ব্যয়ের বেলায় সতর্ক।

এর আগে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় পুরস্কার পাওয়ার পর ভারতে এসে বলেছিলেন, কেবল আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে, উৎসাহ জুগিয়ে কাজ হবে না। অর্থাৎ, করপোরেট কর কমানো বা ব্যাংক ঋণে সুদের হার কমিয়ে লোককে খরচে উৎসাহ দেওয়া—এসব কাজে দেবে না। তিনি মনে করেন, চাহিদার অভাবই এখন ভারতের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সমস্যা। বাজারে পণ্যের অভাব নেই। কিন্তু তা কেনার জন্য গরিব ও মধ্যবিত্তের হাতে টাকা নেই। সাধারণ মানুষ ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। তাই জোগান থাকলেও চাহিদা বাড়ছে না ভারতের বাজারে। সে জন্য তাঁর পরামর্শ, শুধু বড়লোকদের হাতে টাকা তুলে দিলে হবে না। গরিব ও মধ্যবিত্তদের হাতে টাকা তুলে দেওয়ার প্রয়োজনটাই বেশি। এই পরিস্থিতিতে সমস্যার গোড়ায় যেতে হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে হবে।