সাত দিনে ২,৬৩১ কোটি টাকার কর আদায়

রাজধানীর বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবে আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলার শেষ দিনে গতকাল আয়কর রিটার্ন জমা দিতে করদাতাদের লাইন। ছবি: প্রথম আলো
রাজধানীর বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবে আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলার শেষ দিনে গতকাল আয়কর রিটার্ন জমা দিতে করদাতাদের লাইন। ছবি: প্রথম আলো

গ্যারেজে পার্ক করা অ্যাম্বুলেন্সের বনেটের ওপর রিটার্নের ফরম রেখে তা পূরণ করছেন পাঁচজন করদাতা। পাশের ভবনের বারান্দায় বসে একই কাজ করছেন ১০-১২ জন তরুণ করদাতা। ব্যাংকের কাউন্টারে করের অর্থ জমা দিচ্ছেন আরও অনেকে। বিভিন্ন কর অঞ্চলের বুথগুলোতেও যথারীতি রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য আছে করদাতাদের দীর্ঘ লাইন।

রাজধানীর বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবে সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলার শেষ দিনে গতকাল বুধবার দুপুরে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। অন্যান্য দিনের মতো ভিড় থাকলেও করদাতারা নির্বিঘ্নে রিটার্ন জমা দিতে পেরেছেন। সাত দিনের মেলায় ২ হাজার ৬১৩ কোটি টাকার কর আদায় হয়েছে।  

দুপুরে রিটার্ন জমা দিতে এসেছিলেন জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কর্মী মমতা রানী মণ্ডল। তিন বছর ধরে তিনি আয়কর মেলায় রিটার্ন দাখিল করেন। তিনি বললেন, ‘কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই রিটার্ন জমা দিলাম। মেলায় কর কর্মকর্তারা বেশ সহযোগিতা করেছেন। মেলার পরিবেশ আগের চেয়ে ভালো হয়েছে।’

প্রথমবার মেলায় রিটার্ন জমা দিতে আসা অগ্রণী ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কর্মকর্তা শেখ আতিয়ার রহমানকেও হাসিখুশি দেখা গেল। তিনি বললেন, ‘মেলায় আসার আগে ভেবেছিলাম, অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। কিন্তু রিটার্ন দাখিল করতে শেষ পর্যন্ত খুব বেশি সময় লাগেনি।’

এদিকে গতকাল মেলায় ২১টি বৃহৎ করদাতা প্রতিষ্ঠান (এলটিইউ) ২৯১ কোটি টাকা কর দিয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার হাতে করের পে-অর্ডার তুলে দেন প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা। যেসব প্রতিষ্ঠান কর দিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে আইএফআইসি ব্যাংক ৫০ কোটি টাকা, ট্রাস্ট ব্যাংক ২৫ কোটি টাকা, সিটি ব্যাংক ২০ কোটি টাকা, স্কয়ার ফার্মা ২০ কোটি টাকা, ঢাকা ব্যাংক ১৫ কোটি টাকা এবং প্রাইম ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, সাধারণ বীমা করপোরেশন প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকে ১০ কোটি টাকা আয়কর জমা দিয়েছে।

বৃহৎ করদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে পে-অর্ডার নেওয়ার পর এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, মেলায় করদাতারা কোনো রকম হয়রানি ছাড়াই রিটার্ন জমা দিয়েছেন। কর অঞ্চলেও একইভাবে হয়রানি ছাড়া রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে। কোনো কর কর্মকর্তা যদি কোনো করদাতাকে হয়রানি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বছর রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় সব শহরের পাশাপাশি ৫৬টি জেলা, ৫৬টি উপজেলাসহ মোট ১২০টি স্থানে কর মেলার আয়োজন করেছে এনবিআর। 

ঢাকায় গতকাল রাত আটটা পর্যন্ত রিটার্ন জমা নেওয়া হয়। নয়টার দিকে এনবিআর জানিয়েছে, সাত দিনের মেলায় ২ হাজার ৬১৩ কোটি টাকার কর আদায় হয়েছে। গত বছর আয়কর মেলায় ২ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকার কর আদায় হয়েছিল। সব মিলিয়ে এবারের মেলায় ১৮ লাখ ৬৩ হাজার করদাতা মেলা থেকে বিভিন্ন ধরনের সেবা নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রিটার্ন দিয়েছেন ৬ লাখ ৫৫ হাজার, যা আয়কর মেলায় নতুন মাইলফলক। নতুন ই-টিআইএন নিয়েছেন ৩২ হাজার ৯৬১ জন।

আয় কর মেলায় এবারই প্রথম রকেট, নগদ, বিকাশ, ইউপে, শিওর ক্যাশের মতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আয়কর প্রদানের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ৭ দিনে ৬ হাজার ৪২০ জন করদাতা ৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা কর প্রদান করেছেন।