তহবিল খুঁজছেন শতাধিক উদ্যোক্তা

জার্মানির গাড়ি নির্মাতা সনো মোটরস, স্মার্ট ঘড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পেবেল টাইম বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র কুলেস্ট কুলারের মতো বহু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে ক্রাউড ফান্ডিং বা গণ অর্থায়নের মাধ্যমে। বিশ্বের অনেক দেশেই নতুন প্রকল্প বা উদ্যোগ বাস্তবায়নে অনেকের থেকে এভাবে পুঁজি সংগ্রহ বহুল প্রচলিত প্রক্রিয়া। এ জন্য বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা রয়েছে।

বাংলাদেশেও একই প্রক্রিয়ায় তহবিল সংগ্রহের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিডি ভেঞ্চারের উদ্যোগে চালু হওয়া ফান্ড এসএমইতে শতাধিক উদ্যোক্তা তাঁদের তহবিলে চাহিদা দিয়েছেন। তাঁদের কেউ প্রকল্প শুরু করেছেন, আবার কেউ পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে রেখেছেন। পুঁজির অভাবে কেউ শুরু করতে পারছেন না, আবার কেউবা বড় হতে পারছেন না। এখন পুঁজি খুঁজতে অনলাইন মাধ্যমকে বেছে নিয়েছেন এসব উদ্যোক্তা।

তবে ক্রাউড ফান্ডিংয়ের কোনো নীতিমালা না থাকায় উদ্যোগ থমকে গেছে। কেউ তহবিল দিতে সাহসই করছেন না। আবার বিডি ভেঞ্চারের এমন উদ্যোগে সহায়তা দিতে এগিয়ে আসা নাথান অ্যাসোসিয়েট ছেড়ে যাচ্ছে।

বিডি ভেঞ্চারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিক উল আজম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাথান অ্যাসোসিয়েট ক্রাউড ফান্ডিং পরিচালনা খরচ দিতে চেয়েছিল। তারা মাঝপথে খরচ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের সঙ্গে থাকতে তাদের অনুরোধ করা হয়েছে।’

শফিক উল আজম বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যে অবস্থা, তাতে ভবিষ্যতে নতুন উদ্যোক্তাদের তহবিল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এ কারণে এমন অর্থায়ন ব্যবস্থা জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরা চেষ্টা করছি এটা সফল করার।’

ফান্ড এসএমই সূত্র জানায়, শতাধিক উদ্যোক্তা তহবিলের জন্য চাহিদাপত্র দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পোশাক, কৃষি, পর্যটন, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, তথ্যপ্রযুক্তি, পাট, লাইফস্টাইল, পরিবহন, ডিজিটাল মার্কেটিং, প্রকৌশল, শিক্ষা, ফুড চেইনসহ নানা খাতের উদ্যোক্তা।

ডিজিটাল দরজি নামে একটি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান খুঁজছে ২১ লাখ টাকার তহবিল। প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা ফারজানা আক্তার অনলাইনের মাধ্যমে কাজের আদেশ রাখার ব্যবস্থা করতে চান। আবার বাসায় পৌঁছে দেওয়ারও ব্যবস্থা রাখতে চান। শুধু মহিলাদের জন্য চালু করতে চান এমন উদ্যোগ। তবে অনলাইনের পাশাপাশি সরাসরি এসেও কাজের আদেশ দেওয়ার সুযোগ থাকবে।

আবার সিদ্দিক গ্রুপ অ্যান্ড এয়ার সিস্টেম (সিগাস) টারবাইনের মাধ্যমে বায়ু থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন করে। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি বিদেশি মালিকানাধীন কোটসের পোশাক কারখানায় আড়াই কিলোওয়াটের জ্বালানি সরবরাহ শুরু করেছে। এটি বাংলাদেশের প্রথম পোশাক কারখানা, যারা বায়ু জ্বালানি ব্যবহার করছে। আবার কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভে মোবাইল অপারেটর রবির টাওয়ার চলছে সিগাসের বায়ু বিদ্যুতে।

সিগাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামিন ইশরাক সিদ্দিকি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের বাতাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে, আমরা এমন প্রযুক্তি আমরা তৈরি করেছি। এ জন্য অস্ট্রেলিয়া থেকে ৮ বছরের জন্য পেটেন্টও পেয়েছি। ইতিমধ্যে দুই প্রতিষ্ঠানে জ্বালানি দেওয়া হচ্ছে।’

সামিন ইশরাক সিদ্দিকি আরও বলেন, ‘আমি চাইছি কারখানা করে সারা দেশেই এটা ছড়িয়ে দিতে। এটা খুবই সম্ভাবনাময় খাত। এ জন্য ৩০-৩৫ লাখ টাকার তহবিল প্রয়োজন।’

বিডি ভেঞ্চারের সাবেক এমডি ও ভেঞ্চার পরামর্শক শওকত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের এমন উদ্যোগ এখন খুবই প্রয়োজন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নীতিমালা না থাকায় কেউ তহবিল দিতে চাইছে না। এ কারণে এখনো কোনো প্রকল্প সফল হতে পারেনি। যত দ্রুত সরকারের পক্ষ থেকে এদিকে মনোযোগ দেওয়া হবে, ততই মঙ্গল।

যেভাবে বিনিয়োগ করা যাবে
ফান্ড এসএমইতে বিভিন্ন মডেলে তহবিল জোগান দেওয়া যাবে। ইকুইটি মডেলে পুঁজি দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকানাতেও যুক্ত হওয়ার সুযোগ আছে। আবার রিওয়ার্ড মডেলে টাকা জোগান দিয়ে পরবর্তী সময়ে সেবা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। আবার নির্দিষ্ট পরিমাণ তহবিল জোগান দিয়ে একটা সময় পর মুনাফা পাওয়ার ব্যবস্থা আছে। তবে সবকিছুই নির্ভর করে বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তার মধ্যে হওয়া চুক্তি ও সম্পর্কের ওপর।