গুজবে লবণ কেনার হিড়িক, শিল্প মন্ত্রণালয় বলছে ঘাটতি নেই

কারওয়ান বাজারে লবণ কিনতে ক্রেতাদের ভিড়। কেউ কিনছেন তিন কেজি, কেউ পাঁচ কেজি। আজ বেলা তিনটার দিকে। ছবি: রাজীব আহমেদ
কারওয়ান বাজারে লবণ কিনতে ক্রেতাদের ভিড়। কেউ কিনছেন তিন কেজি, কেউ পাঁচ কেজি। আজ বেলা তিনটার দিকে। ছবি: রাজীব আহমেদ

রাজধানীতে হঠাৎ করেই লবণ কেনার হিড়িক পড়েছে। ক্রেতারা বলছেন, তাঁরা শুনেছেন লবণের কেজিপ্রতি দর ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এ আশঙ্কায় তাঁরা বাড়তি লবণ কিনে রাখছেন।শিল্প মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, দেশে বর্তমানে সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টনের বেশি ভোজ্যলবণ মজুত রয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের লবণচাষিদের কাছে ৪ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন এবং বিভিন্ন লবণ মিলের গুদামে ২ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ মজুত রয়েছে।

আজ মঙ্গলবার বেলা তিনটায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের দোকানগুলোয় লবণ কিনতে প্রচুর মানুষের ভিড় দেখা যায়। কেউ দুই কেজি, কেউ পাঁচ কেজি লবণ কিনছিলেন। এমনকি বন্ধ দোকান খুলেও অনেক বিক্রেতা লবণ বিক্রি করেন।

কারওয়ান বাজারে আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন। অবশ্য বিক্রেতারা সেখানে প্যাকেটের গায়ে লেখা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) অনুযায়ী ৩৫ টাকা দরে লবণ বিক্রি করছিলেন।

সকালে রাজধানীর কাজীপাড়া, আগারগাঁও, তেজগাঁও ও বেগুনবাড়ি এলাকার বাজার ও মুদি দোকানেও লবণ কিনতে ক্রেতাদের বাড়তি ভিড় দেখা যায়।

কাজীপাড়ার খালেক জেনারেল স্টোরের মালিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তিনি বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত পাঁচ বস্তা (প্রতি বস্তায় ২৫ কেজি করে) লবণ বিক্রি করেছেন। তাঁর দোকানে দাঁড়িয়ে প্রতি কেজি ৩০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তিনি প্রতি কেজি লবণ সাড়ে ২৬ টাকায় কিনেছেন। তিনি সব সময় এমআরপির চেয়ে কম দামে বিক্রি করেন।

উত্তরার ১২ ও ১৩ নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন দোকান ঘুরে প্রথম আলোর ফটোসাংবাদিক খালেদ সরকার জানান, বেশ কিছু দোকানে বিক্রেতারা বলেছেন লবণ নেই। সব বিক্রি হয়ে গেছে। একটি দোকানে তিনি লবণ পেয়েছেন। দাম চাওয়া হয়েছে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা।

বেগুনবাড়ি কুমিল্লা জেনারেল স্টোর অ্যান্ড কনফেকশনারিতে ৪০ টাকা কেজিতে লবণ বিক্রি করতে দেখা যায়, যা এমআরপির চেয়ে ৫ টাকা বেশি।

বাজারে এখন সবচেয়ে ভালো মানের লবণের প্যাকেটের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লেখা ৩৫ টাকা। আর সাধারণ লবণের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ২৫ টাকা। খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিপণনকারী কোম্পানি এক কেজি লবণ বিক্রি করেন ২৫ থেকে ২৬ টাকা দরে। এত দিন কারওয়ান বাজারের মতো বড় দোকানে এসব লবণ ৩০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যেত।

আজ সকালে ক্রেতাদের বাড়তি চাপ দেখায় খুচরা বিক্রেতারা এখন আর ছাড় দিয়ে বিক্রি করছেন না। আবার দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চড়া দামে লবণ বিক্রির খবর আসছে।

কারওয়ান বাজার থেকে লবণ কিনে ফিরছিলেন জয়লান আবেদিন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৩০ টাকার পেঁয়াজ ২৫০ টাকা হয়ে গিয়েছিল। এখন যদি লবণেও তেমন হয়। তাই কিনে রাখছি।’

লবণের বাজারের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান এসিআই সল্ট বলছে, লবণের কোনো ঘাটতি নেই। তারা লবণের দাম কোনোভাবেই বাড়ায়নি এবং বাড়াবে না। বরং নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি কেউ এসিআইয়ের লবণ বিক্রি করছে কি না, সেটা তারা নজরে রাখবে।

ঘাটতি নেই, বলছে মন্ত্রণালয়
শিল্প মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, দেশে বর্তমানে সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টনের বেশি ভোজ্যলবণ মজুত রয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের লবণচাষিদের কাছে ৪ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন এবং বিভিন্ন লবণ মিলের গুদামে ২ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ মজুত রয়েছে।

এ ছাড়া সারা দেশে বিভিন্ন লবণ কোম্পানির ডিলার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে লবণ মজুত রয়েছে। পাশাপাশি চলতি নভেম্বর মাস থেকে লবণের উৎপাদন মৌসুম শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া ও মহেশখালী উপজেলায় উৎপাদিত নতুন লবণও বাজারে আসতে শুরু করেছে।

দেশে প্রতি মাসে ভোজ্যলবণের চাহিদা কমবেশি ১ লাখ মেট্রিক টন। অন্যদিকে, লবণের মজুত আছে সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টন। সে হিসাবে লবণের কোনো ধরনের ঘাটতি বা সংকট হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, একটি স্বার্থান্বেষী মহল লবণের সংকট রয়েছে মর্মে গুজব রটনা করে অধিক মুনাফা লাভের আশায় লবণের দাম অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এ ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

লবণসংক্রান্ত বিষয়ে তদারকির জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) প্রধান কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এর নম্বর হচ্ছে: ০২-৯৫৭৩৫০৫ (ল্যান্ড ফোন), ০১৭১৫২২৩৯৪৯ (সেল ফোন)।

লবণসংক্রান্ত যেকোনো তথ্যের প্রয়োজনে কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করেছে মন্ত্রণালয়।