বড় বিনিয়োগে অ্যাপেক্স

নতুন করে বড় ধরনের ব্যবসা সম্প্রসারণে যাচ্ছে দেশের শীর্ষস্থানীয় জুতা তৈরি ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার। এ জন্য ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে কারখানা সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন করছে কোম্পানিটি। যেখানে মাসে ৪ লাখ জোড়া জুতা তৈরি হবে। নতুন করে কর্মসংস্থান হবে প্রায় দেড় হাজার লোকের। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এই সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের কাজ শেষে উৎপাদন শুরু করা হবে বলে কোম্পানিটি জানিয়েছে। 

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার তাদের পরিচালনা পর্ষদের সভায় ব্যবসা সম্প্রসারণে নতুন কারখানা করার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত শেয়ারধারীদের জানানো হয়েছে। অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কারখানা সম্প্রসারণে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ১৯৬ ডেসিমেল বা প্রায় ৬ বিঘা জমি কিনছে। অ্যাপেক্স ফার্মা ও অ্যাপেক্স এন্টারপ্রাইজ নামে কোম্পানিটির সহযোগী দুই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকায় এই জমি কেনা হচ্ছে। 

অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে কোম্পানিটির আলাদা দুটি ইউনিট রয়েছে, যা ইউনিট-১ ও ইউনিট-২ নামে পরিচিত। এর মধ্যে ইউনিট-১-এ রপ্তানির জুতা তৈরি হয়। অন্যটিতে তৈরি হয় স্থানীয় বাজারের জুতা। ২০১৭ সালে রপ্তানির জন্য স্থাপিত ইউনিট সম্প্রসারণ করা হয়েছিল। এবার দেশি বাজারের জন্য জুতা তৈরির ইউনিট বা কারখানা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। ১৯৯০ সালে ব্যবসা শুরুর পর স্থানীয় বাজারের জন্য জুতা তৈরির কারখানাটি সম্প্রসারণ করা হচ্ছে, এ জন্য বড় ধরনের বিনিয়োগ করছে। 

>
  • স্থানীয় বাজারের জন্য জুতা তৈরিতে নতুন করে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে কোম্পানিটি।
  • নতুন কর্মসংস্থান হবে দেড় হাজার লোকের।
  • বড় ধরনের বিনিয়োগের খবরে শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানীয় বাজারে অ্যাপেক্সের বিভিন্ন ধরনের জুতার চাহিদা ও বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। সেই চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখেই বড় ধরনের সম্প্রসারণে যাচ্ছে কোম্পানিটি। কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের স্থানীয় বাজারে অ্যাপেক্স প্রায় ৬৯৫ কোটি টাকার জুতা বিক্রি করে। আর সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে স্থানীয় বাজারে কোম্পানিটি বিক্রি করে ৭৬০ কোটি টাকার জুতা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে দেশের বাজারে কোম্পানিটির বিক্রি বেড়েছে ৬৫ কোটি টাকা বা প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ। 

জানতে চাইলে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের কোম্পানি সচিব মো. ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থানীয় বাজারে আমাদের জুতার চাহিদা দিনকে দিন বাড়ছে। সেই চাহিদা পূরণ করতে আমরা স্থানীয় বাজারের জন্য বড় ধরনের কারখানা সম্প্রসারণে যাচ্ছি। যেখানে প্রতি মাসে ৪ লাখ জোড়া জুতা তৈরি হবে। সম্প্রসারিত কারখানায় উৎপাদন শুরু হলে তাতে দেশের বাজারে অ্যাপেক্সের অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে।’ 

কোম্পানিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উৎপাদন বাড়াতে নতুন কেনা জমিতে ৬০ কোটি টাকা খরচ করে কারখানা ভবন তৈরি করা হবে। মেশিনারিজ কেনা হবে ২০ কোটি টাকার। জমি ক্রয়, ভবন নির্মাণ, মেশিনারিজ ক্রয়সহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এর আগে ২০১৭ সালে রপ্তানির জুতা তৈরির কারখানা সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে প্রায় ৮২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল কোম্পানিটি। 

কোম্পানিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে দেশি বাজারে অ্যাপেক্সের জুতার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় পুরুষের জুতা ও স্যান্ডেল। তবে মেয়েদের জুতা ও স্যান্ডেলের বিক্রিতে কয়েক বছর ধরে ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এ কারণে কোম্পানিটি পুরুষের পাশাপাশি মেয়েদের জুতা ও স্যান্ডেলের বাজারে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে চায়।

২০১৭ সালে রপ্তানি ইউনিটে বড় ধরনের সম্প্রসারণের ফলে বিদেশে বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে অ্যাপেক্স বিদেশে ৭৯৯ কোটি টাকার জুতা বিক্রি করেছিল। পরের বছর, তথা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০০ কোটি টাকায়।

এদিকে ব্যবসা বাড়াতে বড় ধরনের বিনিয়োগের খবরে শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে। গত দুই দিনে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৫ টাকা ৩০ পয়সা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২৫ টাকা ৩০ পয়সায়। ১৪ নভেম্বর বা বৃহস্পতিবার কোম্পানিটি বিনিয়োগের এ ঘোষণা শেয়ারধারীদের জানিয়েছে। এরপর গত রবি ও সোমবার দুই কার্যদিবসই বাজারে এটির শেয়ারের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে গতকাল এক দিনেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এটির দাম সাড়ে তিন টাকা বা দেড় শতাংশের বেশি বেড়েছে। সর্বশেষ গত জুনে সমাপ্ত আর্থিক বছরের জন্য কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের ৫৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।

১৯৯০ সালে ব্যবসা শুরু করা এ কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৯৩ সালে। বর্তমানে এটি ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানি হিসেবে ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত। কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা, যা ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ১ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার শেয়ারে বিভক্ত।