দ্রুততর সময়ে ইউটিআই চিহ্নিত হওয়া জরুরি

‘নিয়মিত অনুশীলনে আমরা যেসব রোগী পেয়ে থাকি, তাঁদের অধিকাংশের ক্ষেত্রে লোয়ার ইউরিনারি ট্র্যাক্ট সিম্পটম (এলইউটিএস) দেখা যায়, যা বর্তমানে খুবই পরিচিত একটি সমস্যা। মূত্রথলি বা মূত্র ইউরেত্রাতে (যে নালি দিয়ে প্রস্রাব শরীরের বাইরে বের হয়) যদি কোনো ইনফেকশন বা প্রদাহ হয়, সেটাকে আমরা এলইউটিএস বলি। এই রোগে আক্রান্ত রোগীরা প্রাথমিক পর্যায়ে বলে থাকেন, “আমাদের তলপেটে একটু অস্বস্তি ভাব”, “ঠিক ব্যথা নয়, তবে মনে হয় যেন বাথরুমে গেলে ভালো লাগবে”।’

কথাগুলো সার্জারি ও ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ তাজকেরা সুলতানা চৌধুরীর। তিনি হারপিকের চলমান ডিজিটাল ক্যাম্পেইন #HarpicAgainstUTI -এর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে একটি সচেতনতামূলক ভিডিও বার্তায় এসব কথা বলেছেন। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ইউটিআইয়ের ব্যাপকতা ও ভয়াবহতার বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে সম্প্রতি হারপিক ক্যাম্পেইনটি শুরু করেছে। ক্যাম্পেইনটির লক্ষ্য হলো দেশে শতভাগ নারীবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট নিশ্চিত করা এবং ইউটিআই বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা।

তাজকেরা সুলতানা চৌধুরীর বলেন, এলইউটিএস ক্ষেত্রে কখনো কখনো অনেকে বলেন যে টয়লেট সেরে আসার পর তাঁদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া করে। কেউ কেউ বলেন, ঘন ঘন টয়লেটে যেতে হয়। এটাকে চিকিৎসকেরা বলেন, ফ্রিকোয়েন্সি। এ অবস্থায় তাঁদের ঘণ্টায় দুই থেকে তিনবারও টয়লেটে যেতে হয়। আবার এমনও রোগী আসেন, যাঁদের ক্ষেত্রে আর্জেন্সি সমস্যা দেখা যায়। এই সমস্যাটা এ রকম যে তাঁর টয়লেটে যাওয়ার বেগ হলো, তিনি বুঝতে পারলেন যে তাঁর ‘এখন’ টয়লেটে যেতে হবে। এই ‘এখন’ মানে তাঁকে এক্ষুনি যেতে হবে। আবার কারও কারও রাতের বেলা বিছানা ভিজে যাওয়ার প্রবণতা থাকতে পারে, যেটা সাধারণত বাচ্চা কিংবা বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, নারীদের শতকরা ৫০ ভাগই জীবনের কোনো না কোনো সময় এলইউটিএসে আক্রান্ত হয়েছেন। পুরুষদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা অনেক কম, শতকরা প্রায় ১২ ভাগ।

তাজকেরা সুলতানা চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
তাজকেরা সুলতানা চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

এলইউটিএস সময়মতো চিহ্নিত করতে না পারলে তা আপার ইউরিনারি ট্র্যাক্ট সিম্পটমে (ইউইউটিএস) পরিণত হয় বলে জানান তাজকেরা সুলতানা। তিনি বলেন, এটি পরে ইউরেটার ও কিডনিকে আক্রান্ত করে। তখন রোগী ‘কোমরের দুই পাশে ব্যথা’ ‘পেছনে ব্যথা’ ইত্যাদি বলেন, কিন্তু সমস্যাটা ঠিক ধরতে পারেন না। অনেক সময় এটা কি কিডনির অসুবিধা, নাকি কোমরের হাড়ের ব্যথা, তা বুঝতে পারেন না। বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরও বেশি হয়। সুতরাং জরুরি ভিত্তিতে এই রোগ চিহ্নিত করা উচিত।

ইউটিআই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নারীদেরই বেশি। গড়ে প্রতি ১০ জন নারীর পাঁচজন ইউটিআই রোগে ভোগেন। দেশের নারীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস, বাজার, শপিং মলসহ ঘরের বাইরে যখন নানান কাজে অংশ নেন। এ সময় ব্যবহার উপযোগী পাবলিক টয়লেট না থাকার কারণে নোংরা বা অপরিচ্ছন্ন টয়লেটে যাওয়ার আশঙ্কায় খুব একটা পানি পান করেন না। করলেও তার পরিমাণ থাকে খুবই অল্প। এ ছাড়া টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করলেও তা চেপে রাখেন। এতে তাঁদের কেউ কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন ভয়াবহ ইউটিআই রোগে। সেই সঙ্গে দেখা দিচ্ছে কিডনির সমস্যাসহ নানান স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি।

এসব সমস্যার জন্য পরোক্ষভাবে নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন টয়লেটও অনেকাংশেই দায়ী। এ জন্যই #HarpicAgainstUTI ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে শতভাগ নারীবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট নিশ্চিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ইউটিআই রুখতে হলে দেশে নারীদের জন্য পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট ও শতভাগ নারীবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট নিশ্চিত করা এবং এই রোগের ভয়াবহতা থেকে রেহাই পেতে দ্রুততর সময়ে রোগ চিহ্নিত করাসহ সবার মধ্যে ইউটিআইয়ের বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা জরুরি।