পেঁয়াজে বাড়তি ব্যয় ২০২ কোটি টাকা

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এর ব্যবহার কমেছে। তবু ভোক্তাদের যৌক্তিক মূল্যের চেয়ে বাড়তি টাকা খরচ করতে হয়েছে। ভারত রপ্তানি বন্ধের পর দেড় মাসে আমদানি করা পেঁয়াজ কিনে ক্রেতাদের পকেট থেকে বেরিয়ে গেছে প্রায় ২০২ কোটি টাকা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে পাওয়া পেঁয়াজের আমদানিমূল্য, সরকারের পণ্য বিক্রয়কারী সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গড় বিক্রয়মূল্য এবং কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের যৌক্তিক মূল্যবিষয়ক সমীক্ষা বিশ্লেষণ করে এই হিসাব পাওয়া গেছে।

রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে, ভারত ২৯ সেপ্টেম্বর রপ্তানি বন্ধের পর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত দেড় মাসে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ৫২ হাজার ৯৪ টন। এই পেঁয়াজ আমদানিতে মোট ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৮৪ লাখ মার্কিন ডলার বা ২৪১ কোটি টাকা (প্রতি ডলার গড়ে ৮৫ টাকা হিসাবে)। টিসিবির তথ্য বলছে, ওই সময়ে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের গড় বিক্রয়মূল্য ছিল ১০৩ টাকা কেজি। সেই হিসাবে আমদানি করা পেঁয়াজের মোট বিক্রয়মূল্য দাঁড়ায় ৫৩৬ কোটি টাকা। আর কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সমীক্ষায় দেশি পেঁয়াজের যে যৌক্তিক দামের কথা বলা আছে, সে অনুযায়ী হিসাব করলে ওই পরিমাণ পেঁয়াজের বিক্রয়মূল্য হতে পারে ৩৩৪ কোটি টাকা। এতে দেখা যায়, বাজারে সংকট ও চাহিদার সুযোগে যৌক্তিক মূল্যের চেয়ে প্রায় ২০২ কোটি টাকা বেশি ব্যয় হয়েছে ভোক্তাদের।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভারত রপ্তানি বন্ধের পর পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়াটাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু প্রতি কেজির দাম যেভাবে ২৫০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল, তা অস্বাভাবিক। বাজারে সরবরাহ ও তদারকি ব্যবস্থা ঠিক থাকলে ভোক্তাদের এত বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হতো না।

ক্রেতাদের কেন যৌক্তিক মূল্যের চেয়ে বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, যখন বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি থাকে, তখন বিক্রেতারা সুযোগ নেন। অত্যাবশ্যক পণ্য হওয়ায় ভোক্তাকে কিছু পরিমাণে হলেও কিনতে হয়। এই সুযোগ নিয়েছেন বিক্রেতারা। এই বাড়তি ব্যয়ের বড় ভুক্তভোগী নির্দিষ্ট ও স্বল্প আয়ের মানুষেরা। তিনি আরও বলেন, এই বাড়তি ব্যয় এড়ানো যেত, যদি সরকার শুরু থেকে আমদানির উদ্যোগ নিত বা বেসরকারি আমদানিকারকদের আমদানিতে উৎসাহিত করত।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, পেঁয়াজের প্রতি কেজি বিক্রয়মূল্য আমদানিকারক পর্যায়ে সাড়ে ৫৪, পাইকারিতে ৫৭ টাকা ও খুচরায় ৬৪ টাকা হওয়া উচিত ছিল।
শ্রীলঙ্কা দ্রুত বিকল্প দেশ থেকে আমদানি করে পরিস্থিতি সামাল দেয়
তদারকি ঠিক থাকলে ভোক্তাদের এত বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হতো না

এদিকে ভারত রপ্তানি বন্ধ করার পরপরই শ্রীলঙ্কা বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে বাজার সামাল দিয়েছে। শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দৈনিক মূল্য প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত রপ্তানি বন্ধের পর আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৭৮ থেকে বেড়ে ১৪১ টাকা পর্যন্ত ওঠে। পাকিস্তান, মিসর ও চীন থেকে আমদানি বাড়ানোয় দাম কমে কেজিপ্রতি ৫৮ টাকায় নেমেছে।

পেঁয়াজ আমদানিকারক সেলিমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, পেঁয়াজের কেজি যে ২৫০ টাকায় উঠেছে, তা অস্বাভাবিক। ভারত রপ্তানি বন্ধের পর দাম বাড়লেও এত বেশি হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ দ্রুত না বাড়ায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের যদি এত ধরাধরি করা না হতো, তাহলে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি হতো। কেউ সুযোগ নিতে পারত না।

দেশে গত দেড় মাসে মিয়ানমার থেকে ৩৫ হাজার টন, ভারত (নিষেধাজ্ঞার আগে খোলা এলসির বিপরীতে) ১১ হাজার ৭৩৮ টন, মিসর থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়। এ ছাড়া পাকিস্তান ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়।

আমদানিকারকেরা কাস্টমসের কাছে পেঁয়াজ কেনার যে তথ্য দেন, তাতে গড়ে প্রতি কেজি দর পড়েছিল ৪৬ টাকা। বন্দর থেকে খালাসসহ আনুষঙ্গিক খরচ ও মুনাফাসহ (১০ শতাংশ) আমদানিকারক পর্যায়ে তা সাড়ে ৫৪ টাকা বিক্রয়মূল্য হওয়া উচিত ছিল। এরপর পাইকারিতে ৫৭ টাকার একটু বেশি এবং খুচরা পর্যায়ে ৬৪ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া উচিত ছিল।