ভারতে ৫ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শেয়ার বেচে দিচ্ছে সরকার

ভারতের বড় পাঁচ সংস্থার শেয়ার সরকারের হাতে রাখা হবে না। দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেসব সংস্থার শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে আছে ভারত পেট্রোলিয়াম (বিপিসিএল), কনটেইনার করপোরেশন (কনকর), শিপিং করপোরেশন, নিপকো ও টিহরি জলবিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম (টিএইচডিসিএল)। ভারতীয় পত্রিকা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সূত্রে এ খবর পাওয়া গেছে।

বিক্রি করে দেওয়া হবে এই পাঁচটি সংস্থা। এর মধ্যে আবার তিনটি সংস্থার নিয়ন্ত্রণ আর সরকারের হাতে থাকবে না। বাকি দুটির নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়া হবে অন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার হাতে।

মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ জানান, বিপিসিএল, শিপিং করপোরেশনের যত শেয়ার সরকারের হাতে রয়েছে, সবই বেসরকারি কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হবে। তবে বিপিসিএলের হাতে থাকা আসামের নুমালিগড় রিফাইনারির বেসরকারীকরণ হবে না। সেটি সরকার বা অন্য কোনো তেল কোম্পানি কিনে নেবে।

কনকরের ক্ষেত্রে সব সরকারি শেয়ার বেসরকারি কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হবে না। তবে সংস্থার নিয়ন্ত্রণও সরকারি হাতে থাকবে না। নিপকো ও টিহরির শেয়ার অবশ্য বেসরকারি কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হবে না। সংস্থা দুটির মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়া হবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এনটিপিসির হাতে। পাশাপাশি ৭৫টি জাতীয় সড়ক প্রকল্পও বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা। এক বছর আগে চালু হওয়া সড়ক প্রকল্পও এর মধ্যে থাকবে।

ভবিষ্যতে আরও অনেক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা থেকে ভারত সরকার বিনিয়োগ তুলে নেবে। সেই পথ প্রশস্ত করতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার আর্থিকবিষয়ক কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বেশ কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় সরকারের অংশীদারি ৫১ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হবে। নীতি আয়োগ আগেই বিলগ্নীকরণের জন্য ২৮টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে বাছাই করেছে। সংস্থার নিয়ন্ত্রণ সরকারি হাতে রাখা হবে কি না, তা আলাদাভাবে ঠিক হবে।

মূলত ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চার করতেই এই বিলগ্নীকরণ—ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় এ রকম ব্যাখ্যাই দিচ্ছে। বিনিয়োগ বাড়াতে ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অনুসরণে করপোরেট কর কমানো হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি বিনিয়োগ আসছে না বলে সরকারি খরচ বাড়ানো প্রয়োজন। ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রেখে সরকারি খরচ বাড়াতে টাকার জোগান বাড়ানো দরকার। কিন্তু অর্থনীতির ঝিমুনির সঙ্গে আয়কর, জিএসটি আদায়ও কমতে শুরু করেছে। বাজেটে চলতি বছরে বিলগ্নীকরণ থেকে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি রুপি তোলার লক্ষ্য নিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু অর্থবছরের ছয় মাসে মাত্র ১৭ হাজার কোটি রুপি এসেছে। আজকের সিদ্ধান্তের পর সেই লক্ষ্য ছাপিয়ে যাবে বলে আশা করছে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়।

কিন্তু অর্থনীতিবিদদের প্রশ্ন, আজ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শেয়ার ছেড়ে দিয়ে কোষাগারে টাকা আসতে পারে। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ভবিষ্যতে কী হবে? তাঁরা আসলে বিপিসিএলের মতো লাভজনক সংস্থা বেচে দেওয়া মেনে নিতে পারছেন না। বিরোধীদলীয় নেতারা আবার বলছেন, এটি সংসার চালাতে সোনা বেচে দেওয়ার শামিল।
২০১৮-১৯ সালে বিপিসিএল প্রায় ৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্তাদের আশা, বিপিসিএল বেচে সরকারের ঘরে অন্তত ৬০ হাজার কোটি টাকা আসতে পারে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার নানা ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু অর্থনীতিবিদদের মত, মানুষের হাতে টাকার সরবরাহ না বাড়লে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটবে না।